নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহীর জেলা প্রশাসক পত্রিকা বিক্রেতা খুকির বাসা পরিদর্শন করেন আজ। এই সময় তিনি সরকারীভাবে খুকির সমস্ত দায়িত্ব নেওয়া হবে বলে জানান। কয়েক বছর আগের একটি ভিডিও কিছুদিন আগে ফেসবুক ও গণমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় বেশ আলোচনায় এসেছেন দিল আফরোজ খুকি। ভিডিওতে দেখানো হয়েছে, পেপার বিক্রেতা খুকি কোন সময় লোকের কাছে হাত পাতেন নি। তিনি নিজেই কর্ম করে নিজের জীবন যাপন করেন। এই সব দেখে জেলা প্রশাসক পবা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান উদ্দীনকে মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) সকালে খুকির বাসায় পাঠান খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। সেখানে গিয়ে খুকীর সাথে কথা বলে জানতে পারেন, তার বাবা ছিলেন রাজশাহী জেলা আনসার এডজুটেন্ট এবং মা ছিলেন সরকারি হাই স্কুলের শিক্ষিকা। অল্প বয়সে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সবাই তাকে ঠকিয়েছে এবং কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি। আর এজন্যই তার এমন সংগ্রামী জীবন। তার নিজস্ব বাড়ি আছে, পৈত্রিক ভাবে তারা স্বচ্ছল ছিলেন কিন্তু কিছুটা স্মৃতিভ্রস্ট হওয়ায় তার নিজের ভাই বোনও তার দ্বায়িত্ব নিতে চান না। বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। সকালে বের হয়ে যান পত্রিকা বিক্রি করতে।
এরপর সে উপার্জিত টাকায় হোটেলে খান, কয়েক জনকে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল করার জন্য দরিদ্র হিন্দু নারীকে গাভী ও সেলাই মেশিন কিনে দেওয়াসহ বেশ কিছু নারীকে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল করেছেন। এসব জেনে সরকারি ওই কর্মকর্তা তার সাথে কথা বলে মুগ্ধ হন ও জানত পারেন, অনেক সময় মানুষ খুকীকে পাগল ভেবে মারধর করে। মাঝে মাঝে তিনি খেতেও পান না। তাকে দেখাশোনা করার কেউ নেই। এভাবেই চলছে খুকীর জীবন। এসব দেখে তিনি বুঝতে পারেন, খুকীর দেখাশোনা করার জন্য একজন মানুষ প্রয়োজন। তিনি খুকির মাসিক খাবারের ব্যবস্থা করে দেন এবং পাশাপাশি তার দেখাশোনা করার জন্য একজন মেয়েকে দায়িত্ব দিয়ে আসেন। পরবর্তীতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসকে বিষয়টি জানান পবার এসিল্যান্ড শেখ এহসান। জেলা প্রশাসক খুকীর বাড়ি পরিদর্শন শেষে শেখ এহসানকে খুকীর বাসার সার্বিক উন্নয়ন ও খাবার সরবরাহের দায়িত্ব গ্রহণ করবে বলে জানান। বাসা পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানান, খুকীর সম্পর্কে জানার পর আমি তাঁর বাসা পরিদর্শন করতে আসছি। তার বাসা অবস্থা ভালো না টিন দিয়ে পানি পড়ে। ডিসি অফিসের পক্ষ থেকে তার বাসার সার্বিক উন্নয়নে ও খাবার সরবরাহের সকল দায়িত্ব এহসানের উপর দেওয়া হল। এহসান সকল দায়িত্ব পালন করবে।
এ সময় পবা উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান সাংবাদিকদের জানান, সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে দিল আফরোজ খুকীর বিষয়টি আমার হৃদয়ে নাড়া দেয়। আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করি। স্যার আজকে খুকির বাসা পরিদর্শন করেন। তার পরামর্শ ও সহযোগিতায় আমি খুকিকে ভালো রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। খুকি আমাকে একটি কথা জানিয়েছে মৃত্যুর আগেই তার বাড়িটি কোন একটা স্কুলের নামে দান করে দিতে চান এবং তার যেন দাফন কুষ্টিয়াতে হয়। তার নাকি জন্মস্থান কুষ্টিয়া। আমি নিয়মিত তার খোঁজখবর রাখবো এবং আমার জায়গা হতে তার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।