বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সর্বজনীন পেনশন স্কিম- ভাঙ্গুড়ায় ৪ মাসে একাউন্ট ওপেন হয়েছে মাত্র ১৪২ ভাঙ্গুড়ায় প্রাণি সম্পদ বিভাগের জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাপনী ঘটলো সেবা সপ্তাহের ভাঙ্গুড়ায় ৭ দিন ব্যাপি বই মেলা জমে উঠেছে উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ বন্ধে কঠোর নির্দেশনা : ওবায়দুল কাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় দিন ১৮ এপ্রিল। হোসেন আলী ভারতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ান আজ ভাঙ্গুড়ায় দুগ্ধজাত ক্ষুদ্র শিল্পের সফল উদ্যোক্তা কলেজ ছাত্র অপু ঘোষ ভাঙ্গুড়ায় নতুন ইউএনও’র যোগদান- জ্ঞানের নিষ্প্রভ বাতিঘর কি আবার আলোকিত হবে ? বুয়েটকে জঙ্গিবাদের আখড়া বানানো যাবে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাঙ্গুড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন গরুর হাট ! মাসে কেনাবেচা ৬ কোটি টাকা

বাংলাদেশের বিট পুলিশিং ও প্রাসঙ্গিক কথা :

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেটের সময় : বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
  • ৫০১ সময় দর্শন

আইনি পরিভাষায়, বিট হলো একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকা। পুলিশ অধীক্ষেত্রের একটি ছোট অংশকে বলা হচ্ছে বিট। সুতরাং বিট পুলিশিং হলো কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্টসংখ্যক বা বিশেষ পুলিশ সদস্যদের স্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করা।

বীট পুলিশিং হল কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক বা বিশেষ পুলিশ সদস্যদের স্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করা। আমাদের শহর এলাকাগুলোকে কয়েকটি বীটে ভাগ করে প্রত্যেকটি বীটের দায়িত্ব ঐ স্থানে অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়ির উপর ন্যাস্ত করা হয়। এই ধারণাটি এসেছে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যপদ্ধতি থেকে। জাপানের কোবান পদ্ধতিতেও প্রতিটি কোবান বা পুলিশ বক্সের অধীন একটি নির্দিষ্ট এলাকা রয়েছে। এই সব এলাকায় কিছু পুলিশ অফিসার ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে নিজস্ব বিবেচনা শক্তি প্রয়োগ করে সেই এলাকায় পুলিশিং করে থাকেন। এক্ষেত্রে তিনি তার নির্ধারিত এলাকায় অপরাধ সমস্যা সমাধানে সহজতর হবে।

বীট হল একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকা । শহরাঞ্চলের পুলিশ অধীক্ষেত্রকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করা হলে প্রত্যেক অংশকে এক একটি বীট বলা হবে।আমাদের দেশের প্রত্যেকটি শহরাঞ্চলকে পুলিশিং শুরুর আদিকাল থেকেই কয়েকটি বীটে ভাগ করা হয়েছে। থানায় কোন মামলা রুজু হলে তার ঘটনাস্থল নির্দেশ করতে এজাহারে গ্রামাঞ্চলের জন্য জে.এল (জুরিসডিকশন লিস্ট) নম্বর এবং শহরাঞ্চলের জন্য বীট নম্বর লেখা হয়। তাই বীট শব্দটি পুলিশ অফিসারদের কাছে নতুন কোন বিষয় নয়।

সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তার অধীক্ষেত্রকে প্রায় ৪৮০ টি বীটে ভাগ করেছে। পূর্বেই জেনেছি, এই বীট বিভাজন সম্পূর্ণ নতুন কোন পদ্ধতি বা ধারণা নয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন প্রতিষ্ঠার লগ্নেই তৎকালীন অধীক্ষেত্রকে বীটে ভাগ করা হয়েছিল। বর্তমানে তা সম্প্রসারণ করা হয়েছে মাত্র।

এই সব এলাকায় কিছু পুলিশ অফিসার ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে নিজস্ব বিবেচনা শক্তি প্রয়োগ করে সেই এলাকায় পুলিশিং করে থাকেন। এক্ষেত্রে তিনি তার নির্ধারিত এলাকায় অপরাধ সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর নিকট গৃহ-ডাক্তারের মতোই কাজ করেন।

