জনগণকে সঠিক তথ্য দিতে অনবরত ছুটে চলেন সাংবাদিকরা। অবস্থা যাই হোক না কেন, থেমে থাকেন না তারা। চলমান করোনা মহামারিতেও থেমে নেই সাংবাদিকরা। খবর সংগ্রহে ছুটে চলেছেন তারা। খবরের পেছনে ছুটতে গিয়ে আক্রান্তও হয়েছেন অনেকে। দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। তাতেও থেমে নেই সাংবাদিকরা। পালন করে চলেছেন পেশাগত দায়িত্ব। এ অবস্থায় সাংবাদিকদের করোনা ‘পজিটিভ’ হওয়ার সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা কামাল (ইউএনবি) করোনায় আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ২০ দিন চিকিৎসা নিয়ে রোববার (৪ এপ্রিল) বাসায় ফিরেছেন। হাসপাতালে আরও কয়েকজন সাংবাদিক চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে করোনা পজিটিভ হয়ে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন অর্ধ শতাধিক সাংবাদিক।
করোনা সতর্কতায় জাতীয় দৈনিক যুগান্তর সম্প্রতি ঢাকায় কর্মরত তাদের সব কর্মীর করোনা পরীক্ষা করিয়েছে। পত্রিকাটির প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিম জানান, সতর্কতা ও নিরাপত্তার জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েকজন পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। তারা বাসায় আইসোলেশনে রয়েছে। নেগেটিভ হলে তারা অফিসে ফিরবেন।
মাছরাঙা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি আবু সাদাত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এক সপ্তাহ আগে। তিনি নিজ বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। জানতে চাইলে তিনি জানান, জ্বর এখন তেমন নেই। তবে শারীরিক দুর্বলতা অনেক। খুব কঠিন সময় যাচ্ছে। পরিবারের থেকে দূরে থাকা প্রতিটি মুহূর্ত বেশ দুর্বিষহ।
মাছরাঙা টেলিভিশন ও যুগান্তরের মতো বেশিরভাগ মিডিয়া হাউজেই আক্রান্ত সংবাদ কর্মী রয়েছে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন করোনাকালে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। দ্বিতীয় ধাপেও সংগঠনগুলো ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে।
সাংবাদিকদের সর্ববৃহৎ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান করোনার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘প্রেস ক্লাব এক সপ্তাহ বন্ধ থাকছে। প্রেসক্লাব চত্বরে সপ্তাহে তিনদিন (শনি, সোম ও বুধ) করোনা টেস্ট করানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।’
এতদিন রিপোর্টারদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সপ্তাহে একদিন করোনা পরীক্ষা করিয়েছে। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) থেকে সপ্তাহে দুইদিন করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে সংগঠনটি। এ বিষয়ে ডিআরইউ’র কল্যাণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন,‘ সদস্য ও সদস্যদের পরিবারের করোনা পরীক্ষা করানোর হার গত দশ দিনে অনেক বেড়েছে। এজন্য আমরা সপ্তাহে দুই দিন করোনা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করেছি।’ সর্বশেষ শনিবার ডিআরইউতে ৫৭ জন (সদস্য ও তাদের পরিবার) করোনার নমুনা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২৮ জনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। ডিআরইউতে নমুনার পজিটিভের হার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ। যা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
ব্রডকাস্টস জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সচিব শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা সাংবাদিকরা ফ্রন্টলাইনার। অগ্রগামী সৈনিক হিসেবে সাংবাদিকদের জন্য আইসিইউ ও হাসপাতালে কয়েকটি বেড সংরক্ষিত থাকা প্রয়োজন।’
ডিআরইউয়ের মতো ব্রডকাস্ট জার্নালিস্টস সেন্টারের (বিজেসি) সদস্যদেরও করোনা পরীক্ষা করানোর সুযোগ রয়েছে। গত কয়েক দিনে পরীক্ষা করানোর হার অনেক বেড়েছে বলে জানান শাকিল। বলেন, ‘পরীক্ষা করানোর হার ৩০-৪০ শতাংশ বেড়েছে। সাংবাদিকদের করোনা নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় সংগঠনের পাশাপাশি নিজ নিজ হাউজেরও উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’
করোনার শুরুতে ‘আওয়ার মিডিয়া, আওয়ার রাইটস’ নামে একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাংবাদিকদের একটি গ্রুপ তৈরি হয়। এই প্লাটফর্মের তথ্য বলছে, গত বছরের ৩ এপ্রিল প্রথম কোনো গণমাধ্যম কর্মী করোনায় আক্রান্ত হন। এরপর এক বছরে গণমাধ্যম কর্মীদের (ঢাকা ও আঞ্চলিকসহ) পজিটিভের সংখ্যা ১২শ ছাড়িয়েছে। ১,১৮৮ জন করোনা যুদ্ধে জয়ী হলেও ৪৫ জন হেরে গেছেন।
‘আওয়ার মিডিয়া, আওয়ার রাইটস’ গ্রুপের অন্যতম সমন্বয়ক আহমেদ ফয়েজ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, ‘গত কয়েকদিনে আমাকে অনেকে তথ্য দিচ্ছেন। ফলে প্রতিদিনই আক্রান্ত বা পজিটিভ হওয়ার সংখ্যা যোগ করতে হচ্ছে। এই সংখ্যা কয়েকদিনে অনেক বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ২ থেকে ৫ এপ্রিলের হিসাবই এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ২ এপ্রিল পর্যন্ত গণমাধ্যমে পজিটিভ সংখ্যা ছিল ১১৮১ জন। ৫ এপ্রিলে সেটা বেড়ে হয়েছে ১২২১ জন। গত কয়েকদিনে গড়ে পজিটিভ হওয়ার সংখ্যা প্রায় ১০।
করোনার প্রথম ধাপে অনেকে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এর প্রভাব পড়েছে গণমাধ্যমেও। যার কারণে আক্রান্ত সাংবাদিকের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে।