জেলার কাহারোল উপজেলার দশমাইলে ঢাকা-দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও মহাসড়কের পাশে উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর কলার পাইকারি হাট বসে। এই হাটে প্রতিদিন গড়ে কোটি টাকার কাঁচা কলা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। শত শত ট্রাকে এই কাঁচা কলা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েকশত বেকার যুবকের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হয়েছে এই হাটে।
দিনাজপুর আঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ জাহিদুর রহমান বাসসকে জানান, জেলার কাহারোল উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে কলাচাষের উপযোগী জমি থাকায় কলার আবাদ দিন দিন বাড়ছে। এখানকার কলা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হচ্ছে রাজধানীসহ সারাদেশে। বর্তমানে বাজারে কলার দাম বেশি থাকায় এবং উৎপাদন বেশি হওয়ায় কলা চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। ফাল্গুনে ঠান্ডা গরম আবহাওয়া প্রবাহিত হওয়ায় এবং পবিত্র রমজান মাসে সারাদেশে কলার চাহিদা থাকায় বর্তমানে এখানে প্রতিদিন কলার পাইকারি হাট বসছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারেরা এসে এখান থেকে কলা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
কাহারোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে কাহারোল উপজেলায় ৩৩৫ হেক্টর জমিতে কলাচাষ হয়েছে। বর্তমানে কৃষকরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি কলা চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর এই উপজেলায় কলার বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা কলার দাম ভালো পাওয়ায় তারা খুব খুশি।
সরেজমিনে দশমাইল কলার হাটে গিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে কলাচাষি, ব্যবসায়ী ও পাইকারদের। হাট জুড়ে সারি সারি কলার কাঁদি সাজানো হয়েছে। চাষিরা ভ্যানযোগে সকাল থেকে বিকেলে পর্যন্ত কলা নিয়ে হাটে আসেন। পাইকার ও কলাচাষিদের মধ্যে দর কষাকষির মাধ্যমে ভ্যানের উপর থেকেই কলাবিক্রি হয়ে যায়।
কাহারোল উপজেলার নয়াবাদ গ্রামের কলাচাষি আবুল কালাম বাসসকে জানান, তিনি এবার ৪৮ শতক জমিতে কলা চাষ করেছেন। দশ মাইল কলার হাটে একশত কলার কাঁদি এনে ৬২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
একই গ্রামের কলাচাষি আব্দুল জলিল বলেন, প্রতিটি কলার কাঁদি ৪৯০ টাকা করে বিক্রি করেছি। এ বছর সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছি, কলার ফলন বেশ ভালোই হয়েছে। এমন দাম পেলে এই বছর ৩ লক্ষাধিক টাকা বিক্রি হবে। বাজারে এরকম দাম পাওয়া গেলে, ভালোই লাভ হবে আশা করছি।
ঢাকা থেকে আগত কলা ব্যবসায়ী মো. রফিজ উদ্দীন তালুকদার জানান, ভালো মানের কলার দামও বেশি। তিনি প্রতিদিন তিন ট্রাক করে কাঁচা কলা ক্রয় করে ঢাকা পাঠাচ্ছেন।
ফেনী জেলার কলা ব্যবসায়ী মো. জালাল উদ্দীন এই হাট থেকে নিয়মিত পাইকারী কলা কেনেন। তিনি বলেন, এক মাস আগে কলার দাম আরো বেশি ছিল। এখন দশ মাইল কলার হাটে কলার যোগান বেশি হওয়ায় আগের তুলনায় একটু দাম কমেছে। তবে এবার কলার ফলন ভালো হওয়ায় চাষিরা কলা বিক্রি করে অনেক লাভবান হচ্ছে।
এই হাটে জেলার বীরগঞ্জ, খানসামা, সেতাবগঞ্জ, বিরল এবং পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁ জেলার পীরগঞ্জ ও সৈয়দপুর হতে কলাচাষিরা কলা নিয়ে আসেন। ফালগুন মাস থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত কলা বিক্রির সময়। বিভিন্ন এলাকা হতে ভ্যান, পিকআপ ও ভটভটিতে এ হাটে বিক্রির জন্য কলা নিয়ে আসেন কলাচাষি ও ব্যবসায়ীরা। ভোর থেকে কলার হাটে কেনা বেচা শুরু হয় চলে বিকেলে পর্যন্ত। কলা ক্রয় শেষে ব্যবসায়ীরা ট্রাক যোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কলা বিক্রির জন্য নিয়ে যায়।
দশ মাইল কলার হাটের শ্রমিক এরশাদুল জানান, এই হাটে প্রতিদিন ট্রাক লোড দিয়ে একজন শ্রমিক হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করতে পারে। এখানে প্রতিদিন কয়েকশত শ্রমিক কলার ট্রাক লোড দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকে।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান মিয়া বলেন, কলা একটি লাভ জনক ফসল। এই অঞ্চলের কৃষকদের উন্নত জাতের কলা চাষের জন্য কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কলার ভালো ফলন পাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েও সহযোগিতা করা হচ্ছে। ফলে কৃষকরা কলার ভালো উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে।
সূত্র: বাসস