করোনা (কোভিড-১৯) সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে কিছুদিন ধরেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যেকোন মহামারী নিয়ন্ত্রণের সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোন স্থানে সংক্রমণের হার টানা তিন থেকে চার সপ্তাহ ৫ শতাংশের নিচে থাকে তবে সে পরিস্থিতিকে রোগের নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকা বলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলা না গেলেও মহামারী নিয়ন্ত্রণে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমে আসার পাশাপাশি টিকা নিতে আগ্রহ বাড়ছে দেশের মানুষের মধ্যে। এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন দেশের ২৭ লাখের বেশি মানুষ। এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমে আসায় এবং টিকা নেয়ার হার বাড়ায় অর্থনীতিতেও প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। করোনার দুর্যোগের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন অর্থনীতি নিয়ে গভীর চিন্তিত, তখন বাংলাদেশ অধিকাংশ আর্থিক সূচকে উন্নতি করছে। অর্থনীতির গতি ফিরে আসায় চলতি বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) উচ্চ প্রবৃদ্ধি আশা করছে সরকার। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে যে অর্থনৈতিক শঙ্কা ছিল তা অনেকটাই কেটে গেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। একই সঙ্গে করোনাভাইরাসের থাবায় দেশের অর্থনীতি যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াবে বলে এমন আশাবাদের কথা উঠেছে এসেছে সাম্প্রতিক বিভিন্ন জরিপে।
জানা গেছে, গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকে। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মৃত্যু সংখ্যাও যা বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় শতাংশ বিবেচনায় কম। প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের পর বাংলাদেশে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেটে গেছে ৪৯টি সপ্তাহ ও চারদিন। প্রথম শনাক্তের পর ষষ্ঠ সপ্তাহে (১২ থেকে ১৮ এপ্রিল) গিয়ে দেশে সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের ওপরে পৌঁছায়। পরবর্তীতে তা বাড়তে থাকলেও ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসে ৪১তম সপ্তাহে (১৩ থেকে ১৯ ডিসেম্বর)। তবে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ সপ্তাহ সময় বিবেচনা করলে দেখা যায় সংক্রমণের হার এই সময়ে ধারাবাহিকভাবে পাঁচ শতাংশের নিচে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যেকোন মহামারী নিয়ন্ত্রণের সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোন স্থানে সংক্রমণের হার টানা তিন থেকে চার সপ্তাহ ৫ শতাংশের নিচে থাকে তবে সে পরিস্থিতিকে রোগের নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকা বলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলা না গেলেও মহামারী নিয়ন্ত্রণে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা বলা যেতে পারে বলেও মনে করছেন দেশের বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে মহামারী নয় বরং সংক্রমণের ধারাবাহিক হার কমে আসার ফলে প্যানডেমিক পর্যায়ে চলে এসেছে বলেও মনে করছেন তারা। দেশে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও ভাইরোলজিস্ট ডাঃ নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, সংক্রমণের হার কমে এলে সেটি তো দেশের জন্য ভাল। কিন্তু তাতেও পুরোপুরি স্বস্তি পাওয়া যাবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী সংক্রমণের হার টানা ৫ শতাংশের কম হলেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখানে সেটাকে প্যানডেমিক স্টেজ বলছে, সেখানে আমরা ২ শতাংশের ঘরে চলে এসেছি। সুতরাং ধরে নিতে পারি আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছি। তবে এই অবস্থাকে সতর্কভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। দেশে সংক্রমণের হার কমে আসা বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ এ এস এম আলমগীর বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও ধারাবাহিকভাবে সংক্রমণের হার কমে আসছে। এটা খুবই ভাল লক্ষণ। কিন্তু এ সময় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাস ধরে রাখতে হবে। কারণ মনে রাখতে হবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি কিন্তু পরিবর্তনশীল। যদি কোথাও সামান্যতম সংক্রমণও দেখা যায় তবে বিপদে পড়তে পারে পুরো দেশই। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চলছে। সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে পর্যায়ক্রমে। ভ্যাকসিন নিলেও আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
