– প্রাথমিক শিক্ষা হলো আনুষ্ঠানিক শিক্ষার মূলভিত্তি। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে শিক্ষা ক্ষেত্রে ইতিবাচক উন্নতি লক্ষণীয়। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত নিয়োগ কার্যক্রম, ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমিয়ে আনা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রভৃতি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত নারী শিক্ষক শতকরা ৬৪.২ জন। এই শিক্ষকগণ এখনো নানা প্রতিবন্ধিকতা পেরিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক, পারিপার্শ্বিক ও অবকাঠামোগত অপ্রতুলতার কারণে নারী শিক্ষকগণের পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রদানে মনোনিবেশ করা অনেক সময় সম্ভব হচ্ছেনা। যেমন অনেক নারী শিক্ষককে তাদের কমবয়সী শিশুকে নিয়ে ক্লাশে আসতে হচ্ছে অথচ অদ্যাবধি এ অল্পবয়সী বাচ্চাদের যত্ন নেওয়ার কোন সুবিধা সম্বলিত ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেনি।
আমি এটাও লক্ষ্য করেছি একটি বিদ্যালয়ের ৩ জন শিক্ষককে ১ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুসহ ক্লাশ নিতে হচ্ছে। ক্লাশ চলাকালীন শিশুটির যত্ন নেওয়া বা দেখভাল করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকগণ হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে এ ধরণের সমস্যা দূরীকরণে বিদ্যালয়গুলোতে ডে-কেয়ার সেন্টার বা দিবাযত্ন কেন্দ্র চালু করা যেতে পারে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনাক্রমে দেখা যায় যে, চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পে (১ম পর্যায়) ৩,০০০ (তিন হাজার) টি বিদ্যালয়ে শিশুদের জন্য প্লে কর্ণার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এ প্লে কর্ণারের সাথে সংযুক্ত করে যদি ডে-কেয়ার বা দিবাযত্ন কেন্দ্র চালু করা যায় সেক্ষেত্রে নারী শিক্ষকগণ স্বাচ্ছন্দ্যে সাথে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোনিবেশ করতে পারবেন।
একটি দেশের প্রাথমিক শিক্ষাই ভবিষ্যৎ টেকসই শিক্ষার মূলভিত্তি। এজন্যে গুনগত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে যথাযথ গুরুত্বারোপ করতে হবে। সম্মানিত শিক্ষকগণ যাতে শিক্ষা বিস্তারে মনোনিবেশ করতে পারেন সে ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। ডে-কেয়ার বা দিবাযত্ন কেন্দ্র একযোগে সারাদেশে চালু করার পূর্বে প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে অগ্রাধিকারক্রমে পাইলটিং প্রকল্পের আওতায় আনার লক্ষ্যে বিদ্যালয়ের তালিকা তৈরী করা যেতে পারে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সহযোগিতায় শিশুদের জন্য নির্ধারিত কক্ষে খেলাধুলার সরঞ্জাম, চিত্রাঙ্কনের প্রয়োজনী সরঞ্জাম, বিভিন্ন ধরণের খেলনা, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রাদি, শিশু খাদ্য ইত্যাদি রাখা যেতে পারে।
শিক্ষক ছাত্রীদের জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার ও দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনার নিমিত্ত সরকারিভাবে প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। এভাবে আমাদের দেশের নারী শিক্ষকদের জন্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে শিক্ষকগণ নির্বিঘ্নে পাঠদানে উদ্বুদ্ধ হবেন এবং শিক্ষার্থীরাও কাঙ্খিত শিক্ষা লাভ করতে সক্ষম হবেন। একটি কথা খেয়াল রাখতে হবে যে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার জন্য বদ্ধপরিকর। এজন্য প্রাথমিক পর্যায়েই সরকারের বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। ডে-কেয়ার সেন্টারের জন্য জনবল নিয়োগও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ প্রক্রিয়ায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এ প্রকল্পে প্রয়োজন অনুযায়ী জনবলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
সর্বোপরি প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রকৃত উন্নতিকল্পে সমগ্র ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় মৌলিক বিষয়গুলো নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দেশব্যাপী নারী শিক্ষকদের সুবিধার্থে ডে-কেয়ার সেন্টার পর্যায়ক্রমে চালু করতে পারলে শিক্ষকগণ স্বত:স্ফুর্তভাবে নিশ্চিন্তে পাঠদানে মনোনিবেশ করতে পারবেন।
শিক্ষকগণের জন্য উপযুক্ত পাঠদানের পরিবেশ নিশ্চিতকরণ উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্তর্নিহিত উন্নয়নেরই একটি বিরাট অংশে পরিগণিত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
< লেখক পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার