যারা ভেবেছিলেন মুসলমানের দেশে করোনা আসবে না তাঁরা ভুল ছিলেন।
যারা ভেবেছিলেন মে মাসের শেষে আকাশে সুরাইয়া তারা ওঠার সাথে সাথে করোনা বিদায় হবে তাঁরাও ভুল ছিলেন।
যারা ভেবেছিলেন রমজানের শেষ দশকে করোনা নি:শেষ হয়ে যাবে তাঁরাও ভুল ছিলেন।
যারা ভেবেছিলেন বেশি তাপমাত্রায় করোনা বাঁচে না তাঁরাও ভুল ছিলেন।
মানুষের এই ভুল গুলো এখন প্রমাণিত এবং বাস্তবতা। এমনকি এখনো যারা ভাবছেন
২/১মাসের মধ্যে করোনা চলে যাবে তাঁরা ভুলের মধ্যেই রয়েছেন।
যারা ভাবছেন শীঘ্রই করোনার টিকা বের হয়ে যাবে , তাঁরাও ভুলের মধ্যে আছেন।
যারা ভাবছেন শুধু ঘরের মধ্যে থেকেই করোনা কাল পার করে ভাইরাস মূক্ত থাকবেন তাঁরাও আছেন মহা ভুলে।
বাস্তবতা হলো – অন্তত এক বছরের আগে করোনা পুরোপুরি যাচ্ছে না। এক বছরের আগে কোনো টিকাই আপনার হাতে আসছে না। এমন কোনো বেহুলার বাসর ঘর সুস্থ মানুষের পক্ষে তৈরী করা সম্ভব না যেখানে করোনা প্রবেশ করতে পারবে না।
একজন মানুষ; অনন্তকাল ধরে বুয়া ছাড়া, বাহিরের বাজার ছাড়া, মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া, সূর্যের রোদ ছাড়া বাঁচতে পারবেন না। এভাবে বাঁচতে পারতে চাইলে মানুষটি বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যেতে পারেন।
তাহলে উপায় কি?
একসময় সংক্রামক কলেরা রোগে গ্রামের পর গ্রাম উজার হয়ে যেতো। মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতো, কারণ তারা জানতো না কেন কলেরা হয়? পানি ফুটিয়ে জীবানুমুক্ত করা যায় সহজেই। এখন আর কলেরা মহামারী হয় না, কারণ মানুষ জানে ফুটিয়ে বিশুদ্ধ পানি খেলে কলেরা হয় না।
আমরা এখন জানি করোনা কোন মাধ্যমে ছড়ায়। করোনা রোগীর থুতু, কাশি,লালা কিংবা চোখের পানি দিয়ে ছড়ায়। এগুলো আপনার নাক, মুখ চোখের পথ দিয়ে না ঢুকতে দিলে করোনা হবার নয়। শুধুমাত্র নাক, মুখ, চোখে বাহিরের লালা, থুতু,চোখের পানির সাথে যাওয়া ভাইরাস থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলেই আপনি করোনা মুক্ত থাকতে পারেন।
এটি বলতে খুব সহজ আবার করতে খুবই কঠিন। অনেক বছরের অভ্যাসের দাস, আপনার হাত এই হাতকে, বশে রাখতে হবে। হাত যেন সাবানে পরিষ্কার না হয়ে কোনভাবেই নাক, মুখ, চোখ না ছোঁয়। অপরের কাছে থেকে উড়ে আসা থুতু, লালা বা পানি মাস্ক এবং চশমা দিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। কথার মাঝে ছাড়ানো থুতু, লালা কে বক্তা বা শ্রোতা উভয়ের পরিধান করা মাস্কের সাহায্যে প্রতিরোধ করা খুব সহজেই সম্ভব।
জুতা আবিষ্কারের গল্পের মতো সারা পৃথিবী চামড়া দিয়ে ঢাকার বৃথা চেস্টা না করে , পা খানি ঢাকলেই যেমন চলে; তেমনি আপনার নাক মুখ চোখ ঢাকুন আর হাতকে সংযত করুন। এই অল্প কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করেই আপনি করোনা প্রতিরোধ করতে পারবেন ৯৫%…. বাঁকি পাঁচ শতাংশের জন্য ডাক্তারের উপর আস্থা রাখুন। পরামর্শ মতো ঔষধ খান, বিশ্রাম নিন, আলাদা থাকুন।
