রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের পর দীর্ঘ ৩০ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আজ বুধবার সকাল থেকে সারাদেশে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। কর্মবিরতির কারণে মঙ্গলবার সারাদিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। তবে মধ্যরাতে বৈঠকের পর শ্রমিক ইউনিয়ন কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলে বুধবার ভোর থেকে আবারও ট্রেন চলতে শুরু করে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, আজ ভোর ৪টা ৪০ মিনিট থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আন্তনগর বলাকা, ধূমকেতু, সোনার বাংলা এবং জয়দেবপুর কমিউটার ট্রেনসহ কয়েকটি ট্রেন ছেড়ে গেছে। দেশের অন্যান্য স্টেশন থেকেও ট্রেন ছেড়ে গেছে এবং এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকেও সকাল ৬টা ১০ মিনিটে সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস, ৬টা ৫০ মিনিটে মধুমতি এক্সপ্রেস, ৭টা ৩৫ মিনিটে বনলতা এক্সপ্রেস ও ৭টা ৫০ মিনিটে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজার শহীদুল আলম। একইভাবে রংপুর, বগুড়া, সিলেটসহ অন্যান্য রেলস্টেশন থেকেও ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের বাসায় বৈঠকের পর বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। বৈঠক শেষে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেন, “উপদেষ্টা মহোদয় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত আমাদের দাবির সমাধান হবে। আমরা জনদুর্ভোগ চাই না, তাই কর্মবিরতি প্রত্যাহার করছি।”
রানিং স্টাফদের দাবি ছিল মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা নিশ্চিত করা। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সিদ্ধান্তের ফলে এই সুবিধা সীমিত করা হয়, যা শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। গত ২২ জানুয়ারি রানিং স্টাফ ইউনিয়ন তাদের দাবি মানার জন্য ২৭ জানুয়ারির সময়সীমা বেঁধে দেয় এবং ২৮ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়। এতে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এবং যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীরা বিক্ষোভ করেন এবং কিছু জায়গায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা স্টেশন মাস্টারদের অবরুদ্ধও করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিআরটিসি বাসের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ছিল।
আজ ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে মধ্যরাতে ধর্মঘট প্রত্যাহার হওয়ায় অনেক যাত্রী বিষয়টি জানতেন না, ফলে ভোরের ট্রেনগুলোতে কিছু আসন ফাঁকা ছিল। স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কিছু ট্রেন নির্ধারিত সময়সূচি থেকে সামান্য দেরিতে ছাড়লেও শিগগিরই সব ট্রেন পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী চলবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, শ্রমিকদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে এই কর্মবিরতি যে যাত্রীদের জন্য বিশাল দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে, তা বিবেচনায় রেখে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে সরকার ও শ্রমিকদের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র: এফএনএস