শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সর্বজনীন পেনশন স্কিম- ভাঙ্গুড়ায় ৪ মাসে একাউন্ট ওপেন হয়েছে মাত্র ১৪২ ভাঙ্গুড়ায় প্রাণি সম্পদ বিভাগের জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাপনী ঘটলো সেবা সপ্তাহের ভাঙ্গুড়ায় ৭ দিন ব্যাপি বই মেলা জমে উঠেছে উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ বন্ধে কঠোর নির্দেশনা : ওবায়দুল কাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় দিন ১৮ এপ্রিল। হোসেন আলী ভারতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ান আজ ভাঙ্গুড়ায় দুগ্ধজাত ক্ষুদ্র শিল্পের সফল উদ্যোক্তা কলেজ ছাত্র অপু ঘোষ ভাঙ্গুড়ায় নতুন ইউএনও’র যোগদান- জ্ঞানের নিষ্প্রভ বাতিঘর কি আবার আলোকিত হবে ? বুয়েটকে জঙ্গিবাদের আখড়া বানানো যাবে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাঙ্গুড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন গরুর হাট ! মাসে কেনাবেচা ৬ কোটি টাকা

সব হত্যাকাণ্ড একই সুতায় গাঁথা

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেটের সময় : বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১
  • ১০৪ সময় দর্শন
সব হত্যাকাণ্ড একই সুতায় গাঁথা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৈশোর থেকে চারিত্রিক দৃঢ়তার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। যে কেউ তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থ পড়লেই এ কথার সত্যাসত্য জানতে পারবেন। একজন অসামান্য ব্যক্তি হয়ে ওঠার নজির ওই সময় থেকেই তার মধ্যে দেখতে পাওয়া গেছে। কলকাতার শিক্ষাজীবন নানা কৌণিকে তার নেতৃত্বের মেধাকে ঋদ্ধ করে। বিশেষ করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে থেকে যথার্থ অর্থে নেতা হওয়ার প্রাসঙ্গিক গুণাবলি অর্জন করতে থাকেন। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী তার ওই তরুণ কর্মীর তেজস্বিতা, নির্ভীকতায় মুগ্ধ হয়ে একান্ত কাছে টেনে নেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ও পরবর্তী ঘটনাবলি গভীর অভিনিবেশসহ পাঠ করলে দেখা যায়- একজন বিশেষ ব্যক্তির পরশ্রীকাতরতা, হীনম্মন্যতা ও হিংস্র মনোবৃত্তিই বাংলাদেশের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করে তোলে। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঘটনাই বলি আর ৩ নভেম্বরের জেল হত্যার কথাই বলি- এ যেন এক সূত্রে গাঁথা। ইতিহাসের এক ঘৃণিত নায়ক হিসেবে উল্লিখিত হয়ে আছেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দোসর ও সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমদ। তার ঈর্ষাকাতরতার ফল বাংলাদেশের ইতিহাসে কালো অধ্যায়ের সূচনা করে।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত বিষয়টি আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৪৮-৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। দলের সভাপতি হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের যুবনেতা শামসুল হক। যুগ্ম সম্পাদক হন যথাক্রমে শেখ মুজিব ও খন্দকার মোশতাক আহমদ। পরবর্তী সময়ে মওলানা ভাসানী তখন দলের নেতৃত্বের প্রয়োজনে দক্ষ মনে করায় দুজন যুগ্ম সম্পাদকের মধ্য থেকে শেখ মুজিবকেই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দান করেন। শেখ মুজিবকে দলের সাধারণ সম্পাদক করার পেছনে মওলানা ভাসানীর যুক্তি ছিল- তিনি যথার্থই ওই পদে যাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। কারণ দিনাজপুর ও রাজশাহীতে ছাত্র বিক্ষোভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ কর্মচারীদের ধর্মঘট এবং ১৯৪৮ সালের প্রথম ভাষা আন্দোলনে বারবার কারাবরণ করে যে সাংগঠনিক দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন- এতে সাধারণ সম্পাদক পদের যথার্থ যোগ্য ব্যক্তি তো শেখ মুজিবই, অন কেউ নন।