কোবান, বিট বা কমিউনিটি পুলিশিং অফিসার এলাকার মানুষের কাছে তাদের নিজেদের পুলিশ অফিসার বলেই প্রতীয়মান হবে। তিনি এলাকাবাসীদের সাথে স্থানীয় সুখ-দুঃখের অংশীদার হবেন। তিনি এলাকায় কেবল আইন প্রয়োগ বা শৃঙ্খলা রক্ষা নয়, এলাকার সকল সমস্যা সমাধানের নিয়ামক শক্তি বা প্রভাবক হিসেবে কাজ করবেন। দেওয়ানী, ফৌজদারি, সামাজিক, পারিবারিক এমনকি রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও একজন কমিউনিটি/ বীট পুলিশিং অফিসারকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

বাংলাদেশে‘বিট পুলিশিং’

:পুলিশ বাহিনীকে আরো বেশি জনমুখী করতে, মানুষের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পৌঁছে দিতে সারা দেশে বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশে এ সংক্রান্ত একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়। অতপর গত জুলাই মাস থেকেই দেশের ৬৪০টি থানা এলাকায় শুরু হয়েছে বিট পুলিশিং কার্যক্রম।

বিট পুলিশিংয়ের মূল ধারণা হচ্ছে, পুলিশ কর্মকর্তারাই সেবা নিয়ে যাবেন মানুষের কাছে। তবে মামলাসহ কিছু আইনগত বিষয়ে থানায় আসতে হবে। বর্তমান করোনার পরিস্থিতিতে চরম বিপদে না পড়লে মানুষ থানামুখী হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ অবস্থায় বিট পুলিশিং চালুর সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

গ্রামাঞ্চলে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং শহরের মহল্লাগুলোকে বিটে বিভক্ত করে একজন উপ-পুলিশ পরিদর্শককে (এসআই) এর দায়িত্ব দেওয়া হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত এ পুলিশ কর্মকর্তারাই এলাকার আইন-শৃঙ্খলাসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজ রাখবেন ও প্রাথমিকভাবে ব্যবস্থা নেবেন।

উন্নত দেশগুলোর আদলে এলাকাভিত্তিক বিট ভাগ করে পুলিশিং কার্যক্রমের বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশ প্রবিধানে (পিআরবি) উল্লেখ রয়েছে। ২০১০ সালে ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) প্রথমবারের মতো বিট পুলিশিং চালু হয়। এরপর সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশালসহ কিছু ইউনিটে কার্যক্রম চললেও দেশব্যাপী পরিচালনার নির্দেশনা ছিল না।

তবে বেনজীর আহমেদ আইজিপির দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সারা দেশে বিট পুলিশিং ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। গত ১৬ জুন এক ভিডিও বার্তায় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের যে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেন তিনি, এর মধ্যে বিট পুলিশিং অন্যতম। পরে ২১ জুন রাতে আরেকটি ভিডিও কনফারেন্সে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে ইউনিট প্রধানদের নির্দেশনা দেন আইজিপি। ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেটে বিট পুলিশিংয়ের সাফল্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব এলাকায় বিট পুলিশিং সফল হয়েছে। আমরা সারা দেশে বিট পুলিশিং চালু করতে চাই, মানুষের কাছে যেতে চাই, মানুষের হৃদয় জয় করতে চাই।’

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-প্রিভেনশন) সহেলী ফেরদৌস একটি স্বাক্ষাতকারে  বলেন, সারা দেশে প্রতিটি ইউনিটে, থানায় বিট ভাগ করে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। একজন এসআই মূলত বিটের দায়িত্বে থাকবেন। লোকবল কম থাকলে এএসআইকেও দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘বিট অফিসার তাঁর বিট এলাকার ভাড়াটিয়াদের তথ্য, প্রতিবেশীর তথ্য, অপরাধীদের গতিবিধি, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করাসহ অনেক কাজে ভূমিকা রাখবেন।’

