রবিবার , ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ভাঙ্গুড়ায় নির্দোষ গৃহবধূ ও ইমামকে নির্যাতন করে পার পেল অপরাধীরা ! গৃহবধুর আত্মহত্যার হুমকি

প্রকাশিত হয়েছে- সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১

ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি : পাবনার ভাঙ্গুড়ায় নির্দোষ এক গৃহবধূ ও মসজিদের ইমামকে ধরে নিয়ে খুটির সাথে বেধে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে বলে কতিপয় যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ভবানিপুর (বিশ্বাস পাড়া) গ্রামে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানায়, রোববার (২৫ জুলাই) দিবাগত রাত ১১টার সময় ওই পাড়ার মসজিদের ইমাম মোঃ রুহুল আমিনের গ্যাস ফরম করায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি মসজিদের পাশের বাড়িতে ফোন দিয়ে জানতে পারেন তাদের কাছে গ্যাসের ওষুধ আছে। তখন তিনি ওষুধ আনতে সেখানে যান। ওই সময় গৃহস্বামী বাড়িতে ছিলেন না। তবে তাদের স্কুল পড়ুয়া ছেলে- মেয়েরা বাসায় ছিল এবং তাদের সামনে (তাদের মা) গৃহবধূ ইমাম সাহেবকে গ্যাসের একটি ট্যাবলেট দেন।

ওষুধ নিয়ে ফেরার সময় এলাকার কতিপয় যুবক ইমাম রুহুল আমিনকে ওই গৃহবধুর সাথে অবৈধ সম্পর্কর অপবাদ দিয়ে তাকে  আটক করে মসজিদের সামনে পল্লি বিদ্যুতের খুঁটির সাথে দড়ি দিয়ে বেধে পেটাতে থাকে। তখন ইমাম কিছু বলতে চাইলেও তার কোনো কথাই তারা শোনেনি। বরং কিছুক্ষণ পর কথিত যুবকেরা ওই গৃহবধুকেও তার নিজ ঘর থেকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে এসে একই খুঁটির সাথে বেধে দু’জনকেই রাত ভর লাঠি সোটা দিয়ে মারপিট করে আহত করে। যুবকদের লাঠির আঘাতে ইমাম রুহুল আমিনের এক হাত ভেঙ্গে যায়।

গৃহবধুর উপর নির্যাতনের কারণে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানেও একাধিক ক্ষত হয়। এসময় গ্রহবধুর সন্তানদের আহাজারিতেও পাষন্ডদের হৃদয় গলেনি। তারা চিৎকার করে বলে তাদের মায়ের কোনো দোষ নেই কিন্ত তাতে কোনো লাভ হয়নি। এভাবেই খুঁটির সাথে বাধা অবস্থায় তাদের রাত কেটে যায়।

সোমবার সকাল ১১টার দিকে খবর পেয়ে ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক টুকন ও ভাঙ্গুড়া থানার এস আই রমজান আলী ঘটনাস্থলে রওনা দেন। তখন যুবকেরা আটককৃতদের বাধন খুলে দেয়। পুলিশের ওই এসআই তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ভাঙ্গুড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

পরে চেয়ারম্যান টুকন ও এসআই রমজান মসজিদের ইমাম রুহুল আমিন ও গৃহবধূর সাথে কথা বলে নিশ্চিত হন যে,এলাকার যুবকেরা সম্পূর্ণ সন্দেহের বশবতী হয়ে এই অনাকাংখিত ঘটনা ঘটিয়েছে।

এদিকে পুলিশ ও চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পুর্বেই স্থানীয় ইউপি সদস্য ও এলাকার প্রাধানবর্গ ওই যুবকদের বাঁচাতে ইমাম ও গৃহবধুর কাছ থেকে সাদা কাগজে সাক্ষর নিয়ে তাদের ছেড়ে দেন। গৃহবধু সাদা কাগজে সাক্ষর দিতে না চাইলে তাকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখান হয় বলে গৃহবধৃর পরিবার থেকে জানানো হয়।

গৃহবধুর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অতপর ঘটনার বর্ননা দিয়ে তিনি বলেন,‘‘বিনা অপরাধে এলাকার কিছু অসৎ মানুষ আমাকে মিথ্যা কলঙ্ক দিয়ে রাস্তার শত শত মানুষের সামনে ইমাম সাহেব ও আমাকে একত্রে খুঁটির সাথে বেধে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায়  রাতভর বর্বর নির্যাতন করেছে, আমি তার বিচার চাই”। তিনি আরো বলেন,‘‘ন্যায় বিচার না পেলে আমি আত্মহত্যা করবো”।


ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক টুকুন বলেন, গৃহবধু ও ইমামের অপরাধ না পাওয়ায় গ্রামের প্রধানগণ আপোষ-মীমাংশার মাধ্যমে  তাদের মুক্ত করে দিয়েছেন।

ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মু. ফয়সাল বিন আহসান বলেন,সোমবার রাত পর্যন্ত এ ব্যাপারে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি।

যুবকেরা  নিরাপরাধ ব্যক্তিদের সাথে শুধু দুর্ব্যবহারই করেনি তাদের নিষ্পাপ চরিত্রে কলংক মেখে দিয়েছে।  পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছে – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।