জানা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা কর্মসূচী শুরুর পর নানা ধরনের আশঙ্কার কারণে শুরুতে টিকা নিতে আগ্রহী ছিলেন না অনেকে। কিন্তু তখন যে চিত্র ছিল- এখন তা অনেকটাই বদলে গেছে। ওয়েবসাইটে নিবন্ধন নিয়ে সমস্যার অভিযোগ সত্ত্বেও শুরুর দুইদিন যত নিবন্ধন হয়েছিলÑ তা এখন বেড়েছে চার থেকে পাঁচগুণ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক এবং ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড যৌথভাবে বিশ্বজুড়ে এক জরিপ পরিচালনা করেছে। তাতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে জরিপে উত্তরদাতা ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৪ শতাংশের মতো মানুষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিতে আগ্রহী। এর আগে গত জানুয়ারির শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের একটি জরিপে দেখা গিয়েছিল যে ৩২ শতাংশ উত্তরদাতা টিকা নিতে আগ্রহী। বর্তমানে ভ্যাকসিনে আগ্রহ যে বাড়ছে তা বোঝা যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্যেও। রাজধানীতে গত ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা হাসপাতালে একজন নার্সকে প্রথম টিকা দিয়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা উদ্বোধন করা হয়। সে সময় পর্যবেক্ষণের জন্য দুইদিনে প্রায় ছয় শ’ ব্যক্তিকে টিকা দেয়া হয়। সেদিন থেকেই ওয়েবসাইটে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া হিসেবে দেখা যায়, ওইদিন থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী গণটিকা কর্মসূচী শুরুর পর ১২ দিনে নিবন্ধন হয়েছিল পাঁচ লাখের মতো। বর্তমানে নিবন্ধনের সংখ্যা বেড়েছে চার থেকে পাঁচগুণ।
এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমে আসায় এবং টিকা নেয়ার হার বাড়ায় অর্থনীতিতেও প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। করোনার দুর্যোগের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন অর্থনীতি নিয়ে গভীর চিন্তিত, তখন বাংলাদেশ অধিকাংশ সূচকে ভাল করছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে দাতা সংস্থাগুলোর আশাবাদ, মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়া, রেমিটেন্স ও রিজার্ভের রেকর্ড উচ্চতা, মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী প্রবণতা দেশের অর্থনীতিতে আশার আলো জাগিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং রেমিটেন্স দুটিই বেড়েছে। এই সময়ে রিজার্ভ বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ এবং রেমিটেন্স সাড়ে ৩৫ শতাংশের বেশি। জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে ভাইরাসটিকে বশে আনতে হলে ২০২১ সালে বৃহৎ জনগণকে টিকা দেয়াই হবে মূল চাবিকাঠি। প্রতিদিনই টিকা নিতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এটি খুব ভাল লক্ষণ।’ তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে মহামারীজনিত কারণে হুমকির সম্মুখীন দক্ষ ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলোর জন্য নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করা এবং কাউকে পেছনে না রেখে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করাই হবে সঙ্কট নিরসনে আমাদের মূল বিষয়।’
মহামারী করোনাকালে যেখানে বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির দেশে কোন প্রবৃদ্ধিই হচ্ছে না, সেখানে বাংলাদেশ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৮ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি আশা করছে। এর আগে টানা তিন মাস লকডাউনের কারণে সব কিছু বন্ধ থাকার পরও গত অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। জাতিসংঘের হিসাবে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের সিঁড়িতে পা দেবে ২০২৪ সালে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, ২০২০ সালে পঞ্জিকাবর্ষে মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার, একই সময়ে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৭৭ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমান অবস্থায় ৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হলেও আমাদের অবস্থান ভাল থাকবে। তবে এ অবস্থা উত্তরণে প্রণোদনা প্যাকেজসহ নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ, প্রয়োজনীয় নীতিমালার সহজীকরণ এবং ঘোষিত নীতিমালায় এ মুহূর্তে কোন ধরনের পরিবর্তন উচিত নয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির ওপর আরও বেশি হারে গুরুত্বারোপের আহ্বান জানিয়ে ড. আতিউর আরও বলেন, কৃষি ও এসএমই খাতকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ডিজিটাল ব্যবস্থার বাস্তাবায়নের মাধ্যমে সকলকে করের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে আরও বেশি সহায়তা করা প্রয়োজন। এ জন্য উদ্যোক্তাদের নীতিসহায়তা প্রদানের পাশপাশি নজরদারি বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নে নীতিসহায়তার পাশাপাশি অর্থ সহযোগিতা করতে হবে। সবুজ অর্থনীতি ও টেকসই