শুক্রবার , ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৮ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

মাস্কেই করোনা থেকে সুরক্ষা মিলবে ! বিজ্ঞানীদের ঠিক উল্টোটি ভাবছেন মানুষ !

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

বিশেষ প্রতিবেদক : করোনা নিয়ে বিজ্ঞানীদের ঠিক উল্টোটি ভাবছেন সাধারণ মানুষ ! তারা মাস্ক পরে না,স্বাস্থ্য বিধিও মানছে না ! প্রশাসন,জনপ্রতিনিধি কিংবা চিকিৎসক কারো কথাই তারা শুনতে চাইছেন না। এ কারণে সচেতন মহলেরও অনেকে এখন মাস্ক পড়া শিথিল করেছেন।

উপজেলা শহরের ধর্মীয়-উপাসনালয়ে তো আগেই ৯৭ ভাগ লোক মাস্ক পড়া বন্ধ করে দিয়েছে। জুমআ’র নামাজে ইমাম সাহেবরাই বলেন,কাতার পুরো করে দাঁড়ান। ফলে একজন মুসল্লি থেকে আরেক জনের দুরত্ব ২ ইঞ্চিও থাকে না। করোনা প্রসঙ্গে হাদিস ও কোরআন এর কোনো রেফারেন্সই তারা শুনছেন না। এ অবস্থায় আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে দ্বিতীয় দফায় আক্রান্তের যে আশংকা রয়েছে তার ফলাফল ভয়ানক হতে পারে সে তোয়াক্কাই কেউ করছেন না। ফলে শীত সময়ে করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ রুপ নিতে পারে ।

হাট-বাজার,সামাজিক অনুষ্ঠান এবং মসজিদ-মন্দির ছাড়া বাইরের মানুষ এক অপরের নিকট আসার সুযোগ খুব একটা নেই। অন্তত: এ সকল স্থানে মাস্ক পরা অতি আবশ্যক। সামাজিক দুরত্বটাও এখানেই বজায় রাখতে হবে। যারা শহর এলাকায় বসবাস করেন তারাই কেবল এখনো কিছুটা নিয়ম মানছেন। তবে গ্রামের মানুষ শতভাগ অনিয়ম করছেন।
এ কথা ঠিক যে গ্রামে করোনা নাই কিন্তু গ্রামের মানুষ যারা শহরে যাচ্ছেন কিংবা শহর থেকে গ্রামে আসছেন! তাদের থেকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা এবং নিকটবর্তী ঊভয়ের জন্য মাস্ক পরা জরুরি ।

সাধারণ মানুষের ভাষ্য, জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে কিন্তু মহামারী ভাইরাস সম্পর্কে মহানবী (সা:)এর নির্দেশনা তারা অনুসরণ করতে চায়না। আল্লাহ পাক অবশ্যই জীবন-মৃত্যুর মালিক। সেই সঙ্গে সচেতনতা,পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রোগ-বালাই থেকে বাঁচার নিয়ম মানার বাধ্যবাধকতাও ইসলামে রয়েছে।

মহামারি প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এটি আল্লাহর গজব বা শাস্তি, বনি ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার বাকি অংশই হচ্ছে মহামারি। অতএব, কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস : ১০৬৫)

‘হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশে বা অঞ্চলে যদি কোনে প্রকার প্লেগ বা মহামারি জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেক্ষেত্রে তোমরা যারা (ওই অঞ্চলের) বাহিরে আছ তারা ওই শহরে প্রবেশ করো না। আর যে শহরে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে তোমরা যদি সে শহরে বসবাস করো তবে তোমরা সে অঞ্চল বা শহর থেকে বাহির হয়ো না।’ (বুখারি, মুসলিম)

সুতরাং যদি কেউ এ নিয়ম অমান্য করে অন্য এলাকায় চলে যান বা আসেন সেক্ষেত্রে তার থেকে দুরে অবস্থানের নামই হলো সামাজিক দুরত্ব। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি যাতে নিকটতম কাউকে সংক্রমিত করতে না পারে সেজন্য এ ব্যবস্থা। এ কারণে ধর্মীও প্রতিষ্ঠানসহ সর্বক্ষেত্রে সামাজিক দুরত্ব মানার বাধ্যবাধকতা।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অণুজীববিজ্ঞানী এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন কিট আবিষ্কারক দলের প্রধান বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল বলেছেন,মাস্ক হচ্ছে করোনা থেকে বাঁচার অত্যাবশ্যক ঢাল।


