রবিবার , ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ভাঙ্গুড়া হিসাবরক্ষণ অফিসে আ’লীগ নেতা অডিটর! তাই ঘুষ ছাড়া কারো ফাইল নড়েনা

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ২০ জুলাই, ২০২২

ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি:

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা হিসারক্ষণ অফিসের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি বিল,অফিসারদের টিএডিএ,অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন সুবিধা প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই অফিসে টাকা ছাড়া কোন কাজ হয়না। এই অফিসের একজন অডিটর আ’লীগ নেতা হওয়ায় তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেননা। ওই অডিটরের নাম মো: ইউনুছ আলী। তিনি পাবনার চাটমোহর উপজেলার বাসিন্দা এবং গুণাইগাছা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। গুণাইগাছা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো: নুরুল ইসলাম এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি মোক্তার হোসেন অডিটর ইউনুছ আলীর দলীয় পদবীর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

জানাগেছে,অডিটর ইউনুছ আলী আবেদিত সকল ফাইল প্রস্তুত করে হিসাব রক্ষণ অফিসারের কাছে পাঠান। এর আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওই অডিটরের সাথে একটি ড্রিল করতে হয়। অফিসিয়াল কাজের ক্ষেত্র বিশেষে আবেদিত বিলের ৫% থেকে ১০% পর্যন্ত ঘুষ দেওয়ার শর্তে ওই অডিটর ফাইলে হাত দেন।

পৌরসভার মাষ্টারপাড়া মহল্লার বাসিন্দা ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (অব:) আব্দুস সালাম জানান,অবসর ভাতা,গ্রাচ্যুয়িটি,প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পাওয়ার জন্য অনেক হয়রান হবার পর বাধ্য হয়ে ওই অডিটর ইউনুছ আলীর দাবি অনুযায়ী তাকে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার পর তিনি তার কাজ করে দিয়েছেন। তারপর তিনি অবসর সুবিধা পান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন,হিসাব রক্ষণ অফিসের ইউনুছ আলী সাংঘাতিক বেপরোয়া। তিনি টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেননা। তিনি কাউকে ভয়ও পাননা। কারণ তিনি আওয়ামীলীগের ইউনিয়ন কমিটির সেক্রেটারী এবং বিগত ১৩ বছর ধরে এই পদে রয়েছেন। তাকে মোটা অংকের টাকা দেওয়ার পর তার অবসর ভাতার কাজ করে দেন বলে তিনি জানান।

সরকারি কর্মকর্তারাও তার দাপট থেকে রেহাই পাচ্ছেননা। উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের জনসুমারী কর্মীদের ভাতা উত্তোলন,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিল,উপজেলা শিক্ষা অফিসের বিল,নির্বাচ অফিসারের বিল প্রভৃতি ক্ষেত্রে ওই অডিটর ৫% উৎকোচ নেওয়ার পর তাদের ফাইলের কাজ করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। তার দলীয় পদ-পদবী থাকার দাপটের কারণে তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে ইউনুছ আলীর বক্তব্য জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,নিয়ম অনুযায়ী ফাইল চেক করলে অনেক বিল কমে যায়। কিন্তু সংশিল্ট ব্যক্তিরা পুরোবিল দাবি করেন। এই নিয়ে অনেক অফিস প্রধানের সাথে তার বিরোধ হয়। ফলে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয় বলে তিনি দাবি করেন।

একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে রাজনৈতিক দলের পদবী গ্রহনের ব্যাপারে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন,“আমি পদে ছিলাম তবে এখন নেই”। অথচ বুধবার(২০ জুলাই)বিকালে এই রিপোর্ট লেখার সময় চাটমোহর উপজেলার গুণাইগাছা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সি:সহ-সভাপতি দুজনই বলেছেন যে,অডিটর ইউনুছ আলী এখনো তাদের দলীয় সেক্রেটারী।

উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো: আজিজুল ইসলাম বলেন,অডিটরদের বিরুদ্ধে অনেকেরই অভিযোগ থাকতে পারে তবে কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে তা উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর অগ্রায়ন করা হবে। অডিটর ইউনুছ আলীর দলীয় পদবীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তার রাজনৈতিক দলের পদবী গ্রহন সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধির সম্পর্ণ পরিপন্থী। তাই এর দালিলিক প্রমাণাদি কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করা হলে তার উপর বিভাগীয় শাস্তি বর্তাবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন,“আমি ওই অডিটরের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ শুনেছি। কেউ তা অভিযোগ আকারে দাখিল করলে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উহা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হবে”।

প্রশ্ন হলো,একজন সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধি লংঘন করে কিভাবে  সরাসরি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন এবং পদ-পদবী গ্রহন করেন তা কারো বোধগম্য নয়। এছাড়া বিষয়টি জেনেও সংশিল্ট বিভাগ এতদিনেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে অবৈধ ভাবে টাকা রোজগারের পথ করে দিয়েছে !  এখনও কি তাদের কুম্ভ কর্ণের ঘুম ভাঙবে ?

্এদিকে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দাপ্তরিক প্রধানগণ ও অবসরে যাওয়া শিক্ষক,কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবিলম্বে ওই অডিটরের অপসারণ দাবি করেছেন।