উন্নয়নে ওপর আরও বেশি গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রমে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। সর্বোপরি স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং মানব সম্পদ উন্নয়নে আরও বেশি হারে বিনিয়োগ করতে হবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর নানামুখী প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও গত ৬ মাসে দেশের অর্থনীতি কাক্সিক্ষত মাত্রায় পরিচালিত হয়েছে। তবে আমাদের বেসরকারী খাতের উন্নয়নে আরও বেশকিছু কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং এ লক্ষ্যে সরকারী ও বেসরকারী খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদশের জিডিপি ৩৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উন্নীত হলেও ওই সময়ে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪৩.৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রাজস্ব খাতে দ্রুততার সঙ্গে অটোমেশন প্রক্রিয়ার পুরোপুরি বাস্তবায়ন এবং অর্থবছরের ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় ঘোষিত বাজেট কার্যক্রমের পর্যালোচনা এবং বাজেটে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যবহরের অগ্রগতি মূল্যায়নের ওপর জোর দেন ডিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, মহামারী মোকাবেলায় এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুততার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে এসএমই ব্যাংক প্রবর্তন, সিএসএমই খাতের সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণ ও এসএমই উদ্যোক্তাদের ডাটাবেজ প্রস্তুতকরণে জোর দিতে হবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে কাজ করা ইউনাইটেড ন্যাশনস ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক এ্যান্ড সোশ্যাল এ্যাফেয়ার্সের (ইউএন ডেসা) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সামান্য হলেও বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে অনেক দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে পাঁচ দশমিক এক শতাংশ, ভারতের সাত শতাংশ, পাকিস্তানের শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ, ভুটানের তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ, মালদ্বীপের নয় দশমিক নয় শতাংশ, আফগানিস্তানের চার দশমিক চার শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কার তিন দশমিক এক শতাংশ। জানা গেছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৫.২৯ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল পৌনে ছয় শতাংশ। মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয় থাকার পেছনে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যপণ্যের দাম সহায়ক ভূমিকা হিসেবে কাজ করেছে বলে ধারণা করা হয়। গত এক দশকের ব্যবধানে দেশে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ ডলার। এ ক্ষেত্রে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, মাথাপিছু আয় দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভাল করেছে। সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুত প্রবৃদ্ধিশীল দেশ হলেও করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে মাত্র ০.৫ শতাংশ, যদিও ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি হয় ৮.৪ শতাংশ। তবে আশা করা যায়, বাণিজ্য ও রেমিটেন্সে ভর করে এ বছরের দ্বিতীয় ভাগে নিম্ন প্রবৃদ্ধি থেকে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। জানতে চাইলে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘২০২০ সালে বিশ^ অর্থনীতি বিভিন্ন দিক দিয়েই ধাক্কা খেয়েছে। কর্মসংস্থান, মানুয়ের আয়, অর্থনৈতিক অবস্থা- সবদিক থেকেই। অর্থাৎ অর্থনৈতিক বিপর্যয়, মানবিক বিপর্যয়, স্বাস্থ্য বিপর্যয়- এর মধ্য দিয়ে আমরা গিয়েছি। তবু ভাল যে, বিশ্বপর চতুর্থ বিপর্যয় যোগ হয়েছিল, খাদ্য বিপর্যয়। যা আমাদের দেশে হতে পারেনি। এটি আমাদের দেশের একটি শক্তিমত্তার জায়গা ছিল।’
গত মঙ্গলবার বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেবা খাতের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ৭১ শতাংশই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে আশাবাদী। ৭১ শতাংশের মধ্যে ৪০ ভাগ মনে করছে, এই পুনরুদ্ধার হবে মধ্যম পর্যায়ের। ১৬ শতাংশ মনে করছে, অর্থনীতির শক্তিশালী পুনরুদ্ধার হবে এবং বাকি ১৫ শতাংশ মনে করছে দুর্বল পুনরুদ্ধার হবে। অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ যারা পেয়েছে, তারা ভাল অবস্থায় আছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, যারা এই প্রণোদনা পাননি, তারা কিন্তু পিছিয়ে রয়েছেন। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা মাঝারি ও বৃহৎ পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের তুলনায় বেশি পিছিয়ে আছে।