রবিবার , ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

জামালপুরে মানবাধিকার ভুয়া সংস্থার সহকারী পরিচালক কাউছার গ্রেপ্তার

প্রকাশিত হয়েছে- সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২০

জামালপুরে কাউছার আহাম্মেদ (৪৬) নামে মানবাধিকার সংস্থার ভুয়া এক সহকারী পরিচালককে গ্রেপ্তার করেছে সদর থানা পুলিশ। ১৯ ডিসেম্বর রাতে শহরের আবেদন চক মার্কেটে তার স্টুডিও থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাসা ভাড়া নেয়ার কথা বলে জামালপুর শহরের পশ্চিম কাচারিপাড়া এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত একজন ব্যাংক কর্মকর্তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অভিনব কায়দায় নগদ ৭৬ হাজার টাকা, তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও এক লাখ টাকা লিখে স্বাক্ষরসহ তিনটি চেক হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ২০ ডিসেম্বর বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়েরের পর কাউছারকে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার কাউছার আহাম্মেদ জামালপুর পৌরসভার মাইনপুর এলাকার মৃত আইন উদ্দিনের ছেলে। তিনি নিজেকে কখনো (ভুয়া) সাংবাদিক, কখনো ডিবি পুলিশ অফিসার ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কর্মকর্তার পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে জামালপুর শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বাসাবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে অবৈধভাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় কাউছার ১৮ ডিসেম্বর জুমার নামাজের সময় জামালপুর শহরের পশ্চিম কাছারিপাড়ায় বাসা ভাড়া নেয়ার কথা বলে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল আজিজের বাসায় হানা দেন। সঙ্গে নিয়ে যান অজ্ঞাত পরিচয়ের বিভিন্ন বয়সের আরও দুই নারী ও দুই পুরুষকে।

ঘটনার সময় কাউছার নিজেকে মানবাধিকার সংস্থার জামালপুরের সহকারী পরিচালক পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেয়ার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল আজিজের সাথে কথাবার্তা বলেন। এ সময় ওই ব্যাংক কর্মকর্তার স্বজনরা কেউ বাসায় ছিলেন না। কথাবার্তার একপর্যায়ে কাউছার ঘরের দরজা বন্ধ করে তার সাথে থাকা এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে আব্দুল আজিজকে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখান। একপর্যায়ে কাউছার ও তার সহযোগী নারীরা বাসার আলমিরা থেকে নগদ ৭৬ হাজার টাকা, তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও এক লাখ টাকা লিখে স্বাক্ষরসহ তিনটি চেক হাতিয়ে নেন। যাওয়ার সময় তারা এ ঘটনা কাউকে না বলার জন্য হুমকি দিয়ে যান।

এদিকে ভুক্তভোগী ওই ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ এ ঘটনায় ১৯ ডিসেম্বর জামালপুর সদর থানায় অভিযোগ করেন। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৯ ডিসেম্বর রাতেই মানবাধিকার সংস্থার ভুয়া সহকারী পরিচালক পরিচয়দাতা কাউছারকে শহরের আবেদনচক মার্কেটে তার নিজের স্টুডিও থেকে গ্রেপ্তার করেছে সদর থানা পুলিশ। ভুক্তভোগী আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে কাউছার ও তার সহযোগীদের আসামি করে ২০ ডিসেম্বর বিশেষ ক্ষমতা আইনে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। কাউছারকে গ্রেপ্তারের সময় আব্দুল আজিজ স্বাক্ষরিত তিনটি চেকের পাতা পুলিশ উদ্ধার করেছে। তবে বাসা থেকে লুট করে নেয়া নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারগুলো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

ভুক্তভোগী ওই ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি কাউছার ও তার সাথে থাকা নারী ও অন্যান্যদের চিনি না। বাসাভাড়া নেয়ার কথা বলে কাউছার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও তিনটি চেকের পাতা স্বাক্ষর নিয়ে কাউকে না বলার হুমকি দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত কাউছার ও অন্যান্যদের উপযুক্ত বিচার চাই।

জামালপুর সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাবিবুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতারক কাউছারকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনের দায়ের করা মামলাটির অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার এবং নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।