বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

চলনবিলের ঐতিহ্য : চাটমোহরে কুমড়ো বড়ির গ্রামে এখন সবাই ব্যস্ত

এস এম মাসুদ রানা
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০
  • ১৯৪ সময় দর্শন
চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
রাতের আঁধার সরতে শুরু করেছে। পূবাকাশে আলোর রেখা ফুঁটছে। কুমড়ো বড়ির গ্রামের শ্রমী নারীদের ঘুম ভেঙ্গেছে অনেক আগেই। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কুমড়ো বড়ি শুকোতে দিতে। রোদ ওঠার সাথে সাথে। সবাই টিনের পাতে দেয়া কুমড়ো বড়ি নিয়ে ছুটছেন বাগানে, উঠোনের ফাঁকা জায়গায়।
শীত আসছে। তাই চলনবিল পাড়ের চাটমোহরের একদার আাঁধার পাড়া, বর্তমানে কুমড়ো বড়ির গ্রামের নারী-পুরুষ মহাব্যস্ত কুমড়ো বড়ি বানাতে। শীতের শুরুতেই বেশী দামে বড়ি বেচা চাই, সবার আগে। শীতের শুরুতেই চলনবিলের ঐতিহ্যবাহী এই সুস্বাদু তরকারীটি এখনও শীত এলেই গৃহকোনে বানানো শুরু হয়ে যায়।
পৌরসভার দোলং সরকার পাড়া মহল্লায় এলাকবাসীর কাছে এখন কুমড়ো বড়ির গ্রাম হিসাবে পরিচিত। এ গ্রামেই শান্তি রানীর বসবাস। তার মতোই এ গ্রামের প্রায় ৫০ টি পরিবার কুমড়ো বড়ির ব্যবসা করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন। বছরের সাত মাসের এ ব্যবসায় এখন পরিবার গুলোর চালচিত্র বদলে গেছে। প্রতিটি পরিবারের ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজে পড়ছে। এক সময়ে ভুমিহীন অনেক পরিবার জমি কিনে নতুন টিনের আধাপাকা ঘর তুলে বাড়ি করেছেন। এক সময় অভাবী বিদ্যুৎহীন মহল্লাটির নাম আধারপাড়া ছিল। এখন বিদ্যুতের আলোর সাথে শ্রমী মানুষ গুলো স্বচ্ছলতার আলো এনেছেন সংসারে।
চাটমোহর-ছাইকোল সড়কের পাশে পৌরসভার ভেতরে গ্রামটিতে শরতের এক সকালে গিয়ে কথা হয় এ ব্যবসার সাথে জড়িত মানুষদের সাথে। দেখা যায়, সবাই কুমড়ো বড়ি বানিয়ে টিনের পাতে বাড়ির আঙ্গিনায়, টিনের চালে, বাগানের ফাঁকা জায়গায় রোদে শুকাতে দিয়েছেন। প্রদীপ কুমার ভৌমিক বলেন, এক কেজি এ্যাংকর বড়ি বানাতে সব মিলিয়ে খরচ হয় ৬০/৭০ টাকা। পাইকারী বিক্রি হয় ৮০/৮৫ টাকা কেজি। বড়ির মানভেদে খুচরা বিক্রি হয় হাটে-বাজারে ৮০/১০০/১২০ টাকা কেজি।
স্বরস্বতী রানী পাল জানান, এই কুমড়ো বড়ি বানানো, শুকানোসহ সব কাজ আমরা মেয়েরা করি। আর ডাল পাটায় বেটে বেসন না করলে এ বড়ি হয় না। মেশিনে এ বড়ি হয় না। বিজলী রানী(৩২)বলেন, ইডা ছোট ব্যবসা হলিও লাভ অনেক। তবে পরিশ্রম বেশী। আমরা ইডা করে উন্নতি করতিছি।
শম্ভুনাথ দাস(৫৫)বলেন, আগে সব রকম ডালের বড়ি বানানো হতো। ডালের দাম বেশী হওয়ায় এখন শুধু এ্যাংকর ডালের বড়ি বানাই। বলেন, বাংলা ভাদ্র থেকে শুরু হয়ে ফাল্গুন মাসে গিয়ে শেষ হয়। বাকি সময় আমরা অন্য কাজও করি। সোনা ভৌমিক বলেন, এবার আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় বড়ি শুকানো মুশকিল হচ্ছে।
এ গ্রামের বাসিন্দা বাসিন্দা তরুন পাল বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে এ পাড়ায় বড়ি বানানো দেখছি। এই ব্যবসা করে সবাই সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন। পাশের চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা পরিতোষ সরকার বলেন, সরকার পাড়ার নারীরাই কুমড়ো বড়ির ব্যবসা করে অভাবী সংসারে স্বচ্ছলতা নিয়ে এসেছে। মেয়েরাই তো সব করে। পুরুষরা শুধু বিক্রি করে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন - রায়তা-হোস্ট সহযোগিতায় : SmartiTHost
smartit-ddnnewsbd