চট্টগ্রাম জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা সুলতান যওক নদভী (৮৮) ইন্তিকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে চট্টগ্রামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তিকাল করেন তিনি।
আল্লামা সুলতান যওক নদভী (১৯৩৭-২০২৫) ছিলেন বিশ্ব বরেণ্য বাংলাদেশী ইসলামি স্কলার। তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের সভাপতি, জামেয়া দারুল মাআরিফ আল ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক এবং মক্কাভিত্তিক রাবিতাতুল আলম আল ইসলামীর বাংলাদেশ চ্যাপ্টার প্রধান। তিনি কওমি মাদরাসা শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনের অগ্রদূত এবং আরবি ভাষায় বিশেষ দক্ষতা ও আরবি সাহিত্যে অবদানের জন্য দেশে-বিদেশে প্রখ্যাত ছিলেন।
আল্লামা সুলতান যওক নদভী ১৯৩৭ সালে মহেশখালীর জাগীরাঘোনা মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে সালে আল-জামেয়া আল-ইসলামিয়া পাটিয়া থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। পরে ১৪০৪ হিজরি সালে ভারতের দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামা থেকে সম্মানসূচক আলমিয়াত ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি ১৯৫৯ সালে চন্দনাইশ উপজেলার মাদরাসা রাশিদিয়াতে যোগদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬০ সালে তিনি জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে হাজী মুহাম্মদ ইউনুস রহিমাহুল্লাহির আহ্বানে তিনি আল জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন।
১৯৬৫ সালে তিনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমবার পটিয়া মাদরাসা ছেড়ে চলে যান এবং মুরাদপুরে কাশেফুল উলুম নামে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। পরে আল্লামা হারুন বাবুনগরী রহিমাহুল্লাহির আহ্বানে তিনি আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন।
তিনি আরবি সাহিত্য অধ্যয়নের জন্য নাদিয়াতুল আদাব নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা উত্তর সময়ে তিনি দ্বিতীয়বার আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায় নিযুক্ত হন।
পটিয়া আল-জামেয়ায় দ্বিতীয় বার যোগদানের পর তিনি একটি ত্রৈমাসিক আরবি পত্রিকা ‘আস-সুবহুল জাদিদ’ সম্পাদনা করতেন। ১৯৮১ সালে তিনি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য ভারত যান এবং দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামাতে দুই মাস অবস্থান করেন।
১৯৮৬ সালে তাকে রাবেতায়ে আল-আদাব আল-ইসলামির ট্রাস্টি বোর্ডে নিযুক্ত করা হয় এবং সংগঠনের বাংলাদেশ আঞ্চলিক কার্যালয়ের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৪ সালে তার আমন্ত্রণে আবুল হাসান আলী হাসানী নদভী বাংলাদেশ সফর করেন এবং মাদরাসা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে পরামর্শ দেন।
১৯৮৫ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো পটিয়া মাদরাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে জামেয়া দারুল মাআরিফ আল ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠা করেন।
আল্লামা সুলতান যওক নদভীর উল্লেখযোগ্য কর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে আত্ব-তরীকু ইলাল ইনশা, আমার জীবনকথা,আল-ক্বিরাআতুল আরাবিয়্যাহ, ইশরুনা দারসান, তাছহিলুল ইনশা ইত্যাদি।
সূত্র: নয়া দিগন্ত।