1. admin@ddnnewsbd.com : admin : ddn newsbd
  2. mamahbubulalom@gmail.com : mahbubul alom : mahbubul alom
শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন

কোরবানী ঈদে ‘স্টেরয়েড ও হরমোনমুক্ত’ পশু সরবরাহে নানা উদ্যোগ

ডিডিএন ডেস্ক:
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০২৫
  • ৬ সময় দর্শন

আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে ‘স্টেরয়েড ও হরমোনমুক্ত’ হৃষ্টপুষ্ট ও সুস্থ গরু ও মহিষ সরবরাহ নিশ্চিত করতে যাচ্ছে সরকার।

এ লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের ৩ হাজার ৬৭৮টি কোরবানী পশুর হাটে ১৯ হাজার ৯৮টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করবে বলে নিশ্চিত করেছে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত এক বছর ধরে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণের পাশাপাশি স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার রোধ করার জন্য খামারিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের যৌথ সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে।

সুস্থ গবাদিপশু সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্বে) মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন বাসসকে জানান, কোরবানিকেন্দ্রিক গবাদিপশু সরবরাহ ও বিক্রয়  আমাদের জাতীয় অর্থনীতির এক ‘ইতিবাচক দিক’। কোরবানির ঈদে সবার লক্ষ্য সুদর্শন, দৃষ্টিনন্দন সুস্থ গরু কেনা। তবে অনেক সময় ভেজাল ও রুগ্ন গরুর ফাঁদে পড়ে কোরবানির মহৎ উদ্দেশ্য যেন ম্লান না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এ বছর আমরা মন্ত্রণালয় থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। এবার বিষয়টির ওপর সর্বোচ্চ নজর রাখছে সরকার ।

সচিব জানান, কোরবানিযোগ্য গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লালন-পালন বিষয়ে ৮৩ হাজার ৬৫৬ জন খামারিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্টেরয়েড ও হরমোনমুক্ত হৃষ্টপুষ্ট সুস্থ গরু সরবরাহে খামারিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ৬ হাজার ৬০০টি উঠান বৈঠক ছাড়াও প্রায় তিন লাখ লিফলেট এবং পোস্টার বিতরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার রোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে খামারিদের প্রশিক্ষণ চলমান আছে ।

তিনি জানান, জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের যৌথ সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে ৫৩ হাজার ২৬৩টি খামার পরিদর্শন করে খামারিদের স্টেরয়েড ও হরমোনের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো হয়েছে।

জানা যায়, কোরবানির ঈদে অসাধু প্রক্রিয়া শুরু হয় মাসখানেক আগ থেকেই। বেশি লাভের আশায় অনেক খামারি পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ না মেনে গরুকে রাসায়নিক স্টেরয়েড খাওয়ায়। অনেক ক্ষেত্রে হাতুড়ে চিকিৎসক ও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এ বিষয়ে খামারিদের প্ররোচিত করে। বিষাক্ত রাসায়নিকের হাইডোজ প্রয়োগ করে অল্পদিনে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তাজা করা এসব গরুর মাংস খেলে মানুষের লিভার, কিডনি, হৃদ্‌যন্ত্র ও মস্তিস্ক ক্ষতিগ্রস্তসহ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অথচ প্রতিবছর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কৃত্রিমভাবে গরু মোটাতাজাকরণের ভয়ংকর বিষাক্ত খেলায় মেতে ওঠে একশ্রেণির অতিলোভী ব্যবসায়ী।

এজন্য কোরবানির আগ থেকেই সরকার সুস্থ গবাদিপশু সরবরাহের জন্য কঠোর হচ্ছে। ফলে খামারিদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। সেখানে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য স্টেরয়েড যেমন, ডেক্সামিথাসন, পেরিয়্যাকটিন ট্যাবলেট বা ইনজেকশন বা হরমোন জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের শাস্তি সম্পর্কে খামারিদের অবগত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মৎস্য ও পশু খাদ্য আইন-২০১০ অনুসারে, স্টেরয়েড হরমোন ব্যবহারে এক বছরের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরুকে নিয়মমাফিক স্বীকৃত ফর্মুলা অনুসারে খাদ্য দিয়ে মোটাতাজা করলে তার মাংস মানব শরীরে ক্ষতির কারণ হয় না। কিন্তু স্টেরয়েড দিয়ে মোটা করা গরুর মাংস মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। স্টেরয়েড মূলত হাঁপানির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এ জাতীয় ওষুধ, যেমন ডেক্সামেথাসন বা ডেকাসন, বেটামেথাসন ও পেরিঅ্যাকটিন অতিরিক্ত মাত্রায় দিলে গরুর কিডনি ও যকৃতের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ায় শরীর থেকে পানি বের হতে পারে না। এ কারণে শোষিত হয়ে পানি সরাসরি গরুর মাংসে চলে যায়। ফলে গরুকে মোটা দেখায়। এসব গরুর মাংস খেলে ক্ষতিকর হরমোন পরোক্ষভাবে শরীরে ঢুকলে তা মানব শরীরে নানা রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি ও পোলট্রি বিজ্ঞান বিষয়ক অধ্যাপক ড. এ কে এম হুমায়ুন কবির স্টেরয়েড হরমোনের ক্ষতিকর দিক সর্ম্পকে বলেন, স্টেরয়েড হরমোন বিশেষ করে অল্প বয়সি বা ছোট শিশুদের মারাত্মক ক্ষতি করে। এসব হরমোন বা স্টেরয়েড শিশুদের মস্তিষ্ক ও যৌনাঙ্গ গঠনে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে মাংসের মাধ্যমে গ্রহণ করা স্টেরয়েড নানা অসুখ ডেকে আনতে পারে। এসব ক্ষতিকর ওষুধ মানব শরীরে জমা হয়ে টিউমার, ক্যান্সার, কিডনি নষ্ট করার মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে নারীদের গর্ভধারণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

তোফাজ্জেল হোসেন বাসসকে জানান, স্টেরয়েড হরমোনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে খামারিদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কোরবানির হাটে সুস্থ গবাদিপশু চেনার জন্য বেশকিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। এজন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতায় ১৯টি পশুর হাটে পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য ২০টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রম মনিটরিং এর জন্য ৫টি কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ২টি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সমন্বয়, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, কন্ট্রোল রুম পরিচালনাসহ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পৃথক টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সারাদেশে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম প্রাথমিক চিকিৎসা পরামর্শ, কোরবানির পশু নিরাপদ ও কোরবানি উপযোগী কিনা, কোরবানির পশু চেনার উপায়, সঠিক পদ্ধতিতে চামড়া ছাড়ানো ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় করণীয় বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবে। তাছাড়া সারাদেশে বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদানে নিয়োজিত থাকবে। এ বছর সারাদেশে উপজেলা পর্যায়ে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক  এর মাধ্যমে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর বিশেষ ভেটেরিনারি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে।

উল্লেখ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় চলতি বছর দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা নিরূপণ করেছে ১ কোটি ২৪ লক্ষ ৪৭ হাজার ৩৩৭ টি । এরমধ্যে ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫ টি গরু-মহিষ, ৬৮ লক্ষ ৩৮ হাজার ৯২০ টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২ টি অন্যান্য প্রজাতির পশু। এ বছর প্রায় ২০ লক্ষ ৬৮ হাজার ১৩৫ টি গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্র: বাসস।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Smart iT Host