সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে জানুয়ারির শেষে কিম্বা ফেব্রুয়ারির প্রথমে বাংলাদেশে করোনার টিকা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। করোনার মতো করোনার টিকাও কিন্তু অনেক বেশি সেনসেটিভ। এটির সংরক্ষণ পরিবহণ এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে অধিকতর শতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
যেমন সংরক্ষণ এবং পরিবহণের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা ও ভ্যাকসিন প্রো-বিধি অনুযায়ী বাংলাদেশে আমদানি করতে যাওয়া ভারতের সেরামের কভিশিল্ড টিকার জন্য সার্বক্ষণিক ভাবে ২ থেকে ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা নিশ্চিত করতে হবে। সঠিক তাপমাত্রার হেরফের হলেই টিকার সঠিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে এতে কোন সন্দেহ নাই। তারপর টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রেও বেশকিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। অবশ্যই সঠিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে দিয়ে টিকা প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা ইতোমধ্যেই পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেও করোনার টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে টিকা গ্রহিতার মধ্যে নানা রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া লক্ষ করছি।
কোন কোন দেশে টিকা গ্রহণের পর কাউকে কাউকে মৃত্যুবরণ করতেও দেখছি। বাংলাদেশের চিকিৎসা সেক্টর নিয়ে মানুষের অভিযোগের কোন শেষ নাই। সরকারী ভাবে বলা হচ্ছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ করোনার টিকা সংরক্ষণ পরিবহণ এবং প্রদানের জন্য সর্বাত্মক ভাকে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। কথা ও কাজে সেটি হলেই ভালো। কিন্তু সেটি না হলে কিন্তু ভয়াবহ সমস্যা তৈরি হবে করোনার টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে।
শেষে দেখা যাবে টিকা দিয়ে মানুষ বাঁচাতে গিয়ে আবার মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে। অর্থাৎ সঠিক ভাবে টিকা সংরক্ষণ পরিবহণ এবং প্রয়োগ না করার কারণে মানুষ আবার বেশি করে স্বাস্থ্য ঝুকির মধ্যে পরতে পারে। আশাকরি সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ সেভাবে করেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে যেন এক্ষেত্রে সামান্যতম দুর্ঘটনাও না ঘটে। আমার পরামর্শ টিকা গ্রহণের বিষয়টা নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে সরকারের ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো উচিত। আর সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী ভাবে টিকার বাজারজাতকরণ বিতরণ এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রেও সরকারের সঠিক দিক নির্দেশনা ও তদারকি থাকা উচিত হবে। সরকার ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে যে দেশের সকলকে বিনামূল্যে টিকা প্রদান করা হবে। কিন্তু দেখা গেল যে সরকারী ভাবে টিকা নিতে গিয়ে অনেক বেশি ঝক্কি ঝামেলা।
এক্ষেত্রে কোন কোন অসাদু সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা আবার দুর্নীতির আশ্রয়ও নিতে পারে। স্বজনপ্রীতির মতো খারাপ ব্যাপারও ঘটতে পারে। ফলে মানুষজন বেসরকারী ভাবে টিকা নেয়ার দিকে ঝুকতে পারে। তখন আবার প্রশ্ন উঠতে পারে যে সরকার নিজ থেকেই তার ঘনিষ্ঠ বেক্সিমকো গ্রুপকে ব্যবসার সুযোগ করে দেয়ার জন্য সরকারী ভাবে টিকা নেয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে নিরুৎসাহিত করছে।
ইতোমধ্যেই বেক্সিমকো গ্রুপের মাধ্যমে ভারত থেকে করোনার টিকা আনতে গিয়ে সরকারকে বিভিন্ন রকম প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হচ্ছে। অতএব এব্যাপারে সরকারকে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে। আর বাঙালি মাত্রই হুযোকে। টিকা নিয়ে নানা রকম হুযোক কাজ করতে পারে সাধারণ মানুষের মধ্যে। আমারতো মনে হয় টিকা প্রয়োগের পর দুই একজন মানুষ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় মারা গেলে টিকা নেয়ার লোক খুজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে। কারণ সেক্ষেত্রে নানা রকম গুজব কাজ করবে।
কেউ কেউ বলবে টিকা নিয়ে মরার থেকে টিকা না নিয়ে মরাই ভালো। এমনিতেই বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে অনেকের মধ্যেই এক রকম অনিহা কাজ করছে। সবকিছু মাথায় রেখে বাংলাদেশের সরকারকে অবশ্যই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সকলকে টিকা প্রদান বা গ্রহণের আওতায় আনতে হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিকা সংগ্রহ এবং তা যথাযথো ভাবে সংরক্ষণ পরিবহণ ও সর্বসাধারণের মধ্যে প্রয়োগের মাধ্যমে দেশ থেকে করোনা দূর করতে হবে। তাহলেই দেশ ও দেশের মানুষের জন্য মঙ্গল সাধিত হবে।