বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সর্বজনীন পেনশন স্কিম- ভাঙ্গুড়ায় ৪ মাসে একাউন্ট ওপেন হয়েছে মাত্র ১৪২ ভাঙ্গুড়ায় প্রাণি সম্পদ বিভাগের জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাপনী ঘটলো সেবা সপ্তাহের ভাঙ্গুড়ায় ৭ দিন ব্যাপি বই মেলা জমে উঠেছে উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ বন্ধে কঠোর নির্দেশনা : ওবায়দুল কাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় দিন ১৮ এপ্রিল। হোসেন আলী ভারতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ান আজ ভাঙ্গুড়ায় দুগ্ধজাত ক্ষুদ্র শিল্পের সফল উদ্যোক্তা কলেজ ছাত্র অপু ঘোষ ভাঙ্গুড়ায় নতুন ইউএনও’র যোগদান- জ্ঞানের নিষ্প্রভ বাতিঘর কি আবার আলোকিত হবে ? বুয়েটকে জঙ্গিবাদের আখড়া বানানো যাবে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাঙ্গুড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন গরুর হাট ! মাসে কেনাবেচা ৬ কোটি টাকা

বাংলাদেশি নাটকের দর্শক বেড়েছে ভারতে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০
  • ২৭৬ সময় দর্শন

বাংলাদেশের দর্শকদের বড় একটা অংশ বুঁদ হয়ে থাকে ভারতের জি বাংলা-স্টার জলসার সিরিয়ালে। অন্যদিকে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো সহজলভ্য না হওয়ায় ভারতের বাঙালি দর্শক খুব একটা খোঁজখবর রাখত না এখানকার শোবিজের। এ নিয়ে দেশীয় নির্মাতাদের কণ্ঠে আফসোস ঝরেছে অনেক। সেই আফসোস অনেকটাই ঘুচিয়েছে ইউটিউব। স্ট্রিমিং সাইটটিতে কৌতূহলী কিছু ভারতীয় নিয়মিতই দেখেছে বাংলাদেশের টিভি নাটক। করোনাকালে সেটা বেড়েছে সুপারসনিক গতিতে। ইউটিউবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বাঙালিদের করা মন্তব্যগুলোই তার প্রমাণ। বিস্তারিত লিখেছেন দাউদ হোসাইন রনি

‘ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৮’-এর সমাপনী অধিবেশনে প্রাণবন্ত এক উন্মুক্ত আড্ডায় মেতেছিলেন দুই বাংলার গুরুত্বপূর্ণ দুই কথাসাহিত্যিক—শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও ইমদাদুল হক মিলন। ‘বাংলাদেশের টিভি নাটকের নিয়মিত দর্শক আমি’, শীর্ষেন্দুর মুখে কথাটা শুনে নড়েচড়ে বসল বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনের উপচেপড়া দর্শক। উপস্থিত দর্শকদের চেহারায় ফুটে ওঠা অস্বস্তির রেখাটা চট করে পড়ে নিলেন ‘মানবজমিন’ লেখক। বললেন, ‘এখানকার টিভি চ্যানেল ভারতে দেখানো হয় না। আমি নাটক দেখি ইউটিউবে। এভাবেই ধীরে ধীরে দুই বাংলার সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাড়বে। সংস্কৃতি কখনোই জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। মানসম্পন্ন কাজ হলে তা দর্শকের কাছে পৌঁছবেই।’

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের শেষের কথাটা মেনে নিলে, জি বাংলা-স্টার জলসার সব কয়টি সিরিয়ালকেই ‘মানসম্পন্ন কাজ’ ধরে নিতে হবে! কারণ, এখানকার দর্শকদের বেশির ভাগই দেদার গিলছে এসব। আদতে কিন্তু সবটাই মানসম্পন্ন নয়। তাহলে কি এখানকার দর্শকরা ‘মান’ বিষয়টা বোঝে না? তাও নয়। ‘অভ্যস্ততা’, এ শব্দটাই এখানকার দর্শকদের অভ্যস্ত করে রেখেছে জি বাংলা-স্টার জলসায়। বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি যুগের শুরু থেকেই আমাদের আকাশ খোলা, মুক্তবাজার অর্থনীতির নীতিতে। সেই থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে ওপার বাংলার টিভি চ্যানেলের সঙ্গে সম্পর্ক বাংলাদেশি দর্শকদের। বিপরীতে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো দীর্ঘদিন ধরে দেখানোই হয় না ওপারে। মাঝেমধ্যে দুই-একটি চ্যানেল ওখানে দেখা যায়, কয়েক দিন পর আবার বন্ধ। ফলে ওপারের দর্শকদের অভ্যস্ত করাতে পারেনি বাংলাদেশি চ্যানেলগুলো।