এআইজি সহেলী আরো বলেন, ‘পিআরবিতে থাকা বিট পুলিশিংয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১০ সালে ডিএমপিতে এর যাত্রা শুরু হয়। এরপর সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশালসহ কিছু ইউনিট করেছে। এবার কেন্দ্রীয় নির্দেশনার মাধ্যমে সারা দেশে এটি বাস্তবায়িত হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, বেনজীর আহমেদ ডিএমপি কমিশনার থাকা অবস্থায় বিট পুলিশিং চালুর পর ঢাকায় বেশ সুফল পাওয়া যায়। তাই তিনি আইজিপির দায়িত্ব নেওয়ার পর বিট পুলিশিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন।’করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ চরম বিপদে না পড়লে থানায় আসছে না। তাই এখন বিট পুলিশিং চালু করা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

পুলিশের সেবাকে অধিকতর গতিশীল ও কার্যকর করতে বাংলাদেশের বিভিন্ন থানা এলাকায় বিট পুলিশিং কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। এ কার্যক্রমের ফলে পুলিশের ডিসি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের জবাবদিহিতা আরো বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।  এতে প্রতিটি থানার একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কিছু নির্দিষ্টসংখ্যক বা বিশেষ পুলিশ সদস্যরা স্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। এই ধারণাটি এসেছে লন্ডন মেট্রপলিটন পুলিশের কার্যপদ্ধতি থেকে।  পুলিশের সেবাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রতিটি থানা এলাকায় ৫ থেকে ২০টি বিটে ভাগ করা হচ্ছে  অপরাধ ও জনসংখ্যার অনুপাতে। বিট পুলিশিং কার্যক্রমের ফলে পুলিশের প্রতিটি এলাকা, এলাকার অপরাধ প্রকৃতি এবং অপরাধী সম্পর্কে ধারণা বৃদ্ধি পাবে। এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বসবাসকারীদের কৌশলগত অবস্থান এবং এলাকাবাসী সম্পর্কে তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে।

এতে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে সংশ্লিষ্ট অপরাধী শনাক্ত করা সহজতর হবে এবং অপরাধ দমন ও উদঘাটনে পুলিশের রেসপন্স টাইম কমে আসবে। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশিং কার্যক্রম বেগবান হবে। এতে জনগণের সঙ্গে পুলিশের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাবে এবং অপরাধ প্রতিরোধে জনগণকে সহায়তার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বিট পুলিশিংয়ের আওতায় থানাকে নির্দিষ্ট ক্রাইম জোনে ভাগ করা হবে। জোনের ভেতরে থানাগুলোকে বিভিন্ন বিটে ভাগ করা হবে। বিভিন্ন এলাকার জনসংখ্যা, অপরাধপ্রবণতা ইত্যাদি বিবেচনায় এনে বিট ভাগ করা হবে।
প্রত্যেক বিটের দায়িত্বে থাকবেন একজন উপ-পরিদর্শক (এস আই)। এর চেয়ে নিচের পদের একজন থাকবেন তার সঙ্গে। সংশ্লিষ্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তদারক এবং ওসি বিট কার্যক্রম সমন্বয় করবেন। জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) থাকবেন পর্যবেণের দায়িত্বে।
বিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারেরা নিজ নিজ এলাকার মাদক, অস্ত্র ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী-অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তাদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করবেন। এলাকায় ইভ টিজিংসহ সামাজিক অপরাধ বন্ধে উদ্যোগ নেবেন।
তারা এলাকার লোকদের নিয়ে সপ্তাহে সাধারণ সভা করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। বিট সদস্যরা রাজনৈতিক ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তালিকা করে তাদের গতিবিধির ওপর নজরদারি করবেন। যাতে
মানুষকে সেবা পাওয়ার জন্য পুলিশের কাছে আসতে হবে না। পুলিশই যাবে মানুষের কাছে।’

কমিউনিটি পুলিশিং বনাম বিট পুলিশিং:
কমিউনিটি পুলিশিং হল একটি নতুন পুলিশিং দর্শন যেখানে পুলিশ জনগণ তথা সমাজের স্বার্থসংশ্লিস্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সমাজে উদ্ভূত অপরাধ সমূহের অন্তর্নিহিত কারণসমূহ অনুসন্ধান করে সেসব দূর করার চেষ্টা করে। কমিউনিটি পুলিশিং দর্শনে পুলিশ তাদেরকে কমিউনিটির অংশ হিসেবে মনে করে। এখানে পুলিশ নেতৃত্ব মনে করে পুলিশকে ঘটনাতাড়িত হয়ে সমস্যার লক্ষণসমূহ দূর করা নয় বরং স্বপ্রণোদিত হয়ে সমস্যাটিকেই সমূলে উৎপাটন করতে হবে। আর এক্ষেত্রে পুলিশ এককভাবে কমিউনিটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোন সাফল্য বয়ে আনতে পারবে না। সফল হতে হলে তাদের কমিউনিটির সাথে যৌথভাবেই কাজ করতে হবে।

