ভাঙ্গুড়া সংবাদদাতা :
তুচ্ছ কারণে তালাক দেওয়ায় সন্তান নিয়ে অনশনে বসেছেন এক গৃহবধু। তার নাম লিজা খানম। ঘটনাটি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের। লিজা এই গ্রামের শাহিন হোসেনের স্ত্রী। এক মেয়ে ও এক ছেলের সংসার তাদের। মেয়েটির নাম জান্নাতি ,বয়স ১২ বছর। ছেলেটির নাম ইসরাফিল,বয়স ১০। তারাও মায়ের সাথে অনশন পালন করছেন। রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) অনশনের তৃতীয় দিন অতিবাহিত হয়। এতে মা ও সন্তানেরা ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
জানাগেছে,শাহিন জুয়া খেলে বলে স্ত্রী লিজার সাথে প্রায়ই ঝগড়া হতো। সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তা করে সম্প্রতি লিজা তার স্বামীকে জুয়া খেলা বন্ধ করতে বলেন। এই নিয়ে পরিবারে শুরু হয় বিবাদ। এর পরই শাহিন তার স্ত্রীকে তালাক দেন। স্ত্রী লিজা বাড়ি ছাড়তে না চাইলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। লিজা থানায় একটি অভিযোগ করেন। এতে শাহিন আরো ক্ষিপ্ত হন। পরে এই দরবার গড়ায় ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে কিন্তু চেয়ারম্যানের আদেশ শাহিন তাচ্ছিল্যের সাথে উড়িয়ে দেন।
লিজা খানম বলেন, তার ১৬ বছরের সংসার,দু’টি সন্তান নিয়ে বাবার ঘরে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই তালাক প্রত্যাহেরর জন্য স্বামীর ঘরের বারান্দাতেই তিনি অনশন করছেন। মায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শিশু সন্তানেরাও তার সাথে অনশনে রয়েছেন। এ বিষয়ে কথা বলতেই লিজার দু’চোখ ভরা জল গড়ে পড়ে। লিজা বলেন,তার দাবি না মানলে তিনি আত্মহত্যা করবেন। তিনি অভিযোগ করেন,থানা তার নির্যাতনের অভিযোগ আমলে নেয়নি। এছাড়া ইউপি চেয়ারম্যানের অসহায়ত্ব তাকে ক্রমেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।
লিজার ভাই পাটুলিপাড়া গ্রামের ইউসুফ আলী বলেন,ভগ্নিপতি শাহিন জুয়া খেলে তিন লাখ টাকা ঋণ করেছিলেন। তিনি ঐ সব ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছেন। তারপরও বাড়িতে নতুন ঘর নির্মাণের সময় তিনি আরো দু’লাখ টাকা দিয়েছেন,যাতে বোন-ভাগ্নি সুখে থাকেন। অথচ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তাদের সেই সংসার ছাড়তে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে শাহিনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন,“ লিজা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। এজন্য তাকে তালাক দিয়েছি”।
পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিযন পরিষদের চেযরম্যান আলহাজ্ব মো. হেদাযতুল হক বলেন,সালিশের মাধ্যমে বিষযটি সমাধানের চেষ্টা করা হয় কিন্তু শাহিনের প্রভাবশালী এক আত্মীয়র বিরোধিতায় তা ব্যর্থ হয়।
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রাশিদুল ইসলাম বলেন,ওই গৃহবধু অভিযোগ দিলেও থানা পুলিশের কিছু করার নেই। তাই তাকে পারিবারিক আদালতে মামলা করে প্রতিকার পাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন হলো- ন্যায়ত ও আইন সম্মত দৃঢ় অবস্থান নিয়েও গৃহবধু লিজা কেন মৃত্যু হুমকিতে পড়লেন ? এ ছাড়া শিশু সন্তানদের নিয়ে অনশনের তিন দিন অতিবাহিত হলেও সরকারের এ সংক্রান্ত বিভাগ বা লিগ্যাল এইড সাপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাগুলোর এগিয়ে না আসার হেতুই বা কি ? তা কারো বোধগম্য নয়!