মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কামার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান বলেছেন, আমরা ব্যবসায়ী সংগঠন মনে করি, এনবিআর সবসময়ই ব্যবসাবান্ধব নীতি-তৈরির মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সহায়তা করে আসছে। বাংলাদেশের প্রকৃত অগ্রগতি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে মানবসম্পদ। এই মানুষকে সম্পদে রূপান্তর করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেশ কিছু সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেই সাথে বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রতিটি নাগরিকের অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অন্তর্র্বর্তী সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২৫-২০২৬ নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সাথে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতি, দেশের ব্যবসাখাতে প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, একটি সমর্থক কর কাঠামো তৈরি, পাশাপাশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট, রপ্তানি বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নীতিমালা তৈরিতে এনবিআর চেয়ারম্যান গুরুত্বপূর্ণ পালন করায় তাকে ধন্যবাদ জানান তিনি। সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় এমসিসিআই নেতারা বলেন, এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) অধিকাংশ সদস্যই এমসিসিআই এর সদস্য। যারা জাতীয় রাজস্বের প্রায় ৪০ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি অবদান রাখে। এমসিসিআই সবসময়ই করবান্ধব নীতি ও স্বয়ংক্রিয় করব্যবস্থা বাস্তবায়নে এনবিআরের সঙ্গে একযোগে কাজ করে আসছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দক্ষ নেতৃত্বে কর আদায়ের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা এবং কর বান্ধব নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি গতিশীল অর্থনীতির দিকে এগিয়ে চলছে ।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বাজেট প্রস্তাবনার মধ্যে সবসময়ই বিনিয়োগবান্ধব, প্রবৃদ্ধিমুখী ও স্বচ্ছ বাজেট ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। করদাতাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্প্রসারণেও ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য।
কামরান তানভীরুর রহমান তার লিখিত বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিগত অর্থবছরগুলোতে শর্তসাপেক্ষে কর্পোরেট কর হার ধারাবাহিকভাবে কমানো হলেও, অর্থ আইন-২০২৪ অনুযায়ী নগদ লেনদেনের শর্তাবলীর কারণে কেউই এই সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি ৮০শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক, যেখানে ব্যাংকিং নির্ভরতা সম্পূর্ণ নয়। ফলে বড় ও মাঝারি কোম্পানির জন্য এই শর্ত পালন করা অত্যন্ত কঠিন। এছাড়া, কার্যকরী কর হার অতিমাত্রায় উচ্চ, যা উৎসে কর কর্তন ও অননুমোদিত ব্যয়ের ফলে ক্ষেত্রবিশেষে ৪০-৫০শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কর্পোরেট করহার বাস্তবিক হারে কমানোর পাশাপাশি, অগ্রিম আয়কর ও টার্নওভার কর নীতির সংস্কার প্রয়োজন, যাতে কর আয়ভিত্তিক হয়, টার্নওভারের উপর নয়।
তিনি আরও বলেন, কর প্রশাসনের উন্নয়ন ও স্বয়ংক্রিয় ডিজিটালাইজেশন চালুর মাধ্যমে কর ফাঁকি কমানো এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধিও সুযোগ রয়েছে। তাই কোম্পানির কর হারের ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের শর্ত বাতিল এবং কর নীতি ও কর প্রশাসন পৃথক করার প্রস্তাব দেন তিনি। এছাড়া সামগ্রিক “কর ব্যবস্থাপনা”র ডিজিটালাইজেশন বা অনলাইনভিত্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সহজীকরণ করায় এনবিআরকে ধন্যবাদ জানিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের বিকাশের জন্য পৃথক কর হার নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেন তিনি। কারণ টার্নওভার কর হ্রাস করা হলে এসএমই ব্যবসায়ীরা করের আওতায় আসতে উৎসাহিত হবে। এ ছাড়া দেশীয় উৎপাদন খাতকে উৎসাহিত করতে কাঁচামালের উপর ভ্যাট ও শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দেয় এমসিসিআই।
সূত্র: বাসস