1. admin@ddnnewsbd.com : admin : ddn newsbd
  2. mamahbubulalom@gmail.com : mahbubul alom : mahbubul alom
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ন

নেতিবাচক শিক্ষা রাষ্ট্রে হুমকি বাড়ায় ! সুসাশনে SMART সরকার অপরিহার্য

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৬৫ সময় দর্শন

মাহবুব উল আলম : “ If the lamp of justice goes out of darkness how great is the darkness ”  ন্যায় বিচারের বাতি যদি নিভে যায়,সে অন্ধকার হয় ভয়াবহ ! এ কথাটি সবাই বোঝে কিন্তু বিশ্বাস করে কয়জন? লেখাপড়া শিখে যারা শিক্ষিত হন,তারাও কি সবাই শিক্ষিত ?

আমরা জানি ,মানুষ জন্মের পর থেকে দেখে ,শুনে,ঠকে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং তা যদি তার জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনে তাকে বলে শিক্ষা।  সে অনুযায়ী পৃথিবীর কোনো মানুষই অশিক্ষিত নয়। একজন কৃষক ,যিনি লেখাপড়া  শিখেন নাই কিন্তু তিনি তার অভিজ্ঞতার আলোকে জমিতে ফসল উৎপাদন করেন। অথচ শিক্ষিত একজন মানুষকে হঠাৎ  জমিতে লাঙ্গল চালাতে কিংবা বীজ ছিটাতে বললে কাংখিত উৎপাদন হবেনা। কারণ এ কাজে তার পুর্ব অভিজ্ঞতা নেই।  তেমনি এমবিএস পাশ করা একজন ডাক্তার সব রোগের চিকিৎসা দেন না। কারণ সব বিষয়ে তিনিও দক্ষ নন। বিশেষ অভিজ্ঞতার আলোকে কেউ মেডিসিন,সার্জারি,হার্ট ,নেপ্রোলজি,গাইনি, প্রভৃতি বিভাগের পারদর্শি হয়ে রোগের চিকিৎসা দেন। সুতরাং একজন মানুষ কোনো না কোনো বিষয়ে যেমন দক্ষ হতে পারে ,তেমনি প্রত্যেক মানুষ অন্তত: একটি বিষয়ে অবশ্যই শিক্ষিত।

নেতিবাচক শিক্ষা হলো যা মানুষের কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণ ডেকে আনে। ছোট বেলায় গল্প শুনেছিলাম , লাহিড়ি মোহনপুরের মোহন মুচির ছেলে বলরাম চুরি বিদ্যায় পারদর্শি ছিল। তার একটা হাতের কনুই পর্যন্ত কাটা ছিল। অপর হাতের কেবল মাঝের দুটি আঙ্গুল ছিল। তিনি ভাঙ্গুড়ায় গরুর হাটের দিন আসতেন,কারণ  ঐদিন খুব ভীড় থাকতো । বলরাম সুযোগ বুঝে তার টার্গেটের  ব্যক্তির পকেটে কাটা হাতটি ঢুকিয়ে দিতেন,টাকার স্পর্শে তিনি অনুমান করতে পারতেন সেখানে কত টাকা রয়েছে। পকেটওলায়া টের পেলে বলরাম তার হাতটি উঁচিয়ে ধরে বলতেন,দেখ ভাই,ভীড়ের মধ্যে ধাক্কায়  হঠাৎ কাটা হাত তোমার পকেটে চলে গেছে। লোকটি ভাবতেন ঠিকই তো, কাটা  হাত দিয়ে টাকা তো তুলে নেওয়া যায়না ! কিন্তু বলরাম চুরি বিদ্যায় এতটাই প্রশিক্ষিত ছিলেন যে, কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি অপর হাতের দু’আঙ্গুলে ব্লেড ধরে সুন্দর করে পকেট কাটতেন এবং টাকাগুলো তুলে নিতেন। ফলে সব সময় তিনি সন্দেহের উর্ধে থাকতেন।

