সংবাদ ডেস্ক: বাংলাদেশে এবছর ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় ঘাটতি পূরণ করতে ভারত থেকে কয়েক লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারত সরকারও বাংলাদেশে চাল রপ্তানিতে সম্মত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়েছে আড়াই লাখ টন রপ্তানির চুক্তি। এর মধ্যে দেড় লাখ টন চাল রপ্তানি করবে ভারতের সরকারি কৃষি সমবায় বিপণন সংস্থা ন্যাফেড। তবে বাকি এক লাখ টন চাল কারা রপ্তানি করবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ সরকার চাইছে সিংহভাগ চাল সরকারি ন্যাফেডের কাছ থেকেই নিতে। যদিও ভারতের দুটি বেসরকারি রপ্তানিকারকও বাংলাদেশে চাল রপ্তানির সুযোগ পেয়েছে টেন্ডারের মাধ্যমে।
বাংলাদেশও চাল রপ্তানির ওপরে আগে যে শুল্ক নিত, সেটা ৬২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে-সেই সুবিধাও ভারতের রপ্তানিকারকরা পাচ্ছেন।
ভারতের চাল রপ্তানিকারকদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া রাইস এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ভিনোদ কুমার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বাংলাদেশে এ বছর বন্যার কারণে ধান উৎপাদন কম হয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণেই তারা চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এটা কিন্তু মূলত সিদ্ধ চাল। বাংলাদেশ এবছরও বাসমতি চাল নিজেদের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি করছে।”
‘ন্যাফেড’-এর সঙ্গে দেড় লাখ টন চাল রপ্তানির যে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে, সেই চাল কী দরে রপ্তানি করা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলেই ন্যাফেডের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “দেড় লাখ টন রপ্তানি চূড়ান্ত হলেও তার দর এখনো ঠিক হয়নি। বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাইসিং কমিটি সেটা ঠিক করবে। আশা করছি দু’এক দিনের মধ্যেই চুক্তি সই হয়ে যাবে। এই চালটা মূলত সিদ্ধ চাল।”
ভারতের চাল রপ্তানিকারকরা বলছেন বাংলাদেশে এই বিপুল পরিমাণ রপ্তানির ফলে ভারতের চাল রপ্তানি ক্ষেত্রে এবার রেকর্ড হতে চলেছে।
দুটি বেসরকারি সংস্থাও ৫০ হাজার টন করে চাল রপ্তানি করার অর্ডার পেয়েছে। চাল আমদানি করার জন্য বাংলাদেশ সরকার যে গ্লোবাল টেন্ডার আহ্বান করেছিল, তাতে অংশ নিয়েই একটি বেসরকারি সংস্থা ৪০৫ ডলার প্রতি টন দরে এবং অন্য সংস্থাটি ৪১৬ ডলার প্রতি টন দরে সিদ্ধ চাল রপ্তানি করবে।
ভিনোদ কুমার বলেছেন, বাংলাদেশে এই বিপুল পরিমাণ চাল রপ্তানি করার সুযোগ ভারত পাচ্ছে, তার কারণ অন্য চাল রপ্তানিকারক দেশ-যেমন থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামের থেকেও সস্তায় চাল দিতে পারছে ভারত। নন-বাসমতী শ্রেণীতে ভারতের যারা প্রতিযোগী, সেই থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামের তুলনায় ভারতের চালের দাম টন প্রতি ৯০ থেকে একশো ডলার কম রাখা যাচ্ছে। সেজন্যই প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সস্তায় চাল রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে।
যদিও বাংলাদেশের সঙ্গে এই বিপুল পরিমাণ চাল রপ্তানির চুক্তি সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক চুক্তি, কিন্তু দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ড. সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলছেন,”উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে শান্তি বজায় রাখা বা পূর্ব সীমান্ত নিরাপদ রাখতে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য ভারত তাদের সহায়তা দিচ্ছে নানা ভাবে-যার অন্যতম হল প্রায় সমস্ত বাংলাদেশী পণ্যের জন্য ভারতের বাজারকে শুল্কমুক্ত করে দেওয়া ইত্যাদি। বাংলাদেশও আবার ট্র্যানজিট দিয়েছে – যার মাধ্যমে উত্তরপূর্বাঞ্চলের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি লাভবান হচ্ছে।
“শুধুমাত্র তিস্তার পানি না পাওয়া ছাড়া ভারতের ব্যাপারে বাংলাদেশের বিশেষ ক্ষোভ থাকার কথা নয়। তবে সম্প্রতি এনআরসি এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বাংলাদেশের একটা দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। এখন সেদেশে চালের ঘাটতি পূরণে যদি ভারত এগিয়ে যায়, সেই ক্ষোভ বা দুশ্চিন্তা কিছুটা প্রশমন করতে পারবে,” বলছিলেন অধ্যাপক ভরদ্বাজ।