শেখ মুজিব দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় খন্দকার মোশতাক মনঃক্ষুণœ হন। শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। অন্যদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রায় একরূপ নিশ্চুপই থাকেন খন্দকার মোশতাক। ক্রমান্বয়ে তিনি আওয়ামী রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান। তার এই মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৫৪ সালে। বস্তুতপক্ষে ক্ষমতালাভের প্রত্যাশায় তিনি এ সময় আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে ‘কৃষক শ্রমিক পার্টি’তে যোগদান করেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি ‘কৃষক শ্রমিক পার্টি’র চিফ হুইপ হয়ে মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভার পতন ঘটান। দশ বছর পর ১৯৬৪ সালে খন্দকার মোশতাক ভুল স্বীকার করে পুনরায় আওয়ামী লীগে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু অতিবড় মনের মানুষ শেখ মুজিব তাকে ক্ষমা করে দলে ফিরিয়ে নেন।

একটি কথা এখানে উল্লেখ করতে হয় যে, ১৯৫৭ সালে ‘ন্যাপ’ গঠন করে মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি হন শেখ মুজিব। সাধারণ সম্পাদক এবং সহ-সভাপতি হন যথাক্রমে তাজউদ্দীন আহমদ ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গ থেকে আওয়ামী নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হন এম মনসুর আলী, এএইচএম কামারুজ্জামান ও অধ্যাপক ইউসুফ আলী।

শেখ মুজিব শুধু খন্দকার মোশতাককেই নয়- অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম খান, জহীরুদ্দীন ও শাহ আজিজুর রহমানকেও পার্টিতে যোগদানের সুযোগ দেন। দক্ষিণপন্থি নেতাদের দলে অনুপ্রবেশ যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা শেখ মুজিব বুঝতে পারেননি। তিনি সরল মনে তাদের দলে ঢোকার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এই তিন অনুপ্রবেশকারী কী ক্ষতি করেছে, তা কারও অজানা নয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় জহীরুদ্দীন পাকিস্তানের সামরিক সরকারের দালালি করায় বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পুরস্কৃত হন রাষ্ট্রদূত হয়ে। আর মোশতাক স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সুহৃদদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। ফলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা- এবং এরই অনুবৃত্তিক্রমে ৩ নভেম্বর জেলখানায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানের নির্মম হত্যাকাণ্ড।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক তার সব রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সরিয়ে ফেলার লক্ষ্যে আরও কিছু ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রতিপক্ষ বলতে ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। মোশতাক চিন্তা করেন, তাদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবেই। কালবিলম্ব না করে তিনি আওয়ামী লীগের চার প্রধান নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলেন। জনরোষ যেন তার ওপর না পড়ে, এ জন্য তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলীকে বঙ্গভবনে ডেকে পাঠান। জনগণকে ধোকা দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি হাস্যোজ্জ্বলভাবে করমর্দন করে মনসুর আলীকে বঙ্গভবনে অভ্যর্থনা জানান। আদতে এটি ছিল নাটক। বাস্তব ঘটনা হলো, টেলিভিশনে এ ছবি দেখানোর পরই মনসুর আলীকে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ভাগ্যের একই পরিণতি ঘটে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও এএইচএম কামারুজ্জামানের। বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র দুই মাস পরই এ জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা হরা হয় বঙ্গবন্ধুর ওই ঘনিষ্ঠ চার সুহৃদকে।

’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ও ’৭৫-এর ৩ নভেম্বর হত্যাকা-গুলো একই সুতায় গাঁথা। বয়ঃকনিষ্ঠ শেখ মুজিবের নেতৃত্ব গ্রহণই উচ্চাভিলাষী খন্দকার মোশতাকের ঈর্ষার কারণ হয়েছিল। হত্যাকা-গুলো যে তারই কারণে সংঘটিত হয়েছিল, তা আজ জাতির কাছে অত্যন্ত স্পষ্ট।

ড. সাইফুদ্দীন চৌধুরী : অধ্যাপক ও ডিন, রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নাটোর

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন - রায়তা-হোস্ট সহযোগিতায় : SmartiTHost
smartit-ddnnewsbd