পরবর্তী সময়ে সিরাজগ্ঞ্জ ও জামতৈল এলাকায় যেসব ছিছকে চোর ছিল, তারা বলরামের কাছে ৬ মাসের  ট্রেনিং নিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করতো।  এরপরে  বলরাম হয়ে উঠলেন চোরদের প্রশিক্ষক। বলরামের ছাত্ররা নাকি শার্ট, প্যান্ট কিংবা কোর্টের পকেটের সাথে ঠ্যাস দিয়েই বুঝতে পারতো সেখানে কত টাকা রাখা  আছে। এরা চুরি বিদ্যায় উচ্চ শিক্ষিত ছিল বলা যেতে পারে।

একবার একজন চোর পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তার দেওয়া বর্ণনায় জানা গেলো,তিনি সিরাজগ্ঞ্জ-রায়পুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠতেন। উল্লাপাড়া পর্যন্ত তার এলাকা ধরা হতো। এর পরের এলাকা চাটমোহরের চোরদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ঈশ্বরদী পর্যন্ত ঐ এলাকার চোররা দেখভাল করতো। ফলে যার যার এলাকার যাত্রী, তারাই পকেট কাটতো। এ সময় পকেট কাটা সম্ভব না হলে কোনো চোর নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করতো না কিন্তু পরবর্তী এলাকার চোররা ট্রেনে উঠে তাদের সাথে কথা বলে ঐ পকেটগুলো কিনে নিতো । যদি পরের স্টেশন পর্যন্ত পকেট কাটা না যেত তাহলে তার পরবর্তী এলাকার চোর উচ্চ দামে ঐসব পকেট কিনে নিতো ! এভাবে পকেট কেনাবেচা হতো ! আশ্চর্য হলো ,পকেট একজনের আর বিক্রি করতো অন্যজন,যা পকেটওয়ালা কখনো জানতেও পারতেন না।  যাহোক শেষ ধাপের চোর ব্যর্থ হলে সে মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতো। যাকে বলে ব্যবসায় রীতিমত মার খাওয়া ! অবশ্য প্রথম চোর নাকি অনুমানকৃত টাকার ২০% প্রফিট পেত,পরবর্তী চোরেরা  ১০% পার্সেন্ট করে প্রফিট পেত। সর্বশেষ যে পকেট কাটতে পারতো তার লাভ হতো ৫০ পার্সেন্ট । মজার ব্যাপার হলো,ওদের  অনুমান খুব কমই ভুল হতো। এ যেন ঠিকাদারি ব্যবসার মতই কারবার।

এখন যদি প্রশ্ন করি,বলরাম আর তার ছাত্ররা কি শিক্ষিত ? উত্তরে অবশ্যই না বলবো ! কারণ তাদের ঐ শিক্ষা জীবনে ইতিবাচক বা কল্যাণমূরক পরিবর্তন আনতে পারেনি। বরং তাদের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা জীবনকে ঠেলে দিয়েছে ভয়ংকর শংকার মধ্যে। যে কোনো সময় তাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। গণপিটুনিতে এরকম অনেক প্রশিক্ষিত চোর মারা যায়। সুতরাং এটি হচ্ছে নেতিবাচক শিক্ষা।

একবার একটি সংরক্ষিত মহিলা আসনের ইউপি সদস্য একটি প্রকল্পের কাজ শেষ করে অপর তিন ইউপি সদস্যকে বললেন, ৩৬ মন গম বেচে গেছে। অপর দু’জন বললেন,তাহলে ঐ গম চারজনের মধ্যে ভাগ করে নেয়া যাক।  একজন সঙ্গে সঙ্গে ভাগ কষে বলেই ফেললেন,প্রত্যেকে ১৮ মন করে পাবেন।  তিনি একবার ভাগ, একবার গুণ ও একবার যোগ করে মিলিয়ে দিয়ে বললেন,আমাদের একেকজনের ভাগে ১৮ মন করেই হলো। অবশেষে প্রত্যেকে বস্তার ভাগে ১৮মন করে বুঝে নিলেন !

