বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় দিন ১৮ এপ্রিল। হোসেন আলী ভারতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ান আজ ভাঙ্গুড়ায় দুগ্ধজাত ক্ষুদ্র শিল্পের সফল উদ্যোক্তা কলেজ ছাত্র অপু ঘোষ ভাঙ্গুড়ায় নতুন ইউএনও’র যোগদান- জ্ঞানের নিষ্প্রভ বাতিঘর কি আবার আলোকিত হবে ? বুয়েটকে জঙ্গিবাদের আখড়া বানানো যাবে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাঙ্গুড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন গরুর হাট ! মাসে কেনাবেচা ৬ কোটি টাকা ভাঙ্গুড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন গরুর হাট ! মাসে কেনাবেচা ৬ কোটি টাকা ভাঙ্গুড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন গরুর হাট ! মাসে কেনাবেচা ৬ কোটি টাকা ভাঙ্গুড়া প্রাণি সম্পদ অফিসের নানা জনপ্রিয় কর্মসুচী ! পাবনা জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক আর নেই ভাঙ্গুড়ায় গোদোহন সহজিকরণে বিনামুল্যে মিল্কিং মেশিন বিতরণ 

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব -মোহাম্মদ নাহদি হাসান খান

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০২২
  • ১২৬ সময় দর্শন

টেকসই উন্নয়ন বলতে অগ্রগতির ধারাবাহিকতাকে বুঝায়। যে দেশে উন্নয়ন কাজ শুরু করার পর হঠাৎ থেমে যায় অথবা ন্মিগামী হয় সেটা টেকসই হতে পারেনা। একটি দেশ বা জাতি যখন অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত হতে থাকে তখন উন্নত হয় সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জীবনাত্রার মান। সেখানে গড়ে ওঠে বড় বড় শিল্প ও কলকারখানা। তবে এর বর্জপদার্থের কারণে পরিবেশ দূষিত হয়ে মানুষ রোগাক্রান্ত বা নানা ব্যধিতে আক্রান্ত হতে পারে। এজন্য পরিবেশের ক্ষতিকর দিক এড়ানো ও বিশুদ্ধ জলবায়ু রক্ষায় সচেতন হওয়া জরুরী। একই সঙ্গে মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ গঠনে সুষ্ঠু ও সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি করা হলে তখন একটি দেশের টেকসই উন্নয়নও সম্ভব। মোদ্দা কথা,টেকসই উন্নয়নের জন্য সর্বাগ্রে জাতির মানবিক উন্নয়ন প্রয়োজন।


ধরা যাক,একজন লোকের বড়লোক হওয়ার সাধ জাগলো। সে ভাবতে লাগলো কি করলে সে তার লক্ষ্যে পৌঁছাবে। অবশেষে ঠিক করলো সে ইয়াবা ও মানব পাচারের ব্যবসা করবে। যাতে রাতারাতি ধনাঢ্য ব্যক্তি হওয়া যায়। কক্সবাজার রোহিঙ্গাদের যোগসাজসে শুরু করলো মাদক ও পাচার ব্যবসা। ব্যাস,কয়েক বছরেই দশ কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালান্স। সখ করে একটি চারতলা বাড়ি বানালো। ইতোমধ্যে একমাত্র ছেলে ইয়াবার সংস্পর্শে থেকে নেশায় জড়িয়ে গেল। কিছুদিনের মধ্যে কংকালসার চেহারায় ছেলেটি অকর্মণ্য হয়ে পড়লো। বদ আচরণ আর খারাপ সঙ্গের কারণে সে বাবা-মায়ের সাথেও প্রতিদিন দুর্ব্যবহার করতে লাগলো। রোজগার কিছু নেই কিন্তু খরচ তার মোটা। বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছিটানো তার অভ্যাসে পরিনত হলো। একদিন মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে ছেলেটি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলো। মামলা চললো অনেকদিন। সন্তানের জন্য চিন্তা করে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লো। একদিকে পরিবারে অশান্তি উপরন্ত মামলা। এসব কিছু সামাল দিতে ধার-দেনা বেড়ে গেল। অবশেষে বাড়িটি বিক্রি করে দিল। তারপরও ছেলেটির সাত বছরের কারাদন্ড হলো।
লোকটির ধনীর হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলেও তার উন্নয়ন কিন্তু টেকসই হয়নি। এছাড়া লোকটি মানবিকও হতে পারেনি। জাতির কল্যাণ সাধন না করে সে মানব পাচার ও মাদকের মত ঘৃণ্য কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে। তার মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ থাকলে নিজের পরিবারের ক্ষতি যেমন হতো না। তেমনি সমাজের সম্মানি ও মর্যদাশীল ব্যক্তি হিসাবে সমাদৃত হতে পারতো।
একটি শশিু জন্মরে পর থকেে পরবিাররে কাছইে তার স্বাভাবকি শক্ষিা লাভ করে থাক।ে শশিুটি তার বাবা-মা বা পরবিাররে অন্যান্য সদস্যদরেকে অনুকরণ এবং অনুসরণ কর। এজন্য বাচ্চাদের সাথে সদাচরণ,সদা সত্য বলা শিখাতে হবে। ভালো কাজে তাদের উৎসাহিত করতে হবে,করতে হবে প্রশংসা। যাতে তারা বড়দের সম্মান করতে শেখে,বৃদ্ধদের সেবা করে। ভালো-মন্দ বুঝতে পারে। এভাবে একটি শিশু আত্মসংযমী ও আত্মনির্ভশীল হয়ে উঠতে পারে। একসময় নজিরে জীবনে তা প্রতফিলতি হবে ।

