রবিবার , ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ভাঙ্গুড়া পৌরসভা নির্বাচনে ভোটাররা উৎফুল্ল ছিল ! তবে বিজয়ী-বিজিতরা অনেকটাই কাতর !

প্রকাশিত হয়েছে- রবিবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২১

বিশেষ প্রতিবেদক : গত ১৬ জানুয়ারি পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নানা কারণেই এবারের নির্বাচন অনেকটা ব্যতিক্রম ছিল। মেয়র বিহীন নির্বাচনে প্রথমে ভোটাররা সন্তোষ্ট ছিলেন না কিন্তু পরে তা জমে ওঠে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল উৎসাহ ব্যান্জক। ওই দিন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে নয়টি কেন্দ্রেই ভোটারদের উৎফুল্লতার দৃশ্য চোখে পড়ে।
পৌরসভার নির্বাচন মূলত মেয়রকে কেন্দ্র করেই অনুষ্ঠিত হয়। এখানে বর্তমান মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ায় কাউন্সিলর প্রার্থীরা অনেকটাই হতাশ ছিলেন। অনেকেই ভেবেছিলেন মেয়র প্রার্থীরা খরচ করবেন আর তাদের সমর্থনে অনুগত প্রার্থীরা নির্বাচন করে বের হয়ে যাবেন। কিন্তু সেটা এবার এখানে সম্ভব হয়নি। তাই কাউন্সিলর প্রার্থীদের রেকড পরিমান অর্থ খরচ হয়েছে বলে গ্ঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

রবিবার সারাদিনই এলাকার মানুষের মুখে এসব আলোচনা শোনা যায়। এক নম্বর ওয়ার্ডে দু’জন হেভি ওয়েটের কাউন্সিলর প্রার্থী যারা দু’জনেই টাকা ওয়ালা এবং একজন বর্তমান কাউন্সিলর,অপরজন পুর্বে কাউন্সিলর ছিলেন। তারা দু’জনেই একজন জুনিয়র ছেলের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন। এই ওয়ার্ডে তিনজন কাউন্সিলর নাকি ৭০ লাখ টাকা খরচ করেছেন।

নয় নম্বর ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলর প্রার্থী নাকি খাদ্যের প্রতি প্যাকেটে পাঁচ’শ টাকার নোট বিতরণ করেছেন। সরকারি ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে তিনজন কাউন্সিলর প্রার্থী একত্রে অন্য একজন কাউন্সিলর পার্থীর বিরুদ্ধে হুমকি,ধামকি ও জোরপুর্বক ভোট গ্রহনের আশংকা করে রিটার্নিং অফিসারের নিকট আবেদন জানিয়েছিলেন। ভোটের দিন একজন প্রার্থী ব্যালট গননার সময়ও আতংকিত ছিলেন। পরে দেখা গেল যাকে নিয়ে এত শঙকা তার কোনো খবর নেই। অহেতুক আশংকায় কিছুদিন ঘুম হারাম হয়েছিল তাদের। অবশ্য রিটার্নিং অফিসার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেওয়ায় এই কেন্দ্রে আরো সতর্ক নজর রাখেন আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।

সাত নম্বর ওয়ার্ডে একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে হারানোর জন্য হেভি ওয়েটের দুই রাজনীতিক দৌড়ঝাঁপ দিয়েও লাভ হয়নি। আট নম্বর ওয়ার্ডে বর্ধিঞ্চু এক রাজনীতিক দলীয় প্রার্থীকে বিট্রে করায় প্রথমে ধোঁয়াশা তৈরি হলেও প্রার্থীর সাথে ভোটারদের বন্ধন ছিল খুবই মজবুত। এছাড়া এই প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা ও মিছিলগুলো ছিল দর্শনীয়। তাই তার বিজয় হয়।

নারী কাউন্সিলগণের মধ্যেও ছিল ব্যাপক প্রতিদ্বন্দিতা। ‘সাত-আট-নয়’ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে রাফি’র চশমার পাওয়ার অনেক বেশি ছিল । যারাই বাঁকা চোখে ওদিকে নজর দেওয়ার চেষ্টা করেছে তারাই ফেঁসে গেছে। শেষে বিজয়ের মালায় বরিত হলেন রাফি।
তবে বিজয়ী-বিজিত কারো মুখেই কেমন যেন হাসি নেই কারণ প্রত্যেক পার্থী এবার নির্বাচনে জেতার আশায় অঢেল টাকা ছড়িয়েছেন বলে লোকে মুখে শোনা যাচ্ছে। নির্বাচকালিন সময়ে প্রতিদিন মাংশ খিচুরি,স্টলে স্টলে চা-পান। এছাড়া বিড়ি- সিগারেট ফ্রি ! পরিবারের যত সমস্যা সবকিছু সমাধানে প্রার্থীরা ছিলেন যেন সোচ্চার ! তাই গাঁটের টাকা খসে যাওয়ায় অনেক বিজয়ী প্রাথীরাও কাতর হয়ে পড়েছেন। দু’একজন ছাড়া যারা হেরেছেন তাদের তো কথাই নেই।

অবশ্য এক শ্রেণির ভোটারদের মনও ভালো নেই। নির্বাচনে তারা কিছুদিন বুঁদ হয়েছিলেন। ওই আদর আর তারা এখন পাচ্ছেন না ! পার্থীদের অনেকে ওই সব ভোটচারদের প্রতিও বিরক্ত ! তার পরও গণতন্ত্রের এই চর্চায় ভোটারদের মধ্যে চেতা জাগ্রত হয়েছে। এছাড়া জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও তারা সঠিক সিন্ধান্ত নিতে ভুল করেননি।

১০৩ বছরের বৃদ্ধা ভাঙ্গুড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নিজের ভোট প্রদান করেন।

পৌরবাসী রিটার্নিং অফিসারের কার্যক্রমেও খুশি। এবারের অবাধ,নিরপেক্ষ ও শান্তিপুর্ণ ভোট অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে কোনো ত্রুটি ছিল না। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের ভোটাররা ¯সবতস্ফুর্ত ভাবে ভোটদান করেছেন।
পৌরবাসীর আশা নবনির্বাচিত পরিষদ মেয়রের নেতৃত্বে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ একটি আধুনিক পৌশহর বিনির্মাণে অগ্রণি ভুমিকা রাখবেন।

নব- নির্বাচিত পৌরপরিষদ :

গোলাম হাসনাইন রাসেল (মেয়র)

মোঃ ইব্রাহীম হোসেন ইমরান (কাউন্সিলর)
মোঃ শহিদুল ইসলাম
বরাত আলি
আলহাজ্ব ফরিদ আহমেদ
মোঃ জহুরুল ইসলাম
মোঃ রফিকুল ইসলাম
মোঃ মোজাম্মেল হক বিশু
 সুলতান আহম্মদ
সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর :
 মোছাঃ রাজিয়া খাতুন (১,২,৩ নং ওয়ার্ড)
মোছাঃ ছালমা খাতুন (৪,৫,৬ নং ওয়ার্ড)
মোছাঃ রাবেয়া খাতুন রাফি( ৭,৮,৯ ওয়ার্ড)