শুক্রবার , ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৮ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ভাঙ্গুড়ার আইডিয়াল স্কুল থেকে ঝরে গেল দুই নক্ষত্র,স্মরনীয় থাকবে তাদের অবদান

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০২০

বিশেষ প্রতিবেদক,ডিডিএন নিউজ : পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরসভার শ্রেষ্ঠ স্কুলগুলোর মধ্যে মমতাজ-মোস্তফা আইডিয়াল স্কুল অন্যতম। আর এটির যাত্রা শুরু হয়েছিল মঞ্জুর কাদির বাবুর হাত ধরেই। ২০০৩ সালে যখন ভাঙ্গুড়ার কৃতি সন্তান ডা: মো: গোলাম মোস্তফা ও তার সহধর্মিনী ডা: মমতাজ খানম বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন তখন থেকেই বাবু এর প্রশাসনিক দায়িত্ব নেন। তার সততা,প্রজ্ঞা ও কর্তব্য নিষ্ঠার দ্বারা আজ বিদ্যালয়টি একটি আদর্শ শিক্ষা নিকেতন হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

মঞ্জুর কাদির বাবু ডা: গোলাম মোস্তফার ভাগ্নে হতেন। তবে আত্মীয় বলে নয় একজন বিশ্বস্ত অভিভাবকের ভুমিকা পালন করেছেন তিনি। জন্মের পর ডাক্তার সাহেবের কাছেই বড় হয়েছেন তিনি। যে কারণে ডাক্তার দম্পতি তাকে নিজের সস্তানের মতই লালন-পালন করেছেন এবং ভালো বাসা দিয়েছেন। সে কারণেই ছিল তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস। ডাক্তার সাহেবের সে বিশ্বাস তিনি শতভাগ দক্ষতার সাথে রক্ষা করেছেন।

একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণ শক্তি হলো অর্থনৈতিক শিষ্ঠাচার ও নিয়মানুবর্তিতা। সেই সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সাথে সদাচরণ। মমতাজ-মোস্তফা আইডিয়াল স্কুলে বরাবরই এর কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। ডাক্তার দম্পতি স্কুলের গুরুত্বপুর্ণ কাজের সময় স্কুলে এসেছেন,মিটিং করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা ঢাকায় চলে যাবার সময় ওই সব সিদ্ধান্ত যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় তার সকল দায়িত্ব বাবুই নিতেন। যার ফলে বাবু হয়ে ওঠেন স্কুলের ছায়া অভিভাবক এবং অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।

তিনি কারো সাথে অসদাচরণ করেছেন এমন কথা কখনোই শোনা যায়নি। প্রতিবছর এই বিদ্যালয়ের জেএসসি ও এসএসসি রেজাল্ট ধারাবাহিক ভাবে ভালো হয়ে আসছে। তাই নিয়মিত ক্লাসের প্রতি তার নজর ছিল অবিচল। করোনা কালিন সময়েও এখানে প্রতিটি বিষয়ে অন-লাইনে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাকা হয়েছে। বিদ্যালয়ের শৃংখলা ও সুন্দর পরিবেশ রক্ষায় তার তীক্ষè নজর ছিল। শিক্ষকরা উচ্চ শিক্ষিত হলেও বাবুকে তারা সবাই সম্মান করতেন। ভদ্র,বিনয়ী ও সদালাপি ব্যক্তি হিসাবে তিনি সকলের কাছেই ছিলেন প্রিয় ব্যক্তিত্ব।

দীর্ঘদিন পর মমতাজ-মোস্তফা আইডিয়াল স্কুল এমপিও ভুক্ত হয়েছে। এখন স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীদের সুদিন এসেছে অথচ তখনই বাবু সোমবার (২৭ জুলাই ২০২০) তার প্রিয় স্কুল ছেড়ে চির বিদায় নিলেন। জীবিত কালে স্কুলের প্রশাসনিক কাজ যেমন তার হাতে পরিচালিত হয়ে আইডিয়াল স্কুল আদর্শ বিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। ঠিক তেমনি ভাবে বাহ্যিক শিক্ষা(সহপাঠক্রমিক) কার্যক্রমের মাধ্যমে বিদ্যালয়কে যিনি সমৃদ্ধ করেছেন,উপজেলার সর্বমহলে সুখ্যাতি এনে দিয়েছেন তিনি হলেন এই বিদ্যালয়েরই ক্রীড়া শিক্ষক। অত্যন্ত নির্মম হলেও সত্য সেই ক্রীড়া শিক্ষক মোস্তফা কামালও গত জুন মাসের ২৫ তারিখে ইন্তেকাল করেছেন। তাই বিদ্যালয়টি বর্তমানে এক ক্রান্তিকালে পতিত হলো।

মোস্তফা কামাল বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই কর্মরত ছিলেন। এখানে আরো কিছু স্বনামধন্য শিক্ষক রয়েছেন যাদের কারণেই স্কুলটি স্বল্প সময়ে এত ভালো পারফরম করতে পেরেছে। তারা প্রত্যেকেই মানুষ গড়ার একেকজন দক্ষ আদর্শ ও কারিগর। যে কারণে এখানকার শিক্ষার্থীরা দেশের স্বনামধন্য মেডিকেল কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষা নিতে সক্ষম হচ্ছে। আর জাতীয় দিবসে উপজেলা পরিষদ মাঠে শিক্ষার্থীদের দিয়ে মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে প্রদর্শণ করে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার এনে দিয়েছেন মোস্তফা কামাল। সেই সঙ্গে একটি স্মার্ট ও চৌকস শিক্ষার্থীর দল তৈরি করেছিলেন তিনি।

মমতাজ মোস্তফা আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: আব্দুল হাকিম বলেন,আইডিয়াল স্কুল থেকে দুটি নক্ষত্র ঝরে পড়লো,যাদের অভাব কোন দিনই পুরন হবার নয়। তাদের আদর্শ ও দীক্ষায় ব্রত হয়ে বিদ্যালয়টিকে আমরা সবাই মিলে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবো।

তিনি আরো বলেন, প্রতিটি মহৎ উদ্যোগের পেছনে কিছু সৎ,নির্ভীক ওদক্ষ কারিগরের অসামান্য অবদানের মাধ্যমে তা আলোয় উদ্ভাসিত হয়। তেমনি বর্তমান শিক্ষা -দীক্ষা,ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধ শিক্ষাঙ্গন মমতাজ মোস্তফা আইডিয়াল স্কুল। এ প্রতিষ্ঠানের দুই মহান কারিগর,মরহুম মন্জুর কাদের ও মরহুম মোস্তফা কামাল তাদের অবদানে আজ বিদ্যালয়। তাদের এ অসামান্য অবদান এ বিদ্যালয়ে চির আম্লান। আল্লাহ তায়ালা তাদের এ আসামান্য কর্মের জন্য আখিরাতে উত্তম পুরস্কার দান করবেন।

আজ বাবুও নেই,নেই মোস্তফা কামালও। তবে আছে তাদের আদর্শ ও বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন। তাদের এই শ্রম কখনো বৃথা যায়নি,বৃথা যেতে পারে না। যতদিন থাকবে এই স্কুল আঙ্গিনা,প্রাণচাঞ্চল্য ততদিন তারা দু’জন অমর হয়ে থাকবেন এখানকার শিক্ষার্থী,শিক্ষক ও শুভানুধ্যায়ীর মাঝে।