তিনি একটি অনলাইন নিউজকে স্বাক্ষাতকার দেওয়ার সময় বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতাটা হয়তো আপনাদের জানা। তারপরও কবিতাটা একটু বলি সংক্ষেপে-‘গোবু রায়কে রাজা বললেন, মাটিতে পা ফেলামাত্র তার পায়ে ধুলা লাগে। পায়ে যেন ধুলা না লাগে সেই ব্যবস্থা করতে। রাজা তার সিদ্ধান্তে স্থির থাকায় গোবু রায় ভারী দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। মন্ত্রী/পন্ডিতদের নিয়ে সভা করেন। সিদ্ধান্ত হয়, ঝাড়ু দিয়ে দুনিয়া থেকে সব ধুলা সরিয়ে দেবেন। ঝাড়ু দিতে গিয়ে রাজার শরীরও ধুলায় ঢেকে যায়। পুরো রাজ্য ধুলাময় হয়ে যায়। রাজ্য সর্দি-জ্বরে ভরে যায়। ফলে ধুলা সরাতে পানি ঢাললে পুরো রাজ্য কাদাময় হয়ে যায়। গোবুর চিন্তা আরও বেড়ে যায়।”

“জ্ঞানীগুণীরা এবার পরামর্শ দেন, মহী মাদুর দিয়ে রাজপ্রাসাধ ঢেকে দেয়ার। কোনো ছিদ্র যেন না থাকে। তারপর রাজা ঘরে থাকলে ধুলা লাগার কোনো সুযোগ থাকবে না। কিন্তু রাজা বললেন, তিনি বাইরে না বের হলে রাজ্য চলবে কীভাবে? তাই এ প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। মন্ত্রী/পন্ডিতদের এবার প্রস্তাব, চামড়া দিয়ে পৃথিবীর সব মাটি ঢেকে ফেলবেন। এতে আর ধুলাও থাকবে না, রাজার পায়ে ধুলা লাগবেও না। কিন্তু এত যোগ্য চামার ও চামড়া তো জুটে না। তখন চামারদের কুলপতি ঈষৎ হেসে বললেন, পুরো পৃথিবী না ঢেকে চামড়া দিয়ে পা ঢেকে দিলেই তো হয়। তাহলেই তো রাজার পায়ে আর ধুলা লাগবে না।”

অণুজীববিজ্ঞানী ড. বিজন বলেন, ‘কিছু কিছু সময় সমস্যার সমাধান অনেক জ্ঞানী/গুণী/পন্ডিরাও দিতে পারেন না। (আর) চামারের মতো সমাজের অতি সাধারণ মানুষও অনেক বড় সমস্যার সমাধান অতি সহজে দিতে পারেন।’
‘এবার বলি কেন এ কবিতার কথা বললাম। চামড়া দিয়ে পুরো পৃথিবী না ঢেকে শুধু পা ঢাকলে যেমন ধুলা থেকে রেহাই পাওয়া যায়, তেমনি করোনাভাইরাস পুরো পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে যাওয়ায় এখন এটাকে আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাই মুখ যদি মাস্ক দিয়ে ঢেকে ফেলা যায়, তাহলে করোনা থেকে মানুষ সহজেই মুক্তি পাবে। এজন্য সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা উচিত। সবাইকে মাস্ক পরতে আরও উদ্বুদ্ধ করতে হবে।’

করোনার এই ক্রান্তিকালে মাস্ক পরার গুরুত্ব নিয়ে ড. বিজন কুমার শীল আরও বলেন, ‘মাস্ক পরানোর বিষয়গুলো মানুষকে ভালোভাবে বোঝানো উচিত। প্রয়োজনে আইনও প্রয়োগ করা যেতে পারে। শারীরিকভাবে হেনস্তা না করে জরিমানার ব্যবস্থা করতে পারে সরকার। এসব করলে মাস্ক পরা অনেকটাই নিশ্চিত করা যাবে। ফলে করোনা থেকে সুরক্ষাও মিলবে।’

তাই প্রশানকেই উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সঙ্গে ধর্মীয় বিষয়ে জ্ঞানী ইমাম ও পন্ডিতদের নিয়ে মতবিনিময় অব্যাহত রাখা এবং তদানুযায়ী পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।