ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধিঃ
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় অন্তত ২০ পরিবারের সদস্যদের তাদের নিজ বসতবাড়িতে উঠতে প্রতিরোধসহ বাধা প্রদান করা হচ্ছে। উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার দাসবেলাই গ্রামে এঘটনা ঘটেছে। নিজ বসত বাড়িতে পরিবারের সদস্যরা উঠতে না পেরে তারা বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে,উপজেলা খানমরিচ ইউনিয়নের দাসবেলাই গ্রামের প্রায় সাড়ে ৩ একর সরকারি জলকর দখলকে কেন্দ্র করে বেল্লাল গং ও তোরাপ আলী গং দের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর ভোর বেলায় বেল্লাল গং ও তোরাপ গংদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২০জন আহত হয়েছিল। তবে তোরাপ গংএর তোরাপ আলী ও তার ছেলে ফজলুল হক চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত হন। এখবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিবর্গ এঘটনায় অধিকতর দুর্ঘনা এড়ানোর জন্য বেল্লাল গং দেরকে অন্তত ৫০ পরিবারকে নিজবসতবাড়ি ছেড়ে আপতত কিছু দিনের জন্য অন্যত্রে থাকতে পরামর্শ দেন। তখন থেকেই তাদের প্রায় ৫০ পরিবারের নারী ও শিশুসহ প্রায় কয়েক শত মানুষ নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্রে অবস্থান করছিল।
একই পরিবারের দুইজনের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আসামী পক্ষের বাড়িঘরে কয়েক দফায় হামলা ,ভাংচুর ও লুটপাট চালায় বলে জানা গেছে। একই পরিবারের দুইজন নিহতের ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যা রতœা বাদী হয়ে ২৪ জনকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে ১৮ আসামী বিভিন্ন মেয়াদে হাজত খেটে জামিনে বেড়িয়েছেন। বাঁকী ৬জন আসামী এখনো হাজতে আছেন। মামলার বিচারিক কার্য্যক্রম চলমান। তবে আদালতের মাধ্যমে জামিনে বের হয়ে আসলেও বাদী পক্ষরা কতিপয় আসামী পরিবারকে স্থানীয়ভাবে বাড়িতে উঠার অনুমতি দিলেও এখনো ২০ পরিবারকে তাদের নিজবাড়িতে উঠতে গেলে বাধা প্রদানসহ আসামীদের প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে অবস্থান করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে আসামীরা তাদের বসত বাড়িতে উঠতে গেলে বাদী পক্ষ লাঠিসোঠা নিয়ে তা প্রতিহত করেন। ওই ২০ পরিবার হলো দাসবেলাই ও দাসবেলাই পুকুরপাড় গ্রামের বাসিন্দা হানেফ,সায়েদুল,মজিবর,সায়দার,আসাব আলী, রহুল, আব্দুল, আফজাল, রবিউল, ঝন্টু সাত্তার, সাজাহান, অজিত, বেল্লাল, ইয়াছিন, শূকুর , আলম, কালাম, মোক্তার।
সম্প্রতি সরেজমিন দাসবেলাই গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, আসামী পক্ষের বাডিঘর ভগ্নদশা, জানালা দরজার কোনো চিহ্ন নেই। পাশাপাশি ভাঙ্গা ঘর ছাড়া অন্য কোনো জিনিস পত্রের লেশ মাত্র নেই। বাড়িঘরের জিনিস পত্র ভাংচুর করে লুটপাট করেছেন বাদী পক্ষ এমন অভিযোগ করেছেন আসামী পক্ষের লোকজন । এদিকে ভাংচুর করা ঘরবাড়ির ছবি সংগ্রহ করতে গেলে নিহতের পরিবারের সদস্য আশরাফুল ও ওই গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে কাওছার আলী সাংবাদিকের দিকে মারমুখী আচরণে তেরে আসেন এবং ভাঙ্গা ঘরের ছবি তুলতে বাধা প্রদানসহ সাংবাদিকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচারণ করেন।
এসময় তারা সাংবাদিককে বলেন, কোনোক্রমেই খুনির ভাঙ্গা বাড়ির ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে দেওয়া হবে না।
ঘটনার বিষয়ে খানমরিচ ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুর রহমান বলেন, আদালতে যেখানে মামলা বিচারাধীন সেখানে আসামীদের বাড়িঘরে হামলা,ভাংচুর ও লুটপাটসহ তাদের নিজ বসতবাড়িতে উঠতে না দেওয়া নিন্দনীয় ও অমানবিক কাজ ।
এব্যপারে ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মুঃ ফয়সাল বিন আহসান বলেন, দাসবেলাই গ্রামের বিষয়টা আদালতে মামলা হয়েছে ও বর্তমানে তা বিচারাধীন। তবে তাদের নিজ বসতবাড়িতে উঠতে না দেওয়া অন্যায়।