হজ এজেন্সিপ্রতি এক হাজার হজ যাত্রী পাঠানোর নতুন নিয়ম করেছে সৌদি সরকার। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও সৌদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নতুন নিয়মের বাইরে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। হজযাত্রী সমন্বয়, লিড এজেন্সি নির্ধারণ ও মোনাজ্জেম নির্বাচনের সময় বেঁধে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
হাবের সাবেক সভাপতি ফরিদ আহমেদ মজুমদার আমার দেশকে বলেন, এই নতুন নিয়মে হজ পরিচালনা করতে হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এ নিয়ম মেনে হজ পরিচালনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সমস্যা সমাধানে হাব দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
তিনি বলেন, আগের নিয়ম অনুসরণ করেই হজ কার্যক্রম করতে হবে। অতীতে সব সরকারই হাবের সঙ্গে সমন্বয় করে হজ পরিচালনার বিষয়টি চূড়ান্ত করত। তবে এবার তা করা হয়নি।
গত বছর এজেন্সি প্রতি আড়াইশ’ হজ যাত্রী নিতেই অনেককে হিমশিম খেতে হয়েছে। এছাড়া মক্কা-মদিনায় বাড়িভাড়া, ক্যাটারিং সার্ভিসের জন্য আগেই টাকা পরিশোধ করতে হয়। কয়েকটি এজেন্সির সমন্বয়ে হজ পরিচালনা করতে গেলে দেখা যাবে, একজন টাকা দিচ্ছে তো আরেকজন দিচ্ছে না। তখন মোনাজ্জেম ও বাড়ি ভাড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে হজ কার্যক্রম পরিচালনাকারী এজেন্সিগুলোকে এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। জারি করা এ সংক্রান্ত পত্রে বলা হয়েছে, সৌদি সরকার ২০২৫ সালের হজে অন্যান্য দেশের এজেন্সিপ্রতি হাজীর কোটা দুই হাজার জন নির্ধারণ করেছে।
তবে বাংলাদেশের অনুরোধে এ দেশের এজেন্সিপ্রতি হাজীর সংখ্যা সর্বনিম্ন এক হাজার জন নির্ধারণ করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫ সালে অনুমোদিত হজ এজেন্সিগুলোর মধ্যে যাদের নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা এক হাজারের কম তাদের হজযাত্রী স্থানান্তর ও সমন্বয় করে লিড এজেন্সি নির্ধারণ করতে হবে।
হজ ও উমরাহ ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২২ (সংশোধিত) এর ২৬ বিধি অনুযায়ী পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে লিড এজেন্সি নির্ধারণ করে সমন্বয়কারী এজেন্সিগুলোর হজযাত্রীদের ই-হজ সিস্টেমে লিড এজেন্সিতে স্থানান্তর করার বিধান রয়েছে। এছাড়া ২০২৫ সালের হজ প্যাকেজ ও গাইডলাইনের অনুচ্ছেদ ৯(১২) এ এ বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে।
পরিপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে- সমন্বয় কার্যক্রম শেষ হলে সমন্বয়কারী এজেন্সি হতে লিড এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে হজযাত্রীর বিমান ভাড়া বাবদ অর্থ প্রেরণ করবে এবং লিড এজেন্সি তার ব্যবস্থাপনাধীন সব হজযাত্রীর বিমান টিকিটের অর্থ এয়ারলাইন্সের বরাবরে পে-অর্ডার ইস্যু নিশ্চিত করবে।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের হজে তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধনকারী সরকারি ও বেসরকারি উভয় মাধ্যমের হজযাত্রীদের জন্য সৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুসারে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মিনায় তাঁবু গ্রহণ, মোয়াল্লেম গ্রহণ, বাড়ি বা হোটেল ভাড়া এবং পরিবহনসহ সেবা সংক্রান্ত সব চুক্তি সম্পন্ন করতে হবে। এ কারণে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে আবশ্যিকভাবে প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা জমা দিতে হজযাত্রীদের অনুরোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন আমার দেশকে বলেন, সৌদি সরকার প্রথমে লিড এজেন্সিকে দুই হাজার করে যাত্রী পাঠানোর বাধ্যবাধকতা করলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনেক দেনদরবার করে এক হাজার জনে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। সরকার হজ নিয়ে কখনো কোনো মুনাফা করে না।
তিনি বলেন, হাজীরা হলো আল্লাহর মেহমান। আমরা হাজীদের পুরোপুরি সেবা দিতে প্রস্তুত। হজ পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটার মধ্যে গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬২ হাজার ২১২ জন হজযাত্রী নিবন্ধন চূড়ান্ত করেছেন। আর হজে যাওয়ার জন্য ব্যাংকে ভাউচার জমা দিয়েছেন প্রায় ৮ হাজার হজযাত্রী। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার হজযাত্রী আগামী বছর হজের জন্য নিবন্ধন করেছেন।
সূত্র: আমার দেশ