আগামীকাল সংবিধান, নির্বাচন, পুলিশ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে চারটি পৃথক প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করা, গণতন্ত্রকে আরও কার্যকর করা, এবং প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনার সুপারিশ উঠে এসেছে।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও ক্ষমতার ভারসাম্য
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে দেশের সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার সুপারিশ করা হয়েছে। নিম্নকক্ষে আসন থাকবে ৪০০টি, যেখানে বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। ১০০টি আসন সরাসরি ভোটে নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষে থাকবে ১০৫টি আসন, যার মধ্যে ১০০টি আসন হবে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচিত এবং ৫টি আসন রাষ্ট্রপতির মনোনীত হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিত করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন।
নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার
নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও জবাবদিহিমূলক করতে আইন পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রার্থীদের হলফনামায় বিদেশি সম্পদ প্রকাশ বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি হলফনামার তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া আরও কঠোর করার কথা বলা হয়েছে।
সেই সঙ্গে ‘না’ ভোটের বিকল্প ফিরিয়ে আনা, সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোট চালু এবং নারী আসন সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করার প্রস্তাব করেছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন।
দুদক ও পুলিশের সংস্কার
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে সরকারি কর্মকর্তাদের কমিশনের সচিব বা পরিচালকের পদে নিয়োগ না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার জন্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় পুলিশের কার্যক্রমে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তির গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ড প্রক্রিয়া মানবাধিকার সংরক্ষণে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনার জন্য নির্দেশিকা তৈরির সুপারিশ করেছে কমিশন।
সংবিধানের নীতিগত পরিবর্তন
সংবিধানের প্রস্তাবনায় সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে সংসদীয় কমিটিগুলোর ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সংলাপ ও ঐকমত্যের আশা
কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। নির্বাচন কমিশন সংস্কারের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “আমাদের সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
এই সংস্কার প্রক্রিয়া গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র: এফএনএস