মৃত্যুর সময় বা ক্ষন এবং উপলক্ষ মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আল্লাহর অনুমোদন ছাড়া করোনা কারো শরীরে বেড়াতে আসবেনা। যেমনই হার্ট-এটাক, ব্রেইন স্ট্রোক, সড়ক দুর্ঘটনা, কিডনি ফেইলিউর,এপেন্ডিসাইটিস , ক্যান্সার ইত্যাদি। তফাত হলো: করোনা মাত্রাতিরিক্ত সংক্রামক। তফাত হলো: অপরিকল্পিত প্রচারের কারনে, করোনা ভীতি কিছুক্ষেত্রে কিছু মানুষ থেকে, মানবিকতা কেড়ে নিয়েছে, সামাজিক একাত্মতা ধংশ করে দিয়েছে।
তাই সময়ের আহবান call of the hour, আমরা যেনো ভীত হয়ে মানসিক রোগী না হয়ে যাই। মৃত্যুর চেয়ে সত্য যে কিছুই নাই; পৃথিবীতে জন্ম নিলে আপনাকে -আমাকে মরতে হবেই। করোনা থেকে বাঁচতে গিয়ে যেন মৃতপ্রায় হয়ে না যাই। জীবনে একবারই মরা; ভয়ে বারবার না। মনে রাখি আপনার-আমার জীবন সুন্দর; তবে সেটা কেবলমাত্র সঠিক ভাবেই পরিচালিত করতে ও উপভোগ করতে পারলেই ! অন্যথায় মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। সূত্র : আশিক হোসেন।
করোনা ভাইরাস এখন পৃথিবীতে মহামারী আকার ধারন করেছে। এ ধরনের সংক্রামক ব্যধির বিষয়ে আমাদের প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লোমের নির্দেশনা হলো-
‘যদি তোমরা মহামারির (নতুন নতুন রোগ-ব্যাধির) কোনো সংবাদ শোন, তো সেখানে (আক্রান্ত অঞ্চলে) তোমরা প্রবেশ থেকে বিরত থাক। আর যদি কোনো শহরে বা নগরে কেউ সে মহামারিতে আক্রান্ত হয়, তো সেখান থেকে তোমরা বের হয়ে (অন্য কোনো অঞ্চলে) যেয়ো না।’ (বুখারি)
মহানবী (সা.) যেমন নিজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতেন তেমনি সকলকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার নসিহতও করতেন।
হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আত্তুহুরু শাতরুল ঈমান’ অর্থাৎ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্রতা অবলম্বন করা ঈমানে অঙ্গ (মুসলিম, কিতাবুত তাহারাত, বাব ফাযলু ওয়াযু)।
আজকে যে লকডাউন ও চিকিৎকরা যে স্বাস্থ্য বিধির কথা বলছেন তাতো রাসুল (সা:) ১৪০০ বছর আগে বলেই গিয়েছেন। তাহলে স্বাস্থ্য বিধি মানতে আমাদের অসুবিধা কোথায় ?
রাষ্ট্র কিছু নির্দশনা দিয়েছে,তার মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইন ও সামাজিক দূরত্ব উল্লেখযোগ্য। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যাবার সময় বাধ্যতামুলক ভাবে মাস্ক পড়া। মসজিদে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রেও ধর্মন্ত্রণালয়ের ১২টি নির্দশনা রয়েছে। এর মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায়,মসজিদের মেঝে জীবানুনাশক দিয়ে পরিস্কার করা,সুন্নত নামাজ বাড়িতে পড়ে যাওয়া,ঈমামের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
বাস্তবে হচ্ছেটা কি তাতো সবাই দেখছেন। এ অবস্থা চললে করোনার সংক্রমণ কোনো ভাবেই রোধ করা যাবেনা।
তাই সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দ্বারা পরিস্কার রাখা,প্রয়োজনে মাস্ক পড়া,সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা,কফ-থুথু যেখানে সেখানে না ফেলা সর্বক্ষেত্রে তথা মসজিদ,মন্দির,গীর্জা,শপিং মল,দোকান,অফিস,বাসা,গৃহস্থলী প্রভৃতিতে নিশ্চিত করতে হবে। তবেই করোনা প্রতিরোধ করা যাবে। অন্যথায় এই ঘাতক ব্যধিকে মানুষের কোনো শক্তি রুখতে পারবে না।।
সংকলনে – মাহবুব-উল-আলম।