বাধা না পেলে ওপার বাংলাও হতো বাংলাদেশি বিনোদনের অন্যতম গ্রাহক।

অথচ পাঁচ দশক আগের চিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের অবস্থাসম্পন্ন বাঙালিরা টিভির অ্যান্টেনা নেড়েচেড়ে অনেক কসরত করে দেখত বিটিভি। এখানকার নাটক, ম্যাগাজিন আর গানের অনুষ্ঠান দেখার স্মৃতি পাওয়া গেছে বিখ্যাতজনদের দিনলিপিতে। ‘একতলা দোতলা’, ‘সকাল সন্ধ্যা’, ‘ঢাকায় থাকি’, ‘সংশপ্তক’ ধারাবাহিকের প্রতি পর্বের জন্য এপার বাংলার মতো অপেক্ষা করে থাকত ওপার বাংলা। বিটিভির ১৯৭৯ সালের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘সকাল সন্ধ্যা’র অভিনেত্রী আফরোজা বানু এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, কলকাতায় গেলে রাস্তায় বের হতে পারতেন না। লোকজন চিনে ফেলত, দিতে হতো অটোগ্রাফও। বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা-গায়কদের তখন বেশ কদর ছিল ওপারে। সেই পরিস্থিতির আমূল বদলে গেল নতুন শতাব্দীর শুরুতে। ২০০৩ সালের কথা। কলকাতার নিউ মার্কেটে শপিং করতে দেখা গেল বাংলাদেশের জনপ্রিয় এক চিত্রনায়ক ও এক জনপ্রিয় গায়ককে। সংগত কারণেই তাঁদের নাম প্রকাশ করা গেল না। [তবে এটুকু বলা যায়, এই চিত্রনায়ক টালিগঞ্জের কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন]। তো তাঁদের দুজনের দিকে আড়চোখে তাকাতেও দেখা গেল না কাউকে। এমন আরো কিছু ঘটনার উদাহরণ টেনে বাংলাদেশের তারকারা প্রায়ই ক্ষোভ প্রকাশ করেন দেশীয় গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে। তাঁদের অভিযোগ, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ভারতীয় শিল্পীদের খবর ছাপা হয় নিয়মিতই। ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশি তারকাদের খবর প্রকাশিত হয় না বললেই চলে।

তবে পশ্চিমবাংলার শিল্পীরা অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের সংস্কৃতির খোঁজখবর ঠিকই রাখেন। জয়া আহসানকে পশ্চিমবঙ্গের ছবিতে সুযোগ দিয়েছিলেন অরিন্দম শীল, ‘আবর্ত’ ছবিতে। ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে জয়ার সুযোগ হয়েছে টিভি নাটকের কল্যাণেই।

অরিন্দম বলেন, “ওর অনেক নাটক দেখেছিলাম। একটা বিষয় লক্ষ করলাম, ভালো-মন্দ মিলিয়ে জয়া কোথায় যেন স্ট্যান্ড করে যাচ্ছে। আটপৌরে সাধারণ মেয়ে থেকে নচ গার্ল—ওর একটা অদ্ভুত ‘রেঞ্জ অব অ্যাক্টিং’ আছে। এটা আমাকে ভীষণ আকর্ষণ করেছিল।”

এই অভিনেতা-পরিচালক শুধু জয়া আহসানের কাজই দেখেছেন তা নয়, মোশাররফ-চঞ্চল-তিশা-মম-মেহজাবীনদের কাজ সম্পর্কেও ভালো ধারণা আছে তাঁর।

