সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর মগবাজারের ইনসাফ আল বারাকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
তার একান্ত সহকারী মো. তাওহিদ জানিয়েছেন, বিচারপতি আবদুর রউফ দুই মাস ধরে অসুস্থ ছিলেন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে তাকে দাফন করা হবে।
বিচারপতি মো. আবদুর রউফ ১৯৯০ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের পঞ্চম প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এইচ এম এরশাদ সরকারের পতনের পর নব্বইয়ের দশকের প্রথমার্ধে তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৯১ সালের বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন পরিচালনা করে তিনি প্রশংসা অর্জন করলেও, ১৯৯৪ সালে বিএনপির শাসনামলে মাগুরা উপনির্বাচন নিয়ে বিতর্কের মুখোমুখি হন।
১৯৩৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করা আবদুর রউফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ষাটের দশকের শুরুতে তিনি আইনজীবী হিসেবে পেশা জীবন শুরু করেন এবং ১৯৮২ সালে হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে যোগ দেন।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ দেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিলে, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক আবদুর রউফকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিচারপতি সুলতান হোসেন খান সরে যাওয়ার পরদিন তিনি সিইসি হিসেবে দায়িত্ব নেন। তার অধীনে গঠিত তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিএনপি ১৪০ এবং আওয়ামী লীগ ৮৮ আসন পায়।
রউফ কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের সময় নির্বাচন আইনে ব্যাপক সংস্কার আনে এবং নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ জারি করে, যা সে সময় ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তবে মেয়াদের শেষ দিকে মাগুরা উপনির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ ওঠায় সমালোচনার মুখে পড়ে কমিশন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আট মাস আগেই বিচারপতি রউফ সিইসির পদ ছেড়ে পুনরায় আদালতে ফিরে যান। ১৯৯৫ সালের জুনে তিনি আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবসরে যান।
অবসরের পর তিনি ফারইস্ট ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শরিয়াহ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। পাশাপাশি, তিনি জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘ফুলকুঁড়ি আসর’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
সূত্র: এফএনএস