অনলাইন ডেস্কঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জবাবদিহিমূলক বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমঝোতার ভিত্তিতে সব দেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ। গতকাল রবিবার মুজিবশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের সমাপনী পর্বের বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্যের শুরুতেই সম্মেলনে অংশ নেওয়া সবাইকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের শান্তি এবং সম্প্রীতির বাংলাদেশে স্বাগত জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের চরম সংকটময় পরিস্থিতিতে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় সম্পদ ব্যয় না করে তা সার্বজনীন টেকসই উন্নয়ন অর্জনে ব্যবহার করতে হবে। গত দুই বছর ধরে করোনাভাইরাস মহামারী গোটা বিশ্বব্যবস্থাকে যে নতুন সংকটের মুখোমুখি করেছে, তা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সংকট প্রমাণ করেছে, আমরা কেউ-ই আলাদা নই। শান্তিপূর্ণভাবে পৃথিবীতে বসবাস করতে হলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি জবাবদিহিতামূলক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর শান্তির আদর্শকে পুরোপুরি ধারণ করে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমঝোতার ভিত্তিতে সবার সঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ সদা প্রস্তুত।’
স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের মানুষের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশিরা শান্তির মূল্য এবং সমগ্র মানব জাতির গভীরতম আকাক্সক্ষাগুলো অনুধাবন করেছে। ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্য দাবির পক্ষে বাংলাদেশের অবিচল সমর্থনের কথা বলেন তিনি। সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে সাময়িক আশ্রয় দিয়ে এই অঞ্চলে একটি বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় এড়াতে বাংলাদেশের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শোষিত মানুষের অধিকার আদায় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে জাতির পিতার নেওয়া উদ্যোগগুলোও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি। আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য-সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করেছি। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মের জন্য জাতির পিতার স্বপ্নের আত্মমর্যাদাশীল, উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
পিছিয়ে পড়াদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে : সায়মা ওয়াজেদ
বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের আহ্বায়ক অটিজমবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ বলেছেন, শান্তির মূল মন্ত্রই হলোÑ সবাকে নিয়ে সাম্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে হবে। বর্তমান বিশ্বে একে অন্যকে আরও কাছে নিয়ে আসতে হবে। শান্তি নিশ্চিত করতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ সবার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘বিশ্ব শান্তি সম্মেলন’ উপলক্ষে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি এসব কথা বলেন তিনি।
সায়মা ওয়াজেদ বলেন, ‘বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এসব শিশুর পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন। বাংলাদেশ সচেতনতা বৃদ্ধি ও তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন তুলে আনছে। তিনি বলেন, আমার নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সারাজীবন মানুষের শান্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধু কত তৃণমূল থেকে তার সংগ্রাম শুরু করেছিলেন আজ অনেকেই তা ভুলে যান। তিনি ছিলেন জীবনের চেয়েও বড়। তিনি একটি দেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন।’
ঢাকায় দুদিনব্যাপী বিশ্ব শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে গতকাল বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রাঙ্গণে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিদেশি অতিথিরা পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন।