শনিবার , ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

আফগানিস্তানে চালু হচ্ছে অঙ্গচ্ছেদ-মৃত্যু দণ্ডের ন্যায় কঠোর শাস্তি

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
আফগানিস্তানে চালু হচ্ছে অঙ্গচ্ছেদ-মৃত্যু দণ্ডের ন্যায় কঠোর শাস্তি

অনলাইন ডেস্ক
তালেবান নিজেদের শাসনামলে প্রথমবার যেসব কঠোর শাস্তির প্রচলন করেছিল, দ্বিতীয় মেয়াদে শাসন ক্ষমতা দখলের পর আবারও অঙ্গচ্ছেদ, মাথায় গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মতো সেসব কঠোর শাস্তির প্রচলন করতে যাচ্ছে তারা।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বার্তাসংস্থা এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছেন সাবেক তালেবান সরকারের বিচার ও ধর্মীয় পুলিশ বিষয়ক মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন তালেবান বাহিনীর অন্যতম শীর্ষ নেতা মোল্লা নূরুদ্দিন তুরাবি।

মোল্লা নূরুদ্দিন তুরাবি।সংগৃহীত ছবি

সাক্ষাৎকারে মোল্লা তুরাবি বলেন, ‘আগে আমরা যখন স্টেডিয়ামে শাস্তি (অঙ্গছেদন) বা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতাম তখন বাইরের বিভিন্ন দেশ আমাদের আইন ও দণ্ডবিধির সমালোচনা করেছে। আমরা কিন্তু কখনও তাদের আইন ও দণ্ডবিধি নিয়ে কোনো কথা বলিনি। আমাদের আইন ও দণ্ডবিধি কেমন হবে, তা অন্য কাউকে শিখিয়ে দিতে হবে না। আমরা ইসলামকে অনুসরণ করব এবং আমাদের আইন হবে কোরআনভিত্তিক।’

গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলের পর থেকেই বিশ্ববাসী ও দেশটির সাধারণ জনগণ উৎকণ্ঠায় ছিলেন আফগানিস্তানে ফের সেসব কঠোর নীতি ফিরে আসবে কি না, যেসব কার্যকর ছিল ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত।

ওই সময় চুরির অপরাধে স্টেডিয়াম বা ঈদগাহ ময়দানের মতো কোনো খোলা স্থানে শত শত মানুষের সামনে অপরাধীর হাত কেটে ফেলা হতো। ডাকাতির অপরাধে কেউ অপরাধী সাব্যস্ত হলে প্রকাশ্যে কেটে ফেলা হতো তার একটি হাত এবং একটি পা। এ ছাড়া বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপনের শাস্তি হিসেবে ১০০ বেত্রাঘাত করা হতো।

তালেবানের প্রথম শাসনামলে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপনের শাস্তি।সংগৃহীত ছবি 

 

এ ছাড়া কারো বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রকাশ্যে তার মাথায় গুলি করে হত্যা করা হতো এবং সেই গুলির খরচবাবদ অর্থ দিতে হতো অপরাধীর পরিবারের সদস্যদের। অবশ্য এক্ষেত্রে অপরাধীর পরিবার যদি নিহতদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ বা ‘রক্তপণ’ দিতে সম্মত হতো সেক্ষেত্রে সেই অপরাধীর মুক্তি পাওয়ার সুযোগ ছিল।

সেসময় অধিকাংশ বিচার প্রক্রিয়া চলত গোপনে, রুদ্ধদ্বার কক্ষে। বিচারকাজ পরিচালনা করতেন তালেবান ইসলামি পণ্ডিতরা। এই পণ্ডিতদের বেশিরভাগের জ্ঞান অবশ্য ধর্মীয় শরিয়া বিধির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে তারা বিশেষ কিছু জানতেন না।

এপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তুরাবি বলেন, তালেবানদের বর্তমান শাসনামলেও আগের পদ্ধতিই অনুসরণ করা হবে। তবে এক্ষেত্রে কিছু সংশোধনের ব্যাপারে চিন্তা করছে তালেবান। যেমন- আগে বিচারকরা ছিলেন সবাই পুরুষ। চলতি শাসনামলে নারীদেরও এই পদে কাজ করার সুযোগ থাকবে।

এপির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তুরাবি স্বীকার করেন, আফগানিস্তানের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের মধ্যে তালেবান নীতি নিয়ে উদ্বেগ কাজ করছে। তবে কঠোর শাস্তি প্রচলনের পক্ষে যুক্তিও তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, আমাদের কিছু নীতি নিয়ে বিশ্ববাসীর মধ্যে উদ্বেগ কাজ করছে, যেমন অপরাধীদের হাত-পা কেটে ফেলার ব্যাপারটি। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে এটি প্রয়োজন এবং আফগানিস্তানের সাধারণ জনগণের দাবি।’

সাক্ষাৎকারে অঙ্গচ্ছেদকে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করেন মোল্লা তুরাবি।সংগৃহীত ছবি

 

এ বিষয়ে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘মনে করুন, আপনি যদি কোনো অপরাধের শাস্তি হিসেবে কোনো ব্যক্তির হাত কাটেন, সেক্ষেত্রে এটি একটি উদাহারণ হয়ে থাকবে এবং ওই ব্যক্তির মধ্যে আর কখনও একই অপরাধ করার সক্ষমতা থাকবে না। তাছাড়া এটি একটি উদাহারণ হয়ে থাকবে। দেশের জনগণ এখন দুর্নীতিগ্রস্ত, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষের মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। তাই হাত কাটা জননিরাপত্তাগত বিবেচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’