সম্পাদকীয় ডেস্ক : গত ২ জুন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ৯৯টি সরকারি বিদ্যালয়ে স্টুডেস্ট কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন ঘিরে স্কুলে স্কুলে ব্যাপক আনন্দ,উৎসাহ ও উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়। সর্বশেষে একটি ভয়হীন,অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়।
সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য নিবার্চন অনুষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘‘স্টুডেস্ট কাউন্সিল নির্বাচন-২২’’ সবার জন্যই শিক্ষণীয় হতে পারে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতন্ত্রের চেতনা জাগ্রত,দায়িত্বশীল হওয়া,পরমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ও শিক্ষার মানবৃদ্ধিসহ বিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়নে যাতে শিক্ষকদেরকে সহায়তা করতে পারে এজন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্য হতে সাতজন প্রতিনিধি বাছাইয়ের জন্য পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ৯৯টি সরকারি বিদ্যালয়ে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই সাতজন নির্বাচিত প্রতিনিধির সমন্বয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে গঠিত হলো স্টুডেন্ট কাউন্সিল।
এই নির্বাচনে তফশিল ঘোষনা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার,যিনি বিদ্যালয়ের সর্বজন স্বীকৃত একজন ছাত্র বা ছাত্রী। তিনি আবার প্রিজাইডিং অফিসার,পোলিং অফিসার ও নিরাপত্তা প্রহরীদেরকে নিয়োগ দেন। ভোটের দিন সবাই যার যার দায়িত্ব পালন করেন। সকাল ৯টা হতে দুপুর একটা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহন চলে। বিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রী নিজ বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন।
শরৎনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটদানের দৃশ্য :
এসব কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় কোথাও কোনো গোলোযোগ নেই। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রত্যেকেই নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। প্রার্থীর এজেন্টগুলো বুথে বসে আছেন। ফল্স ভোটের কোনো অভিযোগও কেউ উথ্থাপন করেননি। ভোটাররা সুশংখল লাইনে দাড়িয়ে ভোট দেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা যেভাবে লাইন দাড়িয়ে একে একে ভোট দেওয়ার পরামর্শ দেন ভোটাররা ঠিক সেভাবেই এগিয়ে ব্যালট গ্রহন করেন এবং তা সীল মেরে বাক্সে ফেলেন।
এর আগে নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রার্থীরা ছবিসহ পোষ্টার ছাপিয়েছেন,উহা বিদ্যালয়ের আঙ্গীনায় টাঙ্গিয়েও দেন। এ নিয়েও কারো সাথে বাকবিতন্ডা হয়নি। নির্বাচন শেষে ভোট গননার সময় বা পরে কোনো হট্রগোল হয়নি। বরং বিজয়ীদের ফুল দিয়ে বরণ করেছেন বিজিত প্রার্থীরা। এটাই প্রকৃত গণতন্ত্রের শিক্ষা।
স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনে একটি বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহন চলাকালিন সময়ে একজন প্রার্থী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট লিখিত দরখাস্ত দেন যে, ব্যালটে তার নাম আংশিক ছাপা হওয়ায় ভোটাররা তাকে চিনতে পারছেন না। অনেক ভোটার এতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
একই কারণে ফলাফল উল্টে যেতে পারে বলেও তার আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন। আবেদনকারী সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে তার নাম সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করে পুনরায় ব্যালট পেপার ছাপিয়ে ভোট গ্রহনেরও অনুরোধ জানান। এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার(সিইসি)এর সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা সংবিধানই তাকে প্রদান করেছে। সেই বিবেচনায় সিইিসি তার আবেদনটি গ্রহন এবং তার দাবি যৌক্তিক মনে করায় নির্বাচন স্থগিত করেন এবং নতুন করে ভোট নেন। ফলে সংক্ষুব্দ ব্যক্তি ন্যায় বিচার পেলেন বলে সন্তোষ্ট হন, তেমনি অন্য প্রার্থীরাও স্বহাস্যবদনে এই সিদ্ধান্ত মেনে নেন।
শরৎনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনে কর্ম
ব্যস্ত সিইসি :
নির্বাচনে জয়-পরাজয় দুটোই সমান মর্যাদার। এজন্য যারা জয় লাভ করেন তারা শাসন করবেন আর যারা হেরে যাবেন তারা সরকারের সমালোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করবেন । এমনকি তারা ছায়া সরকার গঠন করতে পারেন। যাতে শাসকগোষ্ঠী জনস্বার্থের বাইরে কিছু করতে সাহস না পান। আবার নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বিজয়ীরা ক্ষমতায় থাকবেন। এর আগে অকারণে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা যায় না। এটাই গণতন্ত্রের শিক্ষা।
স্টুডেন্ট কাউন্সিলের নির্বাচনে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা ভোটার ব্যতীত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে প্রতিকী দায়িত্ব পালন করলেও এখানে প্লেন লেবেল ফিল্ড বজায় ছিল। প্রচার প্রচারণায় কারো বাধা ছিলা না। ভোটারগণ নির্বিঘেœ ভোট প্রদান করেন। নির্বাচন কমিশনের কোনো কাজও প্রশ্ন বিদ্ধ হয়নি। আইন শংখলা বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ কারো পক্ষ অবলম্বন করেনি। সকল পক্ষ নিরপেক্ষ হলে অবাধ,সুষ্ঠু ও ভয়হীন নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান অবশ্যই সম্ভব। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে এ ভাবেই সরকার গঠন ও পরিবর্তন হয়।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ভাষ্য অনুযায়ী,গণতন্ত্র এমন এক ধরণের শাসনকে বুঝায়, যে ব্যবস্থায় একটি সরকার জনগণের,জনগণের জন্য এবং জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কাউন্সিলের এই নির্বাচনে লিংকনের সঙ্গার হুবহু প্রতিফলন ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হয়। তাই রাজনীতিবিদ,ভোটার ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সংস্থার কাছে এটা অনুকরণীয় ও শিক্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে ! আমরা আশাবাদি বাচ্চাদের গণতন্ত্রের নিখুঁত চর্চা জাতীয় নির্বাচনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে । গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হবে,আরো মজবুত হবে।।