জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার রায়ের প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর বনানীর শেরাটন হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান একগুচ্ছ রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরেন। সেখানে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সময়সীমা নির্ধারণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিস্তারিত মতামত ব্যক্ত করেন।
শফিকুর রহমান বলেন, দলটি জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, তবে নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা বলেছি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়টাকে নমনীয় সময়সীমা (ফ্লেক্সিবল টাইম) হিসেবে ধরা হোক। কোনো কারণে যদি এই সময়সীমার মধ্যেও না হয়, তাহলে এপ্রিল মাস পেরিয়ে যাওয়া উচিত হবে না।” তার যুক্তি, মে মাসের পর দেশের আবহাওয়া নির্বাচন আয়োজনের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে ওঠে।
তবে জামায়াত ডিসেম্বরেও নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত—এই অবস্থানও স্পষ্ট করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, “আজকেও যদি দেখি সমতল মাঠ তৈরি হয়ে গেছে, জনগণ প্রস্তুত, সব প্রতিষ্ঠান ফেয়ার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, তাহলে আমাদের নির্বাচনে যেতে কোনো সমস্যা নেই। সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি।”
এসময় তিনি নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে চাই, তাদের কাজ দেখেই আমরা মূল্যায়ন করব।” তার মতে, একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া দরকার। এতে একদিকে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হবে, অন্যদিকে কমিশনের সক্ষমতা প্রমাণিত হবে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়েও গুরুত্বারোপ করেন জামায়াত আমির। তিনি বলেন, “প্রবাসীরা নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। আমরা চাই প্রবাসীরা যেন ভোট দিতে পারেন, তার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এটি কোনো কঠিন কাজ নয়, কিন্তু এখনও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।”
দলের নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত ছিলাম। এখন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ এসেছে। এর ধারাবাহিকতায় জাতীয় রাজনীতিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করাই আমাদের লক্ষ্য।”
তিনি আরও বলেন, “একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন এখন সময়ের দাবি। আমরা চাচ্ছি একটি দায়বদ্ধ ও জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো সরকার গঠিত হোক।”
সংবাদ সম্মেলনে কূটনীতিক, রাষ্ট্রদূত ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপস্থিতি দলটির রাজনৈতিক সক্রিয়তার গুরুত্বই তুলে ধরে।
সূত্র: এফএনএস