সংবাদ ডেস্ক: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আর মৃত্যুর দিক থেকে সবার ওপরে যুক্তরাষ্ট্র। স্বাভাবিকভাবেই দেশটির অর্থনীতি বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। সেখানে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমবে, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তারপরও সেটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি। গত বছর যে পরিমাণ পোশাক রপ্তানি হয়েছিল, তার তুলনায় রপ্তানি কমেছে মাত্র ২৫ শতাংশ।
চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ৫ হাজার ৩৯৫ কোটি ডলারের বেশি তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকার সমান। পরিমাণটি কত বড়, সেটি বোঝাতে একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। তার চেয়ে মাত্র ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার কম পোশাক কিনেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র।
রপ্তানি কমলেও বাংলাদেশ কিন্তু খারাপ করেনি। সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ তৈরি পোশাক কম কিনেছে। সেখানে বাংলাদেশের পোশাকের রপ্তানি কমেছে সাড়ে ১১ শতাংশের মতো। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৪৪৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।
প্রশ্ন করতে পারেন, এত বড় অঙ্কের টাকার হিসাব নিয়ে নাড়াচাড়া করে আমাদের কী লাভ। বাংলাদেশ কত টাকার তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে? তার আগে বলা ভালো, রপ্তানি কমলেও বাংলাদেশ কিন্তু খারাপ করেনি। সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ তৈরি পোশাক কম কিনেছে। সেখানে বাংলাদেশের পোশাকের রপ্তানি কমেছে সাড়ে ১১ শতাংশের মতো। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৪৪৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। দেশীয় মুদ্রায় যা ৩৮ হাজার ১৬৫ কোটি টাকার সমান।
বাংলাদেশ মোটামুটি সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও চীনের অবস্থা চিড়েচ্যাপ্টা। চলতি বছরের শুরুর দিকে তো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির শীর্ষস্থানের মুকুটটি ভিয়েতনামের কাছে হারিয়ে বসেছিল করোনার সূত্রপাত হওয়া দেশটি। যা–ই হোক, আবার মুকুট ফিরে পেয়েছে চীন। তবে রপ্তানি কমেছে ব্যাপকভাবে।
চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে চীনের উদ্যোক্তারা যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ২৭৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪২ শতাংশ কম। চীন এখানে একটাই সান্ত্বনা খুঁজতে পারে, রপ্তানি কমার হারটি একপর্যায়ে ৫০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই হয়েছিল। সেখান থেকে অবস্থার একটি উন্নতি তো হয়েছেই।
আচ্ছা, চীন যে ব্যবসা হারাল, তার কতটুকু বাংলাদেশে এসেছে? উদ্যোক্তা ও বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা বলছেন, করোনা ও বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীনের হারানো ব্যবসা বাংলাদেশে এসেছে। বিশেষ করে নিট পোশাকের ক্রয়াদেশ। কারণ, বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সবচেয়ে কম দামে সেসব পণ্য উৎপাদন করে দিতে পারছে। চীনের হারানো ব্যবসা ফিরে আসার কারণেই করোনার মধ্যে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমলেও তা মারাত্মক আকার ধারণ করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ফেরা যাক। এই বাজারে সবচেয়ে অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে বাজারটিতে ১ হাজার ৭১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ কম।
যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনকে ভিয়েতনাম একবার ধরতে পেরেছিল। বাংলাদেশ বাজারটিতে তৃতীয় শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক হলেও কখনোই ভিয়েতনামের কাছে যেতে পারেনি। বাংলাদেশের পেছনে থাকা ইন্দোনেশিয়া ও ভারত রপ্তানিতে ভুগছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ইন্দোনেশিয়া ৩০৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের রপ্তানি কমেছে ২০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অন্যদিকে ভারত রপ্তানি করেছে ২৫৮ কোটি ডলারের পোশাক। ভারতেই এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৭ শতাংশ কম।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা তুলনামূলক ভালো ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন। নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ করে যদি করোনা মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেন, তাহলে তাদের অর্থনীতি আবার চাঙা হবে। সেটি হলে দ্রুত আমাদের তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়বে।
বহু আকাঙ্ক্ষিত করোনার টিকা চলে এসেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজত্ব শেষ হতে চলেছে। আগামী মাসেই জো বাইডেন ক্ষমতা নিচ্ছেন। নতুন প্রশাসন করোনা মোকাবিলা আর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বেশি নজর দেবে। এ অবস্থায় তৈরি পোশাকের রপ্তানি কি আবার শিগগিরই বাড়বে?
এমন প্রশ্নের উত্তরে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা তুলনামূলক ভালো ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন। নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ করে যদি করোনা মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেন, তাহলে তাদের অর্থনীতি আবার চাঙা হবে। সেটি হলে দ্রুত আমাদের তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়বে। তবে তারা যদি নতুন করে লকডাউনের পথে যায়, তাহলে বিপদ বাড়বে।’