কমিউনিটি পুলিশিং বীট পুলিশিং কী আলাদা দর্শন?
কমিউনিটি পুলিশিং এর ৯-পি সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কমিউনিটি পুলিশিং হল একটি সার্বক্ষণিক ব্যক্তি-উপস্থিতিমূলক (personalized) পুলিশিং (policing,) দর্শন (philosophy) যেখানে একজন সুনির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার বিকেন্দ্রীভূত বরাদ্ধকৃত এলাকা (place,) স্থায়ীভাবে (permanet) টহলরত (patraol) থেকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে স্বপ্রণোদিত(proactive) অংশীদারিত্বের (partnership) ভিত্তিতে অপরাধ-সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানে (problem-solving) সচেষ্ট থাকেন।

সংজ্ঞাটি পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় বীট পুলিশিং আসলে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থায় উত্তীর্ণ হওয়ার একটি উপায় বা কৌশলমাত্র। অর্থাৎ বীট পুলিশিং আর কমিউনিটি পুলিশিং পরষ্পর থেকে ভিন্ন কোন পুলিশিং দর্শন নয়।

তবে বীট পুলিশিং নিয়ে পুলিশ অফিসারদের মধ্যে নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। যেহেতু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বীট পুলিশিং বাস্তবায়ন শুরু করেছে,তাই এই সংস্থার অফিসার ও তাদের অধীক্ষেত্রের জনগণের মধ্যেই এই নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা ভুল বোঝাবুঝির মাত্রা অনেকাংশেই বেশি। কমিউনিটি পুলিশিংএদেশে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। মানুষ পুলিশকে সহায়তা করে না। তারা সবসময় নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাই এখন বীট পুলিশিং করা হচ্ছে।‘ আমি যখন তার কাছ থেকে জানতে চাইলাম কমিউনিটি পুলিশিং কী, আর বীট পুলিশিং কী।

অপরাধ দমনে বিট পুলিশিং হবে গৃহ ডাক্তার :

অপরাধ দমনে বিট পুলিশিং হবে গৃহ ডাক্তার। বিট পুলিশিং হলো কমিউনিটি পুলিশিংয়ের পরিপূরক। বিট অর্থ হলো ক্ষুদ্র অর্থাৎ পুলিশিং কার্যক্রমকে আরো ক্ষুদ্র আকারে নাগরিকদের দোড়গোঁড়ায় পৌঁছে দেয়া। পুলিশ ও মানুষের সম্পর্ক সুদৃঢ় করতেই বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। অপরাধ প্রবণতা ও মাদক রোধে এই বিট পুলিশং অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। সমাজের প্রত্যেককে সঙ্গে নিয়ে বিট পুলিশিংয়ের কাজ তরান্বিত করতে হবে। সন্ত্রাসী যে কেউ হোক না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরাধীরা কেউ ছাড় পাবে না।

এদিকে বিট পুলিশের এর আয়োজনে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন বিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একজন এসআই, দুজন এএসআই ও পাঁচ জন কনস্টেবল প্রতিটি বিটে দ্বায়িত্বরত থেকে  পুলিশিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। তাদের জন্য সরবরাহ করা হচ্ছে ক্রাইম নোট বুক। ক্রাইম নোট বুকের মাধ্যমে নিয়মিত প্রতিবেদন নেবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিট পুলিশিং বাড়ি বাড়ি নিরাপদ সমাজ গড়ি প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পুলিশিং সেবা নাগরিকরা যাতে নিজ নিজ গৃহে থেকেই ভোগ করতে পারে সে লক্ষ্যেই কাজ করছে পুলিশ।

