সরকার ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (দ্বিতীয় সংশোধিত) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনসমূহের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। শনিবার (১০ মে) রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়, যা রোববার (১১ মে) গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
এই সংশোধিত অধ্যাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন ধারা, ২০(বি), যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যদি কোনো সংগঠন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এর ৩ ধারার অধীন অপরাধ সংঘটন বা তাতে অংশগ্রহণ করেছে বলে ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয়, তাহলে ট্রাইব্যুনাল সেই সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে। এমনকি সংগঠনটির নিবন্ধন বা লাইসেন্স বাতিল, এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতাও থাকবে ট্রাইব্যুনালের হাতে।
সংশোধিত আইনে ‘সংগঠন’ বলতে শুধু রাজনৈতিক দল নয়, বরং তাদের অধীনস্থ, অনুমোদিত কিংবা সংশ্লিষ্ট যেকোনো সত্তা বা ব্যক্তি গোষ্ঠীকেও বোঝানো হয়েছে যারা দলটির কর্মকাণ্ড প্রচার, সমর্থন বা সহায়তা করে কিংবা তাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই অধ্যাদেশ জারির ঠিক আগেই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও সমমনা দলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি এবং দলটির বিরুদ্ধে গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগ ওঠে। বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনতেই এই সংশোধনী আনা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সকল কার্যক্রম বিশেষ করে অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপস্থিতি, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংশোধিত আইনের আওতায় সংগঠন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
এই অধ্যাদেশ বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি যুগান্তকারী ও বিতর্কিত মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি যেমন আন্তর্জাতিক অপরাধের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে শক্তিশালী করতে পারে, তেমনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের আশঙ্কাও জনমনে তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এমন বিধান কার্যকর হলে দেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
এই সংশোধনী আইনের প্রয়োগ ও বিচারিক কার্যক্রম ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পথনকশা কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সূত্র: এফএনএস