অংকের এমন সমাধান দেখলে যে কোনো অংক বিশারদ চোখ উল্টাবেন ! তারপরও এটি সত্য যে, এমন অংক দিয়েই অসংখ্য প্রকল্প ভাগাভাগি হয়।  ২০০৭ সালে একটি জরিপে দেখা যায়,আমাদের দেশে প্রতি বছর ৬৭৯৮ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়। । যা দিয়ে ৮ হাজার হাসপাতাল বা ১২ হাজার প্রাইমারী স্কুল নির্মাণ করা যায়। এর পরবর্তী সময়ে ২৪ গণ অভ্যূথ্থান পর্যন্ত হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা দৃশ্যমান হয়। এখন পর্যন্ত দেশে সেসব রুখে দেওয়া যায়নি। একই ভাবে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছেনা।

দার্শনিক প্লেটো তার গুরু সক্রেটিসকে হত্যার পরে বসে থাকেননি। ভবিষ্যতে আর কোনো সক্রেটিসকে যেন অকারণে জীবন দিতে না হয় সেজন্য তার আদর্শ রাষ্ট্রে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়ে ছিলেন। প্লেটো বলেন, Wisdom, Courage and Appetite(প্রজ্ঞা,সাহস এবং ইচ্ছা)  এই  তিনটি গুণ যখন মানুষের মধ্যে সমন্বিত হয় তখন তার মধ্যে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।  অনুরুপ ভাবে রাষ্ট্রের মধ্যেও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয় তখন ,যখন ঐ তিন গুণের প্রতিনিধিত্বকারি দার্শনিক,যোদ্ধা ও উৎপাদক শ্রেণির মধ্যে সমন্বয় সাধন হয়।  তিনি মনে করেন রাষ্ট্রের শাসন ভার অবশ্যই একজন দার্শনিক রাজার হাতে ন্যস্ত থাকবে। কিন্তু  রাজা যদি দার্শনিক না হন, তবে ? এজন্য তিনি দার্শনিক রাজা তৈরির জন্য দীর্ঘ ৫০ বছরের শিক্ষা কারিকুলাম দিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন দিার্শনিক রাজা কখনোই ভুল করতে পারেন না। তিনি লোভ লালসার উর্ধে থেকে কেবলই দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করবেন।

আমরা তো রাজার শাসন পছন্দ করিনা। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।  যার মূলমন্ত্র হলো “ জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস”। আব্রাহাম লিংকন সুন্দর ভাবে গণতন্ত্রের সঙ্গা দিয়েছেন, “Democracy is the  government of the people, by the people and for the people. এর অর্থ ‘‘ জনগণের ,জনগণের দ্বারা এবং জনগণের জন্য  পরিচালিত শাসন ব্যবস্থা “। এ পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারের এমপি, মন্ত্রীরা বা রাষ্ট্র প্রধান বা প্রধানমন্ত্রী দার্শনিক(প্রজ্ঞাশীল) হবেন কিনা তার কোনো পরিমাপক নেই। আবার যারা প্রার্থী হবেন তারা প্রকৃতপক্ষে শিক্ষিত কিনা তার কোনো পরিমাপক নেই। আবার যারা ভোট প্রদান করেন তাদেরও অনুরুপ যোগ্যতা নিরুপণের পরিমাপক নেই। সুতরাং জনগণ যাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে তিনি বা তারাই সরকার গঠন করবেন। এখানে মেজরিটির সমর্থনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এজন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিষ্টটল গণতন্ত্রকে মূর্খের শাসন বলে অভিহিত করেছেন।

যদিও গণতন্ত্রের সফলতার পূর্ব শর্ত হলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। আমাদের রাজনৈতিক দল,বিরোধীদল ও সরকারের মধ্যে জবাবদিহিতার অবস্থা দেখলে আব্রাহাম লিংকন হয়তো গণতন্ত্রের সঙ্গা পাল্টিয়ে দিতেন ! অবশ্য Democracy ’র  সঙ্গা যাই হোক না কেন,দেশের  নতুন প্রজন্ম গণতন্ত্রের অমন চেহারা দেখতে দেখতে মনে করতে পারে, আমাদেরটাই হয়তো আসল। তখন ঘুষ,দুর্নীতি,অন্যের সম্পদ লুট,বিচারের নামে অবিচার, অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখা দোষের মনে নাও হতে পারে।

