আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে । আগামী
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বা অক্টোবরের শুরুতে এই পরীক্ষা শুরু হতে পারে যদি করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আরও অবনতি না ঘটে ।
জানাগেছে, পরীক্ষার কেন্দ্রে ‘জেড’ আকৃতিতে শিক্ষার্থীদের বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে একটি কক্ষে প্রথম বেঞ্চে দুজন শিক্ষার্থী বসলে দ্বিতীয় বেঞ্চে বসবে একজন। এর পরের বেঞ্চে আবার বসবে দুজন। এভাবে একজন শিক্ষার্থী থেকে আরেকজন শিক্ষার্থীর তিন ফুট দূরত্ব নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনে বেঞ্চগুলো আগের চেয়ে দূরে দূরে বসানো হবে। এভাবে শিক্ষার্থীদের বসালে কতগুলো কেন্দ্রের প্রয়োজন হতে পারে, সে বিষয়ে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) স্থানীয় শিক্ষকদের নিয়ে এ ব্যাপারে কাজ করছেন।
মাঠ পর্যায়ের তথ্য অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষার দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হবে। শিগগিরই এই পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করা হবে। যদিও একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে সব কিছু সচল হচ্ছে, তাই করোনা পরিস্থিতির আর অবনতি না ঘটলে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে অথবা অক্টোবরের শুরুতে পরীক্ষা আয়োজন হতে পারে।
চলতি বছরের ১ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসার কথা ছিল প্রায় ১৩ লাখ শিক্ষার্থীর। কিন্তু করোনার কারণে এ পরীক্ষাসূচি স্থগিত করতে বাধ্য হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এত দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ১৫ দিন পর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করার কথা বলা হচ্ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরুর বিষয়টি এখনো অনেকটাই অনিশ্চিত। এমন বাস্তবতায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা আয়োজনের এই চিন্তা-ভাবনা চলছে।
সূত্র জানায়, শিক্ষার ‘রিকভারি প্ল্যান’ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেএসসি) এ বছর না নেওয়ার ব্যাপারে প্রস্তাব ওঠে। অন্যান্য শ্রেণিতে অটোপাসের মাধ্যমে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীতের ব্যাপারে আলোচনা হয়। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারেও আলোচনা হয়। এরপরই মূলত শিক্ষা বোর্ডগুলো এ ব্যাপারে কাজ শুরু করে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জানান, ‘অনেক দিন ধরে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। এ জন্য আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে কিভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায় সেই পরিকল্পনা করছি। তিন ফুট দূরত্ব নির্ধারণ করে শিক্ষার্থীদের বসালে কতগুলো কেন্দ্র বা উপকেন্দ্রের প্রয়োজন হতে পারে সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। এগুলো পাওয়ার পর শিগগিরই এসংক্রান্ত প্রস্তাব আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করবে।’
আন্ত শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের প্রায় আড়াই হাজার কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। তবে প্রতিটি কেন্দ্রে ‘জেড’ আকৃতিতে শিক্ষার্থীদের বসিয়ে বেঞ্চগুলোর দূরত্ব বাড়ালে সাত-আট হাজার প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হতে পারে। যেহেতু দেশে এত সংখ্যক কলেজ নেই, তাই কেন্দ্রের সংখ্যা ঠিক রেখে এর অধীনে তিন-চারটি করে উপকেন্দ্র করা হবে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রের আশপাশের স্কুলকেও উপকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে। এভাবে শিক্ষার্থীদের ছড়িয়ে দিলে এক কেন্দ্রে জটলার সৃষ্টি হবে না।