পাবনা জেলা পুলিশের প্রধান হিসাবে নবযোগদানকৃত এসপি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম(বিপিএম) ইতোমধ্যে জেলার পুলিশকে অধিকতর সেবা প্রদানে উদ্যোগেী হতে নানামুখি কার্যক্রম শুরু করেছেন। তিনি থানায় থানায় বিট পুলিশিং সক্রিয় করতে সভা- সমাবেশ করছেন। বিট পুলিশিং বিষয়ে রাজনীতিক,সুশিল সমাজ ও গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করছেন। যাতে জনতা সকল ক্ষেত্রে পুলিশকে পাশে পান।

তিনি বলেছেন আমাদের লক্ষ্য হলো পুলিশিং সেবাটা আরো ক্ষুদ্র আকারে প্রতি জন নাগরিকের ঘরে পৌঁছে দেয়া। পারিবারিক নির্যাতন, সামাজিক অবক্ষয় কিংবা আইনশৃঙ্খলার সাথে জড়িত সকল বিষয় পারিবারিক ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের কিংবা সমাজপতিদের নিয়ে ভুক্তভুগীদের দুয়ারে পুলিশ সহায়তা প্রদান করবে। এক কথায় যে কোন প্রয়োজনে পুলিশকে চাওয়া মাত্রই নাগালে পাবে জনগন। আর এলক্ষ্যে নির্দিষ্ট এলাকায় বিট পুলিশং কর্মকর্তার হটলাইন নাম্বার দেয়া থাকবে যাতে যে কোন জনগন সহসাই ফোন করে পুলিশিং সেবা পেতে পারে।

ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন,সাধারণ মানুষের কাছে সেবা পৌঁছাতে প্রতিটি ওয়ারডে বিট পুলিশিং গঠন করা হয়েছে। সেখানে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখছেন একজন পুলিশ অফিসার। উদ্ভুত সমস্যা সমাধানে তারা মুখ্য ভুমিকা রাখবেন। কোনো ভাবেই যাতে আইন-শৃংখলার বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য তারা তৎপর রয়েছেন। এতে করে অপরাধ সংঘটিত হবার আগেই তা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।

সোজাসাপটা কথা হলো বিট পুলিশ তার নিজ নিজ এলাকায় সবসময়ই অতন্ত্র প্রহরীর মতো কাজ করবে। পুলিশিং সেবার জন্য নাগরিকরা থানায় আসার আগেই সুবিধাপ্রাপ্ত হবে। এখন জনসাধারণ তার বাসায় থেকেই পুলিশিং সেবাটা দ্রুত পেয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে তার থানার দারস্থ না হলেও চলবে। কারণ নিজ নিজ এলাকার গন্ডির মধ্যেই বিট পুলিশিংয়ের দপ্তর রয়েছে। বিট পুলিশিং যদি প্রকৃতপক্ষে ক্ষুদ্র আকারে প্রতিটি দুয়ারে তাদের পুলিশিং সেবা পৌঁছে দেয় তাহলে সমাজে একটি আমুল পরিবর্তন আসবে এবং পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস কিংবা নির্ভরশীলতা বহুলাংশে বেড়ে যাবে। যেমনটা হয়েছিল করোনাকালীন দুর্যোগের সময়।

 

লন্ডনে একবার প্রচন্ড বর্ষণের সময় একটি ব্রিজের ছাওনির নিচে আটকা পড়েছিলেন জনৈক ছাত্রী। কোনো ভাবেই তিনি গাড়ি পাচ্ছিলেন না। উপায় না দেখে তিনি পুলিশকে ফোন করেন। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পৌঁছে যায় এবং গাড়িতে তুলে তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়। এখানে আইন-শৃংখলা বা কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়নি। ‘পুলিশ জনতার বন্ধূ’ এই আদর্শই মেয়েটিকে সহায়তা করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুলিশ সম্পকে মানুষের যে তিক্ত ধারনা তা থেকে বের হয়ে আসতে পারলে বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে এ দেশের পুলিশও জাপান বা লন্ডনের মত মানুষকে সেবা দিতে পারবে বলে আমরা আশা করতে পারি।

সংকোলিত : মাহবুব-উল-আলম

সভাপতি,ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাব,পাবনা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন - রায়তা-হোস্ট সহযোগিতায় : SmartiTHost
smartit-ddnnewsbd