একইভাবে হরতাল,আরোধ,জালাও,পোড়াও,ভাংচুর,চাঁদাবাজি ও হত্যা-খুনের ঘটনা দেখতে দেখতে একসময় স্বাভাবিক মলে মনে হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সরকার যখন অগতান্ত্রিক রুপ ধারণ করে এবং ক্ষমতায় অনঢ় থাকে তখন বিরোধী দলের কর্মসূচী জনগণ হজম করে নেয়। বাংলাদেশ ও নেপালে যা ঘটলো তা তো অবাক করার মত। এখানে সাধারণ ছাত্র-জনতা সরকার উৎখাতে সক্রিয় হয়। অথচ গণতান্ত্রিক ধারায় সরকার পরিবর্তনের যে পদ্ধতি, তা প্রত্যাখিত হওয়ায় নেতিবাচক প্রক্রিয়ায় ক্ষতাসীনদের পালাতে হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে দেশের মানুষকে নেতিবাচক ইমপ্যাক্ট বইতে হচ্ছে। যার ফলাফল জাপানের নাগাসাকিতে এটোম বোম্ব বিস্ফোরণের মত লেটফেট(বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া বা  ক্ষতির দীর্ঘ সুত্রিতা)বহুদিন জাতিকে বইতে হবে।

ইদানিং আমাদের মত দেশের সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে জবাবদিহিতা বলে যে জিনিস তা দেখা যায়না। ক্ষমতায় বসার পর তারা কিয়ামত পর্যন্ত অধিষ্ঠিত থাকবেন বলে মনে হয়। পাশ্ববর্তি  ভারতে আগে রেল দূর্ঘটনার কারণে মন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন কিন্তু সে রেওয়াজ এখন আর দেখা যায়না। সোনিয়া গান্ধি কংগ্রেসের প্রধান হয়েও মনোমহন সিং কে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে ছিলেন। এটাই গণতান্ত্রিক রেওয়াজ। অবশ্য বাংলাদেশে একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মন্ত্রী কালো বিড়ালের কারণে দপ্তর ছেড়েছিলেন ! এটা নিশ্চয় নেতিবাচক রেওয়াজ  ! কারণ এরপরও তিনি দপ্তরবিহিন  মন্ত্রী ছিলেন।

আমাদের দেশে বিচারকদের নিয়েও কম কথা হয়না ! যে সরকার যখন ক্ষতায় থাকে তখন তার দলীয় বা কট্টর সমর্থক আইনজীবীদের বিচারক নিয়োগ করা হয়। তাই আইনের ব্যাখ্যাও অনেক সময় দলীয় রুপ নেয়। বিচারালয় তখন রাজনৈতিক প্লাটফরমে পরিণত হয়। সেইকারণে আইনজীবীদের ওপর লাঠিচার্জ হয়। আবার সরকার পরিবর্তন হলে মার খাওয়া আইজীবীদের নেতা রাতারাতি মন্ত্রী বনে যান। এভাবে অপজিশনের ন্যায় বিচার পাবার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় এমনই ভাবে লেখা হয়েছিল।

গণতন্ত্রে কপটতা,শঠতা ও মিথ্যার ঠাই নেই। একজন প্রকৌশলী যদি ঠিকাদারের স্বার্থ দেখেন,একজন শিক্ষক টাকা পেলে যদি বেশি নম্বর দেন,ডাক্তার সরকারি হাসপাতালের চেয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক বা নিজের চেম্বারে বাড়তি টাকার বিনিময়ে কাজ করতে আগ্রহী হন,সাংবাদিক যদি ব্যক্তি আক্রোশের কারণে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশে তৎপর হন, তখন “ ন্যায় বিচারের বাণি নীরবে নিভৃতে কাঁদে”সত্যিই  কি আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি,সেই প্রশ্নটা আজও প্রাসঙ্গিক।