শিশুদের মনোবিকাশ ও সুশিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।এমডিজিতে কাঙ্খিত অগ্রগতি লাভ করার পর ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের কাতারে শামিল হওয়ার জন্য বাংলাদেশ বিশ্বের সাথে তাল মেলানোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি অর্জন করা আবশ্যক যেমন শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, অবকাঠামো, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, ডিজিটাল প্রযুক্তির উদ্ভাবন, মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রভৃতি। কাঙ্খিত সূচকসমূহ অর্জন করতে হলে উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই।

সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষাক্ষেত্রে জিপিএ বা ডিগ্রী প্রাপ্তির বিষয়টি যতটা প্রাধান্য পাচ্ছে মূল্যবোধ বা নৈতিকতার বিষয়টি ততটা প্রাধান্য পাচ্ছেনা। শিক্ষার্থীগণ বই পড়ার চর্চা করতে অনাগ্রহী যেমন করছেন, তেমনি জানতে আগ্রহী হচ্ছে না দেশ- বিদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও সভ্যতা সম্পর্কে জানতে। ভালো ফলাফলের প্রত্যাশা থাকলেও নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চা পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। সরকারের প্রাণান্তকর চেষ্টা থাকলেও বাস্তবায়ন পর্যায়ে নৈতিক আগ্রহ ও দায়িত্ব পালনের সঠিক প্রয়াসের অভাবে সম্পদের যথাযথ বন্টন ও কাজের ফলাফল কাঙ্খিত মাত্রায় সন্তোষজনক নয়। কর্মক্ষেত্রে অনাগ্রহ, বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি অসম্মান, ধর্মীয় উসকানি, সামাজিক সম্প্রীতির অভাব, গুজব ছড়ানো, পরমসহিষ্ণুতার অভাব, কর্মক্ষেত্রে সহযোগিতার অভাব, বিভিন্ন অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রভৃতি বিষয় দিন দিন প্রকট হচ্ছে। শিশু শিক্ষার্থীরা মহৎ বা আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অনুসারী যেমন হয়, তেমনি ভুল ব্যক্তিত্ব বা সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসলে তাতেও তার চরিত্র নেতিবাচক প্রভাব প্রতিফলিত হয়।

শিশুদের মানসিক বিকাশ ও নৈতিকতার উন্মেষ ঘটাতে পরিবারের পাশাপাশি বিদ্যালয় শিক্ষককেও দায়িত্ব পালন করতে হবে। নিজের কাজ নিজে করা, সময়মতো কাজ সম্পাদন করা, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, সত্য কথা বলা, কারোর সমালোচনা না করা, অপরকে সহযোগিতা করা, অসদুপায় অবলম্বন না করা, উত্তম নৈতিকতার চর্চা করা ইত্যাদি বিষয়ের উপর জোর দিতে হবে। নিজস্ব ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা অব্যাহত রাখার প্রয়াস জোগাতে হবে। এ দেশটি মুসলিম প্রধান দেশ, অধিকাংশ শিক্ষক মুসলমান এক্ষেত্রে শিক্ষকদেরকেও খেয়াল রাখতে হবে নিজধর্মের প্রতি যেমন শ্রদ্ধা, আবেগ ও ভালোবাসা রয়েছে তেমনি অপর ধর্মাবলম্বীদেরও তাদের ধর্মের প্রতি একই শ্রদ্ধা, আবেগ ও ভালোবাসা রয়েছে। তাই অন্য ধর্মের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখতে হবে। এদিক থেকে শিক্ষকগণও যেমন এ সুন্দর অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের চর্চা করবেন, তেমনি কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও সেটি দেখে অনুকরণ করবে।

শিক্ষার্থীদেরকে শুধু তাত্ত্বিকভাবে এ বিষয়গুলো শেখালে চলবেনা, বাস্তবিক জীবনে উত্তম নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চার সুযোগ তৈরী করে হাতে-কলমে শিক্ষা দিতে হবে। এবিষয়ে একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি, সম্প্রতি একটি বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে যাবার সময় লক্ষ্য করি একজন ভ্যান চালকের ভ্যান দূর্ঘটনা কবলিত হয়ে হয়ে পুকুরে পড়ে আছে। ভ্যান চালকটি অসহায়ের মত দাড়িয়ে আছেন। আমি ভ্যান চালকের পাশে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করে বিস্তারিত জেনে পাশেই অবস্থিত মেন্দা খালপাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্ররা যারা টিফিন আওয়ারে এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করছিলো তাদেরকে ডেকে ভ্যান চালকের ভ্যানটি উদ্ধারের জন্য আহ্বান জানালে সবাই সানন্দে রাজি হয় এবং ভ্যানটি উদ্ধার করে চালকের নিকট হস্তান্তর করে। ভ্যান চালকের চোখে মুখে ভেসে উঠলো কৃতজ্ঞতার ছাপ। দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো উত্তম নৈতিকতার চর্চা।

আমাদের বাংলাদেশ আবহমানকাল থেকেই সাম্প্রদায়িক সম্পীতির দেশ। কিন্তু মাঝে মাঝে ধর্মীয় উসকানি ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে গুজব, কিশোরের গ্যাং, অপসংস্কৃতির চর্চা দেশের ভাবমূর্তিকে মারাত্বকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বাহ্যিক অবকাঠামো উন্নয়ন যেমন জরুরী, তেমনি মননশীলতার চর্চা, সাহিত্য চর্চা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ চর্চার বিষটিও খুব জরুরী। তাই এক্ষেত্রে একজন শিশু, একজন প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীকে আমরা যদি অসাম্প্রদায়িক মননশীল আধুনিক সমাজ উপহার দিতে পারি, তবেই মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন কাঙ্খিত উন্নত বাংলাদেশ অর্জন সম্ভব হবে।

লেখক: পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিাির

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন - রায়তা-হোস্ট সহযোগিতায় : SmartiTHost
smartit-ddnnewsbd