সংবাদ ডেস্ক: ঢালিউডের জীবন্ত কিংব’দ’ন্তী ববিতা। দেশে আর দেশের বাইরে-সবার কাছে ববিতা তাঁদের প্রিয় একজন অভিনেত্রী, কিন্তু একমা’ত্র ছে’লে অনি’কের কাছে শুধুই সংগ্রামী মা। তাই তো সংগ্রামী মায়ের স্বপ্ন পূরণে ছে’লে অ’নিক পড়া’শোনা ছাড়া আর কিছুই ভাবতেন না।
স্কুলের শুরুটা হয়েছিল ঢাকার বনানী’তে ‘প্লে-পেন’ থেকে। ক্লাস সি’ক্স থেকে পড়াশোনা চলে ইংরেজি মাধ্যমে, স্কুল স্কলাস্টিকায়। এখান থেকেই ‘ও’ লেভেল আর ‘এ’ লেভেল শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন কানাডার ওয়াটার লু ইউনিভার্সিটিতে। কৃতি’ত্বের সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন ইলেকট্রি’ক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। এখন চাকরি করছেন।
ববিতা বলেন, ‘নব্বই দশকের শুরু’র দিকে আমি খুব ব্য’স্ত একজন অ’ভি’নয়শিল্পী। এক সন্তা’নের মা। তা-ও আ’বার সি’ঙ্গেল মা’দা’র। অনি’কের বাবা যখন মা;রা যান, তখন ওর বয়;স তিন বছর।
শুটিংও ফেলে রাখা যাবে না। তবে এর মধ্যে ভালো ভালো ছবি করার প্রস্তাব ছাড়তে হয়েছে। ঢাকার বাই;র শুটিংয়ের ;ক্ষেত্রে অনেক কি;ছু ভাবতে হতো। আর ঢাকায়; যেসব ছবি;র শুটিং হতো, সে;গুলো করার ক্ষেত্রেও অনেক চি;ন্তা;ভাবনা করেছি।’
ববিতা বলেন, ‘অনিক যখন বনানীর স্কুলে যাওয়া শুরু করে, তখন শুরুর দিকে আমি ওর ক্লাস;রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাক;তাম। পরী;ক্ষায় সময় এটা বেশি করতে হতো।’
প্লে-পেন স্কুল থেকে অনিককে যখন স্কলাস্টিকায় ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন মা ববিতা, ছে’লে নাকি তা চায়নি। অনেক বুঝিয়ে তারপর স্কলাস্টিকায় ভর্তি পরীক্ষা দিতে রাজি করান। ভর্তি পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করে ছে’লে অনিক। প্লে-পেন স্কুলে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ার পর শুরু স্কলাস্টিকায়।
ববিতা বলেন, ‘অনিকের পড়াশোনার শুরুর পর আমাকে শুটিংয়ের ব্যাপার অনেক সচেতন হতে হয়েছিল। কারণ বাবা নেই। শুটিং আর পড়াশোনা দুই-ই দেখতে হতো আমাকে। পরিচালকেরা যাতে সমস্যায় না পড়েন, তাই অনেক ক’ষ্টে ঢাকার আশপাশে দু-একটা আউটডোর শুটিং করতে হতো। বাসায় যদিও কাজের লোক ছিলেন, তারপরও আমি পুরোপুরি একা। সংসার চালাতে আয় যেমন করতে হবে, সংসারও ঠিক রাখতে হবে। এমন হতো, অনিক কোচিং করবে, আমি রাস্তায় গাড়ির মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতাম।
আমা’র তখন চিন্তা, ছে’লেকে মানুষ করতে হবে। কোচিং শেষে যখন নিচে নামত, তখন ওকে নিয়ে বাসায় ফিরতাম। অনিকের পড়াশোনার চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি শুটিংয়ের সময় সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত করে নিয়েছিলাম। অনেকটা অফিসের মতো। এর মধ্যে দুপুরে বাসায় যেতাম। খাওয়াদাওয়ার বিষয়টি ঠিক করতাম।’
একমাত্র সন্তানের জন্য ববিতা যে সংগ্রাম করছেন, ছবির কাজে ব্যস্ততা কমিয়ে দিয়েছেন, তা নাকি সন্তানও বুঝতে পারত। এখন যখন নিজেদের মধ্যে আড্ডা হয়, তখন নাকি এসব কথা প্রায়ই বলে অনিক। ববিতা বললেন, ‘ও এখন বলে, আমা’র মা আমা’র জন্য অনেক স্যাক্রিফাইস করেছেন। এটা ওর মনের মধ্যে সব সময় কাজ করেছে। মনে মনে নাকি একটা জিদও কাজ করেছে। তাই মা খুশি হবেন, তেমন কাজই করত।’
ববিতার ইচ্ছে ছিল ছে’লে ভালোমতো পড়াশোনা করবে। যে ববিতা সবার কাছে প্রিয় অ’ভিনেত্রী, কিন্তু তিনি সন্তানের পরিচয়ে পরিচিত হতে চেয়েছেন। সন্তান মায়ের সেই ইচ্ছে পূরণ করেছেন। ববিতা বলেন, ‘পড়ালেখা, পড়ালেখা আর শুধু পড়ালেখা। সেই ফল সে পেয়েছে।
কানাডার ওয়াটার লু ইউনিভা’র্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষে ছে’লের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছে’লের ভালো ফলের জন্য আমাকে খোঁজ করেন। অনেক সম্মান পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, স্বপ্নপূরণ হয়েছে, পরিশ্রম সার্থক।’
ববিতা দীর্ঘ অ’ভিনয়জীবনে ২৭৫টি ছবিতে অ’ভিনয় করেছেন। দেশের বিখ্যাত সব নির্মাতার পাশাপাশি কাজ করেছেন দেশের বাইরের বিখ্যাত নির্মাতার ছবিতেও। সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনিসংকেত’ ছবির জন্য ববিতা দেশে ও দেশের বাইরে প্রশংসা কুড়ান। সন্তানকে ঠিকভাবে গড়ে তুলতে ছবিতে কাজ কমিয়ে দিতেও বাধ্য হন।