একজন শিল্পী তাঁর আশপাশের দেশের শিল্পীদের কাজের খোঁজখবর রাখবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে বাংলাদেশি বিনোদন জগৎ সম্পর্কে ওপারের আমজনতার ধারণা কিছুদিন আগেও ততটা ছিল না। নিজের দেশের টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্রে এই দেশের বিনোদনের খবর জানার উপায় যে ছিল না। সেই ব্যারিকেড ভেঙে দিয়েছে ইউটিউব। উন্মাদনার শুরুটা মোশাররফ করিমকে দিয়ে। বাংলাদেশের এই অভিনেতা ভারতের বাংলাভাষীদের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন। অনেক ভক্ত বাংলাদেশেও ছুটে এসেছেন প্রিয় অভিনেতাকে এক নজর দেখতে। তাঁদেরই একজন কলকাতার অভিজিৎ দত্ত। তিন বছর আগে কলকাতায় মোশাররফ করিম ফ্যান ক্লাবও খুলেছেন অভিজিৎ। গত বছর কলকাতার চিত্রশিল্পী সুব্রত ঘোষ ধানমণ্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে দলীয় চিত্রপ্রদর্শনী ‘সিম্ফনি’তে অংশ নিতে ঢাকায় আসেন। প্রিয় দুজন শিল্পীকে এঁকেছেন তিনি—লতা মুঙ্গেশকর ও মোশাররফ করিম। ওই সময় কালের কণ্ঠকে তিনি জানান, বাংলাদেশের এই অভিনেতার অনেক বড় ভক্ত তিনি। ভালোবেসে প্রিয় শিল্পী লতা মুঙ্গেশকরের পাশে তাঁকে জায়গা দিয়েছেন সুব্রত। তারপর মোশাররফ করিম ডাক পেয়েছেন টালিগঞ্জের ছবিতেও। চঞ্চল চৌধুরীর ভারতীয় ভক্তও নেহাত কম নেই। ‘সার্ভিস হোল্ডার’, ‘খেলা’, ‘হাড়কিপেট’ নাটকগুলোতে তাঁর অভিনয়ের প্রাণখোলা প্রশংসা করেছে ভারতীয়রা। নির্মাতা সালাহউদ্দিন লাভলু ও নাট্যকার বৃন্দাবন দাশের লেখা নাটকগুলো বেছে বেছে দেখছে তারা।

এ বছর হঠাৎ করেই আফরান নিশো ও অপূর্বর ভক্তসংখ্যা হু হু করে বেড়ে গেছে। এই লকডাউনে সেটা রীতিমতো ঈর্ষণীয় জায়গায় পৌঁছেছে। বিশেষ করে নারী ভক্তের বিশেষ দৃষ্টি পাচ্ছেন এই দুই অভিনেতা। অপূর্বর ‘বড় ছেলে’ কাঁদিয়েছে ভারতীয় দর্শকদেরও। এই ভক্তরা শুধু ইউটিউবেই নয়, ফেসবুকেও অনুসরণ করছে তাঁদের। নতুন ছবি পোস্ট করা মাত্রই কমেন্টের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে তারা। ভারতীয়রা আলাদা ফ্যান ক্লাবও করেছে প্রিয় দুই অভিনেতার নামে। একটা ব্যাপার বেশ চোখে পড়ল, বাংলাদেশের অভিনেতাদের নিয়ে যত মুগ্ধতা ভারতীয়দের, অভিনেত্রীদের নিয়ে ততটা মুগ্ধতা প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে না। ভারতীয়দের প্রিয় অভিনেত্রীর তালিকায় শাহনাজ খুশী, মেহজাবীন চৌধুরী, জাকিয়া বারী মম ও নুসরাত ইমরোজ তিশার নামই আসছে ঘুরেফিরে। নির্মাতাদের মধ্যে এ সময়ের আশফাক নিপুণ, মিজানুর রহমান আরিয়ান, সঞ্জয় সমাদ্দার ও শিহাব শাহিন প্রশংসিত হচ্ছেন। এই দর্শকরা এখন বেছে বেছে পুরনো জনপ্রিয় নাটকগুলো দেখতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদ, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অনিমেষ আইচ, রেদওয়ান রনি ও মাহফুজ আহমেদ নির্মিত নাটকগুলোই বেশি বাছছে।

দুই বাংলার দর্শকদের মেলবন্ধনে বড় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি বিনির্মাণের চেষ্টা চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। ঢালিউড-টালিগঞ্জের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত বেশ কিছু চলচ্চিত্র যে কাজটা করতে পারেনি, টিভি নাটক সেই কাজটা অনায়াসেই করে ফেলল। সারা বিশ্বের বাঙালি দর্শকদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার ভিত তৈরি হলো এখানে। এই দর্শকদের নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতেই পারেন বিনোদন জগতের পুঁজিপতিরা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন - রায়তা-হোস্ট সহযোগিতায় : SmartiTHost
smartit-ddnnewsbd