পৌষের শেষে শীতের দাপট বেড়েই চলেছে । তবুও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শীতকালীন সবজির উৎপাদন বেড়েছে। যার ফলে জেলার সবজির বাজারে ফিরেছে স্বস্তি ।
শাক-সবজির দাম কমেছে রেকর্ড পরিমাণ। সবজির দাম বর্তমানে কম হলেও আগাম সবজি চাষীরা খুশি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বলছে, যারা আগাম সবজি চাষ করেছেন তারা ভালো দাম পেয়েছেন ।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠে মাঠে শীতকালীন সবজির ভরপুর আবাদ লক্ষ্য করা গেছে। হরিনাকুন্ডু উপজেলার বিনোদপুর, পলিয়ানপুর, যাদবপুর, ফলসি, তাহেরহুদা, জোড়াদাহ গ্রামে শীতকালীন সবজির ব্যাপক আবাদ হয়েছে। বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, টমেটো, লাউ, বেগুন, পালংশাকের উৎপাদন ভালো হওয়ায় খুশি কৃষক ।
তাহেরহুদা গ্রামের কৃষক আসলাম মিয়া জানান, এবছর শীত থাকলেও সবজির আগাম আবাদ ভালো হয়েছে। সবজির আবাদে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। শীতকালীন বৃষ্টিও হয়নি। যে কারনে ফলন ভালো হয়েছে ।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর, চান্দুয়ালি, বারো কোদালিয়া, উদয়পুর, নাচনা গ্রামেও সবজির ফলন রেকর্ড ছাড়িয়েছে । এছাড়া শৈলকূপার মদনডাঙা, চড়িয়ারবিল, মির্জাপুর, চাঁদপুর, কাচেরকোল গ্রামসহ উপজেলার অধিকাংশ গ্রামের মাঠেই শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে । সবজির উৎপাদন বেশি হওয়ায় স্থানীয় বাজারগুলোতে যোগান বেড়েছে। ফলে শীতকালীন সবজির দাম কমেছে । জেলার অন্যান্য উপজেলার চিত্রও একই ।
শৈলকুপা উপজেলার মদনডাঙা পায়কারি সবজি বাজারে ঢাকা থেকে আগত ব্যবসায়ী শামসুল ইসলাম জানান, নতুন আলু, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বরবটি, পেঁয়াজের দাম অনেক কমে গেছে। বাজারে এখন মালের আমদানি বেশি। কৃষকও খুশি ক্রেতারাও খুশি।
কৃষক আনারুল হোসেন বলেন, বাঁধাকপি ফুলকপি পাইকারি ৮/১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গ্রামের বাজারে এসব সবজির দাম আরও কম। নতুন আলু খুচরা কেজি প্রতি ৪০/৪২ টাকা। মরিচের দামও কমেছে । পেঁয়াজের দাম খুচরা ৭০/৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শাক-সবজির পাইকারি বাজারগুলোতে বাঁধাকপি-ফুলকপি ৫/১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে । বেগুন কেজি প্রতি ২০/২৮ টাকা। এছাড়া নতুন আলু কেজি প্রতি ৩৫/৩৮ টাকা, পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৪০/৪২ টাকা, পেঁয়াজের কলি আটি প্রতি (আধা কেজি) ৬/৮ টাকা, পালং শাক আটি প্রতি ৫/৭ টাকা, টমেটো কেজি প্রতি ৩০/৩২ টাকা, মুলা কেজি প্রতি ৫/৮ টাকা, ওলকপি কেজি প্রতি ১৫/২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এসব সবজি খুচরা বাজারে বা গ্রামীণ হাটে খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি ২ থেকে ৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা ৷
সদর উপজেলার নগরবাথান বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা হযরত আলী বলেন, সবজির দাম পাইকারি বাজারে কমে গেছে । খুচরা বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে। শাক সবজির ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদন অনেক বেশি ।
ঝিনাইদহ নতুন হাটখোলা বাজারের সবজি বিক্রেতা হাসমত আলী, জীবন বিশ্বাস, নাসির উদ্দীন জানান, সবজির দাম কমে গেছে। ক্রেতারা খুশি। তবে কৃষক এখন খুব একটা দাম পাচ্ছেনা। জেলা শহরের নতুন হাটখোলা বাজারে সবজি নিয়ে আসা কৃষক কাউসার আলী বলেন, আগাম সবজিতে ভালো দাম পেয়েছি ।
নতুন হাটখোলা বাজারে আসা ক্রেতা নাজনীন নাহার বাসস’কে বলেন, শহরের বাজারেও সবজির দাম কমেছে । বাজরের বড় দোকানগুলোতে দাম কমাতে চায় না। তারপরও কম দামে সবজি কেনা যাচ্ছে ৷ কাচা মরিচ, পেঁয়াজ, নতুন আলুসহ শীতকালীন সবজির দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ষষ্ঠী চন্দ্র রায় বাসস’কে জানান, এবার শাক সবজির ফলন ভালো হয়েছে । কৃষক আগাম সবজিতে ভালো দাম পেয়েছেন ৷
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের বাসস’কে বলেন, সবজির বাজারে স্থানীয় পর্যায়ে যেন কারসাজি বা সিন্ডিকেট গড়ে না ওঠে সেজন্য আমরা তৎপর রয়েছি। জেলার বড় বড় বাজারগুলোতে নিয়মিত মনিটরিং চলমান রয়েছে । অভিযোগ পাওয়া মাত্রই আইনগত যেকোনো উদ্যোগ নিতে আমরা সচেষ্ট ।
বাসস