প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা এইচ টি ইমামের প্রথম নামাজে জানাযা বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় উল্লাপাড়া সরকারি আকবর আলী কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার পূর্বে মরহুমের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন, এইচ টি ইমামের একমাত্র পুত্র উল্লাপাড়ার সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, বেলকুচি-চৌহালী আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মোমিন মন্ডল, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফার“ক আহমেদ, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড.কেএম হোসেন আলী হাসান,ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার, উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা প্রমূখ। সকাল সাড়ে ১০টায় এইচ টি ইমামের মরদেহ তার নিজ গ্রাম সোনতলার তফসির মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিমান বাহিনী একটি বিশেষ হেলিকপ্টার যোগে এসে পৌছিলে তাকে এক নজর দেখার জন্য এলাকার নারী পুরুষেরা ভীর করে। সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। অনেকেই শোক ও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরে সেখান থেকে তার মরদেহ সরকারি আকবর আলী কলেজ মাঠে আনা হলে আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মরহুমের কফিনে পুস্প স্তবক অর্পন করে। বিউগলে কর“ন সুর তুলে মুক্তিযোদ্ধা এইচ টি ইমামের মরদেহের প্রতি পুলিশের একটি চৌকস দলগার্ড অব অর্নার প্রদান করে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি মৃত্যুকালে ১ ছেলে ৩ মেয়েসহ বহুস্বজন, শুভানুদ্ধায়ী ও রাজনৈতিক নেতা কর্মী রেখে গেছেন। অনেক আগে তার স্ত্রী বিয়োগ ঘটেছে।
তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিক, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, রাজশাহী কলেজ থেকে স্নাতক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি এমএ পাস করেন। রাজশাহী কলেজে তিনি অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে চাকুরী জীবন শুরু করেন। পরবর্তি কালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস পাস করে সরকারি চাকুরীতে যোগদান করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রী পরিষদ সচিব ছিলেন।
এইচ টি ইমাম ’৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত, তাদের অস্ত্র সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের সেখানে সুরক্ষায় ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে ভারতের ত্রিপুরায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পকে্ষে ভারত ও আন্তর্জাতিক বিশ্বে তৎকালিন অস্থায়ী স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সমর্থন আদায়ে কাজ করেন। এইচ টি ইমাম ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। এরপর ২০১৪ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়ে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরামর্শ প্রদান করে রাষ্ট্র পরিচালনায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি আওয়ামীলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো- চেয়ারম্যান ছিলেন। ‘বাংলাদেশ সরকার ১৭৭১-১৭৭৫’ নামক গ্রন্থসহ তার লেখা একাধিক প্রকাশনা রয়েছে।
এইচ টি ইমাম দু’সপ্তাহ আগে কিডনী ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হয়ে ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে ভর্তি হন। এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ১টায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. কেএম হোসেন আলী হাসান মিডিয়ার সাথে এক সাক্ষাৎকারে জানান, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমাম স্মরণে জেলা আওয়ামীলীগ তিনদিনে শোক পালনের এক কর্মসুচি গ্রহন করেছে। এতে রয়েছে, দলীয় কার্যালয়ে জাতীয়, দলীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন এবং কালো ব্যাচ ধারণ। আজ শুর“বার হতে এ কর্মসুচি শুর“ হচ্ছে।