শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ বন্ধে কঠোর নির্দেশনা : ওবায়দুল কাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় দিন ১৮ এপ্রিল। হোসেন আলী ভারতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ান আজ ভাঙ্গুড়ায় দুগ্ধজাত ক্ষুদ্র শিল্পের সফল উদ্যোক্তা কলেজ ছাত্র অপু ঘোষ ভাঙ্গুড়ায় নতুন ইউএনও’র যোগদান- জ্ঞানের নিষ্প্রভ বাতিঘর কি আবার আলোকিত হবে ? বুয়েটকে জঙ্গিবাদের আখড়া বানানো যাবে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাঙ্গুড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন গরুর হাট ! মাসে কেনাবেচা ৬ কোটি টাকা ভাঙ্গুড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন গরুর হাট ! মাসে কেনাবেচা ৬ কোটি টাকা ভাঙ্গুড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন গরুর হাট ! মাসে কেনাবেচা ৬ কোটি টাকা ভাঙ্গুড়া প্রাণি সম্পদ অফিসের নানা জনপ্রিয় কর্মসুচী !

এই সহিংসতার পেছনে কারা

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১
  • ২৫৩ সময় দর্শন
এই সহিংসতার পেছনে কারা

অনলাইন ডেস্কঃ

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ। ঘটনার সূত্রপাত গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায়। এরপর টানা চার দিন নোয়াখালী, ফেনী, কক্সবাজার, বান্দরবান, সিলেট, চাঁদপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পূজাম-প ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ রংপুরের পীরগঞ্জে রবিবার রাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় একটি প্রশ্নই সামনে দাঁড়িয়েছেÑ হামলার নেপথ্যে কারা? এসব এলাকায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ সংখ্যালঘুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতার বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে। অবশ্য সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, হামলাকারীরা রেহাই পাবেন না। কঠোরহস্তে দমন করা হবে। এমনকি এসব হামলার ঘটনায় অন্তত ৭১টি মামলা হয়েছে। এসব
মামলার বেশিরভাগেরই বাদী পুলিশ। আসামি করা হয়েছে দশ সহস্রাধিক। গ্রেপ্তার ও আটক হয়েছে কয়েকশ’। কিন্তু কোনো কিছুতেই থামছে না অঘটন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে, তারা যে দলেরই বা যে মতেরই হোক না কেন। অন্যথায় হামলার ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঠেকানো যাবে না। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে। দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশও হচ্ছে।
পীরগঞ্জের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মন্দির-ম-পে হামলার ঘটনায় যে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব উইং বিষয়টি নিয়ে মাঠে কাজ করছে। আমরা সব বের করে ফেলব; তবে একটু সময় চাইছি। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এ হামলার উদ্দেশ্য হলোÑ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা।
পুলিশ সদরদপ্তর থেকেও হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজাম-পকেন্দ্রিক অপ্রীতিকর ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭১টি মামলা হয়েছে। আরও কিছু মামলা প্রক্রিয়াধীন। এসব ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটকের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তবে মন্ত্রী ও পুলিশের এত আশ্বাসেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না কেউ। কারণ অতীতের মতো এবারও ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতিবিদদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, এসব ঘটনায় একে অপরকে দোষারোপ করা ঠিক নয়। অথচ রাজনীতিকরা পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। কোনো রকম তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এভাবে দোষারোপ করলে মূল অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। তিনি বলেন, এসব হামলা যারাই করছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়, ঘৃণিত। এটি বন্ধ করতে হবে। দেশের নাগরিক হিসেবে সবারই বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। সবাইকে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। রাজনীতিবিদরা একে অপরকে ঘায়েল করলে অপশক্তি উসকানি পায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে এসব ঘটনায় প্রশাসন নীরব। ফেনীতে প্রশাসনের কাছে সকাল থেকে নিরাপত্তা চাওয়া হয়। পূজা উদযাপন পরিষদের সিদ্ধান্ত ছিল বিকাল ৩টার পরে বিসর্জন দেব, প্রশাসন বলল বেলা ১১টার ভেতরে বিসর্জন দিতে। এরপর ম-পগুলো খালি হলে তা-ব চালানো হলো। প্রশাসনের কাছে তো সব তথ্য ছিল। তারা বলছে, ওপরের কোনো নির্দেশ পায়নি। প্রশাসনের ব্যর্থতায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।
রংপুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিএনপি নেতা ও সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদ বলেন, জানতে চাই কারা এ হামলা করেছে। সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। মনে হচ্ছে সরকারই দিশাহারা হয়ে পড়েছে। সরকার তার ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে। আশা করি দোষারোপের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় মনোযোগ দেবে।