আমরা লক্ষ্য  করি বিসিএস – এ  এমবিএস পাশ করা ছাত্রকে কিভাবে কাস্টমস, বুয়েট থেকে পাশ করা প্রকৌশলীকে ম্যাজিষ্ট্রেট বানানো হয় ! রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য এখানেই তো ধরাশায়ী হয়। রাজনীতিকরা ক্ষমতায় বসে আর ছাড়তে চাননা। এসবই নেতিবাচক শিক্ষার ফসল। বর্তমানে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ই-গভর্স্যান্স  চালু করা হয়েছে। বাস্তবে সব উল্টো । আজ মিডিয়ার জগতে ফেসবুক-ইউটিউব জায়গা দখল করে ফেলায় প্রিন্ট মিডিয়া প্রায় মৃত্যুর কবলে ! অথচ প্রিন্ট মিডিয়ার জবাবদিহিতা ছিল । এখন ইউটিউব এ যা প্রচার হয় তা কতভাগ সত্য, তার জবাবদিহিতার বালাই নেই। বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি ছাড়া নেতিবাচক শিক্ষায় বলিয়ান অনেক  সাংবাদিক-অসাংবাদিক সব একাকার হয়ে তারা মিডিয়াকে পরিণত করতে চলেছে মিথ্যার সাম্রাজ্য। ফলে সততা ও নিষ্ঠার সাথে যারা কাজ করতে চায় তারাও আক্রমণের শিকার হয়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়ছেন। পক্ষান্তরে রাষ্ট্র ব্যবস্থার যে উন্নয়ন তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

নেতিবাচক শিক্ষা নিজে একটা শয়তানের মত ! বেহেস্ত ছাড়ার সময় ময়তান যতটা না ডিজিটাল ছিল, এখন তার চেয়ে কোটি কোটি গূণ ডিজিটাল । এমনি ভাবে বিংশ শতাব্দির থার্ড ইন্ডাসট্রিয়াল রিভোলিউশন এর ফলে মানবজাতির ইতিহাসে তথ্য যুগের সূচনা হয়।  বর্তমানে এটিকে আমরা ডেটা বাইনারি “ ০ এবং ১” এ সংরক্ষণ করছি।  পরবর্তী যুগ আগের তুলনায় ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে ক্ষুদ্রাকৃতির যা মানবতার নৈতিক ও শারীরিক অবস্থার পতনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এই পতনের শেষ দিন পর্যন্ত ডেভিলদের হাত ধরে নেতিবাচক শিক্ষা তত গতিশীল হচ্ছে।

ড. মোহাম্মদ ইউনুস তার থ্রি জিরো তত্তের মাধ্যমে বিশ্বজুরে আলোচনার ঝড় তোলেন। তিনি বলেছেন  Zero  Poverty, Zero Unemployment  and Zero Net Carbon Emission –এই তিন জিরো  দ্বারা লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তারুণ্য,প্রযুক্তি,সুশাসন ও সামাজিক ব্যবসা প্রয়োজন । বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর তার তত্তটি কতটা সফল হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। যদি ফেল করে তাহলে হয়তো সুশাসনের অভাবেই হবে।

নেট জগত মানুষের অনেক  ক্ষতি করছে । কারণ ক্ষমতার অপব্যবহার,লোভ এবং সুশাসনের অভাব। ‍  ‍যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে শুরু করে যা কিছু ঘটছে সব নেটের সাহায্যে। তাই বলে সব খারাপ হচ্ছে তা তো নয় ! অনেক রাষ্ট্র এগিয়ে গেছে । সেখানে সুশাসনও রয়েছে,নাগরিকের বেশির ভাগ দেশপেমিক। শাসকরাও স্মার্ট গভ: এর অংশ। তাদের সাথে আমাদের বিস্তর পার্থক্য তৈরি হয়েছে। এ সুযোগে তারাও যখন আমাদের উপনিবেশ করতে চায় তখন শুরু হয় খেলা। একদেশে নৈতিক, অন্য দেশে নেতিবাচক।

মানুষের জন্য যা কল্যাণকর, সুষ্টিকর্তা তাই দান করেছেন। ফলে পৃথিবীর মানুষের সুখ-শান্তিতে বসবাসের জন্য রয়েছে অবারিত সুযোগ। এজন্য মানুষের কল্যাণে কাজ করা প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ভালো শাসকের বিকল্প নেই। খারাপ রেওয়াজ থেকে আমাদের বের হতে হবে। পুর্বে সভ্রান্ত পরিবারের লোকেরাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান –মেম্বর হতেন। এখন কেন হয়না ? কারণ সমাজে তাদের অবস্থান ক্রমেই  বিলিন  হচ্ছে !  সমাজে যত নেতিবাচক শিক্ষা ,তার সব ভিত্তি কি তাহলে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে ?

