পাবনার চাটমোহরে কৃষকদল নেতার নকল দুধ তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল দুধ, কেমিক্যাল,সয়াবিন তেলসহ ভেজাল দুধ তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী। সোমবার (১৮ আগস্ট) দিবাগত রাত ৯টায় উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের নটাবাড়িয়া প্রাইমারি স্কুল সংলগ্ন বিশিপাড়া এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় নকল দুধ তৈরির কারবারি বিলচলন ইউনিয়ন কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মোমিন ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যান। গভীর রাত পর্যন্ত চলা এই অভিযানে থানা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা অংশ নেয়।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে,দীর্ঘদিন ধরে সবার অগোচরে নটাবাড়িয়া বিশিপাড়া এলাকায় বিলচলন ইউনিয়ন কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মোমিন তার বাড়ির উল্টোদিকে একটি টিনের ঘর ভাড়া নিয়ে সয়াবিন তেল,কেমিক্যালসহ নানা উপকরণ দিয়ে নকল দুধ তৈরি করে আসছিলেন। প্রতিদিন অর্ধশতাধিক মণ ভেজাল দুধ তৈরি করে সে উপজেলার বিভিন্ন দুধসংগ্রহ কেন্দ্রে বিক্রি করতো। বিষয়টি এলাকার অনেকেই জানার পরেও প্রভাবশালী ও দলীয় পরিচয়ের কারণে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি।
এ বিষয়টি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুসা নাসের চৌধুরী পুলিশ ও আনসার সদস্যের নিয়ে সোমবার রাত ৯টার দিকে আব্দুল মোমিনের সেই নকল দুধের কারখানায় অভিযান চালান। প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান আব্দুল মোমিন ও তার সহযোগিরা। এ সময় ক্যানভর্তি প্রায় ২০ মণ নকল দুধ,কয়েক ড্রাম সয়াবিন তেল,কেমিক্যাল,মিক্সার গ্রাইন্ডারসহ বিভিন্ন উপকরণ জব্দ করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এলাকাবাসী জানান,ভেজাল দুধ তৈরি করে আঃ মোমিন পাশের দোদারিয়া বাজার এলাকায় প্রাণ কোম্পানীর চিলিং সেন্টারে সরবরাহ করতো।
এদিকে,এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (দুপুর ৩টা) থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার অনেকেই বলেছেন,‘কেন আমরা মুখ খুলি না এবার বুঝতে পেরেছেন? এতোবড় অপরাধ করার পরেও অভিযুক্ত এলাকায় ঘোরাফেরা করছে কিন্তু পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি! তাহলে মুখ খুলে আমরা কী বিপদে পড়বো?
একাধিক সূত্র জানায়,অভিযুক্ত আঃ মোমিনকে গভীর রাতে চাটমোহর থানায় দেখা গেছে।
দলীয় পরিচয় নিশ্চিত করে অভিযুক্ত কৃষকদল নেতা আব্দুল মোমিন দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, ‘ভাই, এগুলো সব ভুয়া। আমি আপনাদের ডাকব। সবাইকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করব। সেখানে অনেকই থাকবে। সামনা সামনি কথা হবে আপনাদের সাথে। এটা যে সবকিছু বানোয়াট,ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানো হেেয়ছে এসব বিষয়ে আপনাদের বলব।’
এ ব্যাপারে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল আলম বলেন,‘ইউএনও মহোদয় যেহেতু আটক করেছে, উনি যেহেতু নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, সেহেতু পরবর্তী ব্যবস্থা উনিই নেবেন।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুসা নাসের চৌধুরী বলেন,গোপন সংবাদ পেয়ে ওই কারখানায় অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় পারিয়ে গেছেন অভিযুক্তরা। নকল দুধ ও দুধ তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সূত্র: এফএনএস।