ভোরের কাগজের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক শ্যামল দত্ত বলেন, এসব ঘটনা একদিনে ঘটেনি। রবিবার রাতে যখন ঘটনা ঘটে তখন পুলিশের কাছে আশ্রয় চেয়েও পায়নি অসহায় মানুষ। সন্তানকে রক্ষা করতে মা ধানক্ষেতে লুকিয়ে ছিলেন। লামায় ও ফেনীতে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্র যদি তাদের নিরাপত্তা দিতে না পারে, সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাহীনতায়ই থাকবেন।
কুমিল্লা থেকে শুরু হওয়া এসব ঘটনায় অন্তত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পেছনের কুশীলবদের বিষয়ে জানাতে পারেনি। কেন হঠাৎ এমন সাম্প্রদায়িক সহিংতার ঘটনা ঘটছে তারও কারণ স্পষ্ট হয়নি। তবে বেশকিছু বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে র‌্যাব, পুলিশসহ প্রশাসনের সংস্থাগুলো। এসব ঘটনায় দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ ক্রমাগত বাড়ছেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এসব হামলার নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ হামলা বন্ধসহ ৭ দফা দাবিতে গতকাল রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন।
এদিকে র‌্যাব, পুলিশসহ প্রশাসনের দায়িত্বশীলকে এসব ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঠেকাতে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে পুলিশ, র‌্যাবসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের প্রাথমিক ধারণা ঘটনাগুলো পরিকল্পিত। এর পেছনে দেশি-বিদেশি গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এসব ঘটানো হচ্ছে। তবে দেশি-বিদেশি কোন গোষ্ঠী কাজ করছে তা এখনো জানাতে পারেনি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও পক্ষ ঘটনার জন্য প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চার দিনে ৭০টি পূজাম-পে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব সহিংসতার পেছনে জড়িতদের এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তবে ৩০টি মামলায় দশ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। আসামির তালিকায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় একাধিক নেতা, তাদের অনুসারী ছাড়াও জামায়াত-শিবিরসহ ইসলামী দলের অনেকের নাম এসেছে।
র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আমাদের সময়কে বলেন, বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংতার পেছনে কারা ইন্ধন দিচ্ছে, তা জানতে র‌্যাবের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। আমরা এ পর্যন্ত যাদের ধরেছি তাদের বেশিরভাগই ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিকমূলক অপব্যাখ্যার কনটেন্ট ছড়িয়েছে।
পীরগঞ্জে সহিংসতা : রংপুর ও পীরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মাঝিপাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় পীরগঞ্জ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে ২টি মামলা করেছে। এ ছাড়া একাধিক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও পীরগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে।
পীরগঞ্জের এই ঘটনা কারা ঘটিয়েছে জানতে চাইলে গত রাতে রংপুর জেলার পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার আমাদের সময়কে বলেন, ঘটনার পেছনে কারা ইন্ধন দিয়েছে, কারা সরাসরি হামলা করেছে তা নিবিড়ভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন অভিযোগ করেন, ১৮টি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে ভস্মীভূত করা হয়েছে। ২টি দোকানেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। রাধাগোবিন্দ মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। একটি গরু পুড়ে মারা গেছে। নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার, কাপড়-চোপড় ও বেশকিছু গরু-ছাগল এবং হাঁস-মুরগি লুটে নেওয়া হয়েছে। ফেসবুকে একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রবিবার রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, পীরগঞ্জের ঘটনার পেছনে অন্য জেলার লোক জড়িত। তারা গাইবান্ধা থেকে এসেছে। হামলা করে আবার পালিয়ে গেছে।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, কাশিমপুর এলাকায় তিনটি পূজাম-পে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার ১৮ জনকে দুদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর আগে এ ঘটনায় কাশিমপুর থানায় তিনটি মামলা হয়। এতে অজ্ঞাত ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়। শুক্রবার সকালে গ্রেপ্তারকৃত ২০ জনের মধ্যে ১৮ জনকে সাত দিনের রিমান্ডে চেয়ে আদালতে আবেদন করলে দুই দিন মঞ্জুর করা হয়। পরে রিমান্ড শেষে সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক কুমিল্লা জানান, পূজাম-পের ঘটনার পরদিন থেকেই কুমিল্লা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানে চার মামলায় এখন পর্যন্ত ৪৩ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনওয়ারুল আজিম বলেন, পবিত্র কোরআন অবমাননা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে করা চারটি মামলায় ৭শ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা হয়েছে। অন্য দুটি মামলা বিশেষ ক্ষমতা আইনে।