‘ছিঃ ছিঃ, তুমি এত খারাপ’- এই একটি সংলাপই যথেষ্ট এদেশের নাট্যজগতের যুবরাজকে পরিচয় করিয়ে দিতে। নব্বই দশকে এই সংলাপটি ছিলো সব নাট্যামোদি দর্শকদের খুব প্রিয়। দারুণ নাটকীয়তায় এই বাক্য সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছিলেন যিনি তিনি হলেন অভিনেতা খালেদ খান।এদেশের অভিনয়ের সাম্রাজ্যে তাকে ‘যুবরাজ’ বলে সম্মান দেখানো হয়।
মঞ্চ ও টিভি অভিনয়শিল্পী এবং নির্দেশক হিসেবে প্রশংসিত ছিলেন খালেদ খান। আজ তার জন্মদিন। খালেদ খান ১৯৫৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রয়াত এ অভিনেতার জন্মদিনকে ঘিরে মঞ্চ বা টিভিতে কোথাও কোনো স্মরণ অনুষ্ঠান বা আয়োজনের খবর মেলেনি। তবে খালেদ খানকে মনে রেখেছেন তার অভিনয়ের অনুরাগীরা। সোশাল মিডিয়ায় অনেকেই অভিনয়ের যুবরাজকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা দিয়েছেন।
খালেদ খানের শৈশব কেটেছে টাঙ্গাইলেই। সেখানেই শিক্ষাজীবনের শুরু। ১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. কম এবং ১৯৮৩ সালে ফিন্যান্স বিষয়ে এম. কম সম্পন্ন করেন তিনি।
দীর্ঘ ২৮ বছর নিয়মিত থিয়েটার ও টিভি নাটকে অভিনয় করে শক্তিমান এক অভিনেতায় পরিণত হয়েছিলেন তিনি। বিশেষ করে নব্বই দশকে একাধিক টিভি নাটকে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান। মঞ্চে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, অচলায়তন, নুরালদীনের সারা জীবন, ‘ঈর্ষা’, দর্পণ, গ্যালিলিও ও ‘রক্তকরবী’।
নাটকে সফলভাবে পথচলার পর পরিচালনাও শুরু করেন খালেদ খান। তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘মুক্তধারা’, ‘পুতুল খেলা’, ‘কালসন্ধ্যায়’, ‘মাস্টার বিল্ডার’, ‘ক্ষুদিত পাষাণ’সহ বেশ কিছু নাটক।
১৯৮১ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে টিভি নাটকে অভিষেক হয় তার। তার অভিনীত প্রথম টিভি নাটক হলো ‘সিঁড়িঘর’। এরপর অসংখ্য টিভি নাটকে অভিনয় করে দর্শক হৃদয় জয় করেছেন।
একাধিক নাটকে তার বেশ কিছু সংলাপও জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে নব্বই দশকের নাটক ‘রূপনগর’-এ তার ‘ছিঃ ছিঃ, তুমি এত খারাপ’ শীর্ষক সংলাপটি চলে আসে মানুষের মুখে মুখে। তার অভিনীত জনপ্রিয় নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এইসব দিনরাত্রী, কোন কাননের ফুল, মফস্বল সংবাদ, অথেলো ইত্যাদি।
ক্যারিয়ারজুড়ে কোটি দর্শকের ভালোবাসা ছাড়াও মঞ্চ নাটকে অনবদ্য অবদানের জন্য মোহাম্মদ জাকারিয়া পদক, সেরা অভিনেতা হিসেবে নুরুন্নাহার স্মৃতিপদক, সেরা পরিচালক হিসেবে সিজেএফবি পুরস্কার এবং সেরা টিভি অভিনেতা হিসেবে ‘ইমপ্রেস-অন্যদিন’ পুরস্কার অর্জন করেছিলেন তিনি।
২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর মাত্র ৫৫ বছর বয়সে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।