গণতন্ত্রে দলীয় শাসন কিন্তু ক্ষমতায় বসে দলীয় মনোভাব ত্যাগ না করলে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়। পুর্বের সরকারের সময় লক্ষ্য করা যায়,দলীয় পরিচিত ব্যাতিরিকে চাকুরি হয়নি,ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি ন্যায় বিচার পায়নি,দু:স্থ মানুষ সাহায্য পায়নি ! ইসলামে হযরত ওমর (রা:)এর শাসন ছিল গণতন্ত্রের মডেল। তার কাছে শত্রু মিত্র সকলে সমান ভাবে ন্যায় বিচার পেয়েছেন। মানুষের সুখের জন্য দেশ শাসনে তারা ছিলেন অতুলনীয়। জেরেমী বেন্থামেএর মতে,একটি কাজ তখনই নৈতিকভাবে সঠিক বলে বিবেচিত হবে যখন তা সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের জন্য সর্বাধিক পরিমাণ সুখ তৈরি করে। বেন্থাম আনন্দ ও বেদনার পরিমাণ বিচার করার জন্য সাতটি বিষয়ের গুরুত্ব দিয়েছেন।…

রাষ্ট্রীয় জীবনে সুশাসনের জন্য ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের সাবেক মুখ্য মন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু ই-গভর্স্যান্সকে   SMART সরকার ব্যাবস্থা বলেছেন। শব্দটির পূর্ণরুপ হলো : S = Simple, M = Moral, A = Accountable, R = Responsive , T = Transparent,  চন্দ্রবাবুর কথায় সহজসরল,নৈতিক  আদর্শপূর্ণ ,জবাবদিহিতামূলক,দ্রুত সাড়াদানকারি ও স্বচ্ছতাপূর্ণ সরকার ব্যবস্থা হলো ইগভর্স্যান্স।

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবুল পাকির জয়নুল আবদিন আবুল কালাম বলেছেন, “ আমি এমন একটি দৃশ্যপট আশাকরছি,যেখানে একটি নির্দির্ষ্ট আসন থেকে একজন প্রার্থী তার মনোনয়ন ফাইল করবেন। তৎক্ষনাত তার আইডি ডাটাবেজ থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতা ,আয়কর,পুলিশ রেকর্ড ,ব্যাংক ঋণ,মামলা প্রভৃতি সম্পর্কীত তথ্য ইন্টারনেটের সাহায্যে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সয়ংক্রিয়ভাবে পৌঁছাবে। ভোটার বাড়িতেই থাকবেন এবং নিশ্চিন্তে অনলাইন পুলিং বুথের মাধ্যমে ভোট দিবেন। সরকার গঠন ও পরিবর্তনে এই ধরণের ব্যবস্থাকে স্মার্ট সরকার বলা যায়। আমেরিকা,ইংল্যান্ডে পরাজিত দল বিজয়ী দলকে অভিনন্দন জানায়। ভারতে এই রেওয়াজ আগে থাকলেও ইদানিং ভাটা পড়তে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে স্মার্ট সরকার প্রতিষ্ঠার আগে অভিনন্দন জানানোর রেওয়াজও  যদি চালু করা যেত, তাহলে রাজনীতিতে আশার আলো জ্বলে উঠতো । কিন্তু নেতিবাচক শিক্ষায় পারদর্শীরা সেটা পারবেন কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। তারপরও তথ্য বাতায়নের যুগে সুশাসনের জন্য স্মার্ট সরকারের বিকল্প নেই।।

::লেখক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও সাংবাদিক ::

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Smart iT Host