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে গত শুক্রবার মন্দির, দোকানপাট ও বসতবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর এবং ইসকনের দুই ভক্ত নিহত হওয়ার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশ ও ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ বাদী হয়ে মামলা করেন। গত রবিবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়। একই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৮টি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব মামলার এজাহারে ২৮৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও চার থেকে পাঁচ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
সিলেট প্রতিনিধি জানান, সিলেট নগরের দুটি পূজাম-পে গত শুক্রবার দুপুরে হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৪২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২০০-২৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। পুলিশ শনিবার রাতে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সিলেটের জকিগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজারে বুধবার রাতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর এবং হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে। পুলিশ ছয়জনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার করে। সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবার আলী শেখ বলেন, কারা হামলা করেছে তার তদন্ত চলছে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় আড়াইশ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে মন্দির ভাঙচুর ও শহরের ট্রাংক রোডে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ-র‌্যাব ৫ জনকে আটক করেছে। পুলিশ সূত্র জানায়, এ নিয়ে গত দুদিনে র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার জানান, পেকুয়ায় পূজাম-প ও হিন্দু বসতবাড়িতে হামলা ভাঙচুরের ঘটনার পর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে এলাকার পরিস্থিতি। পুলিশি টহল জোরদারের পাশাপাশি দোষীদের গ্রেপ্তারের চলছে অভিযান। এখন পর্যন্ত আটক করা হয়েছে ১৩ জনকে।
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, উলিপুরে ১৩ অক্টোবর রাতে দুর্বৃত্তদের হামলায় দুর্গামন্দির ভাঙচুরসহ প্রতিমায় অগ্নিসংযোগ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে লুটপাটের ঘটনা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে পৃথক ৫টি মামলা হয়েছে। ৪টি মামলায় পুলিশ ও ১টিতে মন্দির কমিটির সভাপতি বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলাগুলোয় এজহারনামীয় ৩৫ জন ও ছয় থেকে সাতশ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে গত বুধবার রাতে বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২ হাজার ৯৫০ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ বুধবার রাতে সাতজন ও শনিবার রাতে আটজনকে গ্রেপ্তার দেখায়।
লালপুর প্রতিনিধি জানান, নাটোরের লালপুরে শীতলা মূর্তির গলা কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। রবিবার রাতে জোতদৈবকী শিব ও কালীমন্দিরের শীতলা মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে। জেলার পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান
দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন। এসব ঘটনার বিরুদ্ধে সারাদেশের আইনজীবীদের রুখে দাঁড়ানোর অনুরোধের পাশাপাশি এ ধরনের ঘৃণ্য কার্যকলাপে জড়িতদের অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টানা পৌনে চার ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। পরে তারা সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দিয়ে অবরোধ তুলে নেন।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তি রুখে দাঁড়াও’ শিরোনামের এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেন, বিভিন্ন স্থানে মন্দির-ম-পসহ হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধ তথা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনার ওপর আঘাত করেছে একটি চক্র। এ চক্রটি দেশকে ধর্মান্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।
গতকাল দুপুরে কুমিল্লার নানুয়া দিঘিরপাড়ের পূজাম-প ও ঠাকুরপাড়া রক্ষাময়ী কালীমন্দির এলাকা পরিদর্শন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় জড়িত দোষীদের শাস্তি দাবি করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, মন্দির, পূজাম-পে হামলা, নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নড়াইল, গাজীপুরসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।

সূত্রঃ আমাদের সময়

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন - রায়তা-হোস্ট সহযোগিতায় : SmartiTHost
smartit-ddnnewsbd